গণভবন থেকে একনেক সভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ ছবি: পিআইডি

যেকোনো প্রকল্পের প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরিতে কোনো ভুলত্রুটি হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।

বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে আটটি প্রকল্পের অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানান।

সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পটির সংশোধনী অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। এ প্রকল্পটি প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় দুই হাজার ৫৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

ব্যয় বাড়ার কারণ উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘অনেক নতুন নতুন আইটেম যুক্ত হয়েছে এবং পিডব্লিউডির রেট শিডিউল সংশোধনের ফলে এত টাকা ব্যয় বেড়েছে। সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ বাড়ছে জুন ২০২৪ সাল পর্যন্ত। বেড়ে মোট ব্যয় হচ্ছে ছয় হাজার ৪৫৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল তিন হাজার ৯২৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। মেয়াদ ছিল- জানুয়ারি ২০১৭ থেকে জুন ২০২১ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।’

মন্ত্রী বলেন, ‘যাদের কারণে পরবর্তী সময়ে নতুন আইটেম যোগ করতে হয় এবং প্রকল্প সংশোধনের প্রয়োজন হয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রকল্প তৈরিতে যাদের কারণে ভুল হয়, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

এম এ মান্নান বলেন, প্রকল্প পরিচালকদের প্রকল্প এলাকায় থাকতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বড় বড় সেতু নির্মাণে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে হবে। জনগণের প্রয়োজনে তৈরি করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে সেতু নির্মাণের কারণে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত যাতে না হয়। এখন সেতুগুলো এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে নৌ চলাচল বাধাগ্রস্ত না হয়।’

সভায় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘শুধু বড় ঠিকাদাররা নয়, ছোটরাও যাতে কাজ পান সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে।’

সভায় মোট আটটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পটি প্রথম সংশোধন করা হচ্ছে। সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ বেড়ে হচ্ছে জুন ২০২৪ সাল পর্যন্ত। এতে করে ব্যয় বেড়ে হচ্ছে ৬ হাজার ৪৫৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল তিন হাজার ৯২৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং মেয়াদ ছিল জানুয়ারি ২০১৭ থেকে জুন ২০২১ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকা এনভারিমেন্টালিজ সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট (প্রথম সংশোধনী) একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল পাঁচ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়ন মেয়াদ ছিল জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ডিসেম্বর ২০১৯ সাল পর্যন্ত। সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পটি মেয়াদ জুন ২০২২ সাল এবং ব্যয় আট হাজার ১৫১ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ওয়াসা।

২৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘টাঙ্গাইল জেলার ১০টি পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প পাস হয়েছে। বাস্তবায়ন করা হবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ সালে।

‘যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ‘যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে একনেক সভা। ১০৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২৩ সালে বাস্তবায়ন করবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর।

এদিকে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন’ প্রকল্পটি একনেকে তোলা হয়েছিল। একনেকে অনুমোদনের পর ৪২৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে জাতীয় মহিলা সংস্থা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন’ নামের প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপন করা হয়। অনুমোদনের পর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৩৪৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। এ প্রকল্পটিতে বিশ্বব্যাংক ও আইডিএ সংস্থা ঋণ হিসেবে দেবে তিন হাজার ৯৬৭ কোটি ৪৬ লাখ।

বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ‘ডিজিটাল উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন ইকো-সিস্টেম উন্নয়ন’ প্রকল্পের অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা কথা রয়েছে।

এসআর/এফআর