যেসব চিকিৎসক ভুয়া সনদ ব্যবহার করে নামে-বেনামে চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

দুদক সচিব বলেন, ডাক্তার না হয়েও ডাক্তারি সনদ ব্যবহার করছেন কিংবা নামে-বেনামে চিকিৎসা দিচ্ছেন বা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, অবশ্যই তাদের দিকে গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। এরপর প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, শুধু চিকিৎসা কার্যক্রম নয়, যে কোনো সেক্টরে এ রকম দুর্নীতি পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। করোনা মহামারির সময়েও দুদক থেমে নেই, আমাদের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হচ্ছে।

অনুমোদনহীন হাসপাতালের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুমোদনবিহীন থেকে থাকলে সেটা দেখার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় রয়েছে। তারা অবশ্যই দেখবে। আমাদেরও নজরদারি থাকবে।

এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ ব্যবহার করে ডাক্তার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন নেওয়া ৭ চিকিৎসকের গ্রেফতার প্রসঙ্গে দুদক সচিব বলেন, রেকর্ডপত্র যাচাইকালে দেখা যায় তাদের এমবিবিএস সার্টিফিকেটগুলো ভুয়া। ১২ জন এমবিবিএস ডিগ্রিধারীর সনদ ভুয়া। এমবিবিএস সনদধারী ওই ব্যক্তিরা কখনও চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেননি। ভুয়া ডাক্তারের সনদ থাকার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এর সঙ্গে সরকারি যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের বিষয়ে তদন্ত পর্যায়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বুধবার দুপুরে সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে দুদকের উপ-পরিচালক সেলিনা আখতার মনির নেতৃত্বে একটি টিম তাদের গ্রেফতার করে। ভুয়া চিকিৎসকরা হলেন; ইমান আলী, সুদেব সেন, তন্ময় আহমেদ, মোক্তার হোসেন, মো. কাওছার, রহমত আলী ও মাসুদ পারভেজ। তারা চীনের তাইশান মেডিকেলের এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ছিলেন।

এর আগে ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর ভুয়া ১২ চিকিৎসক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি আসামিদের মধ্যে মাহমুদুল হক নামে একজন হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইতে গেলে, তার জামিন না দিয়ে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত।

মামলার আসামিরা হলেন; বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার মো. জাহিদুল হক বসুনিয়া ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন। এছাড়া যে ১২ জন বাংলাদেশি ছাত্র চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ দেখিয়েছেন তাদেরও আসামি করা হয়। তারা হলেন; কুমিল্লা জেলার মো. ইমান আলী ও মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ, সাতক্ষীরার সুদেব সেন, টাঙ্গাইলের তন্ময় আহমেদ, ভোলার মো. মাহমুদুল হাসান, চাঁদপুরের মো. মোক্তার হোসাইন, ঢাকার মো. আসাদ উল্লাহ, গাজীপুরের মো. কাউসার, নারায়ণগঞ্জের রহমত আলী, বাগেরহাটের শেখ আতিয়ার রহমান, ফেনীর মো. সাইফুল ইসলাম ও সিরাজগঞ্জের মো. আসলাম হোসেন।

মামলার এজাহারে বলা হয় ওই ১২ জন বাংলাদেশি ছাত্র চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাস করে বলে জানায়। তারা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া এমবিবিএস সনদ ব্যবহার করে বিভিন্ন তারিখে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক গৃহীত রেজিস্ট্রেশন যোগ্যতার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। উত্তীর্ণ হয়েছেন এ বলে চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন নম্বর গ্রহণ করে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন অনুশীলন এবং বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন। রেকর্ডপত্র যাচাইকালে দেখা যায়, তাদের এমবিবিএস সার্টিফিকেটগুলো ভুয়া।

এজাহারে আরও বলা হয়, এমবিবিএস সনদের সত্যতা যাচাই করার জন্য সনদপত্রগুলোর অনুলিপি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায় দুদক। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনের বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ওই সনদপত্রগুলো যাচাইপূর্বক বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক সেকশনে বিগত ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি দুদকে রেকর্ডপত্র পাঠায়। প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে উল্লিখিত ১২ জন এমবিবিএস ডিগ্রিধারীর এমবিবিএস সনদ ভুয়া। এছাড়া সনদগুলোর স্বাক্ষরের সত্যতা পরীক্ষা করার জন্য হস্তলেখা বিশারদের মতামত গ্রহণ করা হয়, তাতেও দেখা যায় যে সনদের স্বাক্ষরগুলোতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।

আরএম/এসকেডি