রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থেকে চাঞ্চল্যকর সায়মন হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি গ্লাস সুমনের মাদক কারবারে প্রধান সহযোগী আজিজ ওরফে হেরোইন আজিজকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

র‍্যাব-১০ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এনায়েত কবির সোয়েব বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় যে, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার বন্দছাটগাঁও এলাকায় আজিজ ওরফে হেরোইন আজিজ নামের একজন শীর্ষ মাদক কারবারি মাদকের কয়েকটি স্পট পরিচালনা করছে। তিনি মাদক সম্রাট গ্লাস সুমনের মাদক কারবারের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।

এমন তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে র‌্যাব-১০ এর একটি দল বন্দছাটগাঁও এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। অভিযানের সময় ৩০১ পিস ইয়াবা, ৩০ গ্রাম হেরোইন ও পাঁচ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতার আজিজ গ্লাস সুমনের মাদক ব্যবসায়ের প্রধান সহযোগী। তিনি দীর্ঘদিন যাবত দেশের সীমান্তবর্তী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ইয়াবা, হেরোইন ও আইসসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতেন। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।

গ্রেফতার হেরোইন আজিজের বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মাদক মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এর আগে, গত সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জে সায়মন ওরফে নুরে আলমকে (২৫) ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাত ও পায়ের রগ কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

ওই ঘটনায় নিহত সায়মনের ভাই আরস আলম কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ৭/৮ জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১৪।

র‌্যাব ঘটনায় ছায়া তদন্ত শুরু করে ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর অভিযানে রোববার দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা সুমন ওরফে গ্লাস সুমন (২৯), সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ (২৮), শরীফ ওরফে গরীব (২৯), জনি ওরফে হর্স পাওয়ার জনি (৩২) ও হারুনকে (৩২) গ্রেফতার করা হয়। হত্যায় ব্যবহৃত সুইচগিয়ার ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতার গ্লাস সুমন একটি মাদক সিন্ডিকেটের মূল হোতা। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কেরানীগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় তিনি ‘গ্লাস কোম্পানি’ নামে একটি মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন বলে জানা যায়। এই চক্রে সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ১২-১৫ জন।

সায়মনকে কেন হত্যার শিকার হতে হলো- জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, আমরা গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা হত্যার কারণ সম্পর্কে জানিয়েছেন। কিছুদিন আগে নিহত সায়মন ‘গ্লাস কোম্পানি’ মাদক সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট তথ্য দিয়েছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মাদক সিন্ডিকেটের কয়েকজন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার হয়। চক্রটির সন্দেহ সায়মনই তথ্য দিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। 

প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তারা তাকে হত্যা করে। তাদের সন্দেহ ছিল সায়মনের দেওয়া তথ্যের কারণে তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতার হতে হয়। এজন্য ঘটনার কয়েক দিন আগে বালুরচর মুক্তিরবাগ বালুর মাঠে বসে গ্লাস সুমনের নেতৃত্বে হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা হয়। পরিকল্পনায় ৫-৬ জন অংশগ্রহণ করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ জানুয়ারি গ্লাস সুমন সিন্ডিকেটের সদস্যরা সায়মনকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায় মুক্তিরবাগ বালুর মাঠে। সেখানে চেপে ধরে তার হাত ও পায়ের রগ কেটে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে দেয় এবং এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে স্থান ত্যাগ করে। গ্রেফতার হারুন তথ্য দিয়ে হত্যাকারীদের সহযোগিতা করে বলে জানা যায়। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে তারা এই হত্যাকাণ্ড চালায়।

হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার গ্লাস সুমনের নেতৃত্বে প্রায় ৭/৮ জন সক্রিয়ভাবে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করে। পরে স্থানীয় জনগণ চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে যায় ও সায়মনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে মিডফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

জেইউ/ওএফ