ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত সাইবার থ্রেট প্রকল্পের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বোঝেনি পরিকল্পনা কমিশন। এজন্য প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে বলেছে কমিশন। পাশাপাশি প্রকল্পের সঙ্গে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য প্রাসঙ্গিক হওয়ার প্রয়োজনের কথা বলেছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ প্রকল্পটির ওপর আজ (২০ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় পিইসি সভা করবে। ওই সভার কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

পিইসি কার্যপত্রে থেকে জানা গেছে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স ফেজ-২’ প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সব জেলাতে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ করতে চায় টেলিযোগাযোগ অধিদফতর। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে সম্পূর্ণ অর্থ সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানায়, ইন্টারনেট সেবার বিশ্বব্যাপী বিস্তার ও প্রাপ্যতা শিক্ষা, গবেষণা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে তথ্য আদান-প্রদানে দুর্দান্ত গতি তৈরি করেছে। তবে ইন্টারনেটের ট্রান্স-ন্যাশনাল, বিকেন্দ্রীভূত এবং উন্মুক্ত প্রকৃতির কারণে কখনও কখনও সন্ত্রাসবাদ, পর্নোগ্রাফি এবং অন্যান্য আপত্তিকর সামগ্রীর প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে এর অপব্যবহার হয়ে থাকে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন টেলিযোগাযোগ অধিদফতর (ডিওটি) সন্ত্রাস, অশ্লীলতা ও জালিয়াতিমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বাংলাদেশের নাগরিকদের সামাজিক যোগাযোগের সুরক্ষিত করতে এবং নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স (সিটিডিআর)’ শীর্ষক প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ এ সমাপ্ত হয়েছে। দেশের ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) এবং ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জগুলোতে (এনআইএক্স) প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ইনস্টল করে সিটিডিআর সিস্টেমটি তৈরি করা হয়েছিল। সিটিডিআর সিস্টেমের মাধ্যমে এখন সাইবার হুমকির বিষয় চিহ্নিত করা এবং সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনে ফিল্টার করা সম্ভব।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ অধিদফতর জানায়, কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে ব্যান্ডউইথের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রমবর্ধমান চাহিদা সম্পূর্ণ পূরণ করা সম্ভব হবে না। নতুন স্থাপিত পিওপিগুলোকে সিটিডিআর সিস্টেমের আওতায় আনা, অধিক ব্যান্ডউইথ চাহিদা পূরণ করা, প্রভৃতির জন্য ‘সিটিডিআর ফেজ-২’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, বিদ্যমান সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেমের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। দেশের সব ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) এবং ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জে (এনআইএক্স) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন করে যেন সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আইআইজিগুলো থেকে অ্যাপ্লিকেশন ব্লক করা যায়। সাইবার হুমকি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করা এবং যে ওয়েবসাইট দেশের সামাজিক নীতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ তা ব্লক করা এবং অ্যাপ্লিকেশন, আইপি ঠিকানা, আইআইজিগুলোর তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের তথ্য সংগ্রহ করা।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম-প্রধান ইয়াসমীন পারভীন স্বাক্ষরিত পিইসি কার্যপত্রে বলা হয়েছে- ১. ‘সাইবার মেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স ফেজ -২’ শীর্ষক প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা আরও সুনির্দিষ্ট ও প্রাসঙ্গিক হওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে পিইসি সভায় আলোচনা করতে হবে।

২. বর্ণিত প্রকল্পে কোন কোন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ল এনফোরসমেন্ট এজেন্সিস (এলইএ) ও গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিটিআরসি কি ধরনের সুবিধা পাচ্ছে তা আরও স্পষ্ট করা প্রয়োজন। সুবিধাভোগী সংস্থার তালিকা ও প্রাপ্ত সুবিধা সুনির্দিষ্ট করে প্রকল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার মতামত গ্রহণ করতে হবে।

৩. ডিপিপি পর্যালোচনায় সিটিডিআর প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ২৩ হাজার সাইট ব্লক করা হয়েছে মর্মে জানা যায়। কিছু ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) জাতীয় অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের মাধ্যমে ব্লক করা বিভিন্ন সাইটে অনুপ্রবেশ করা যায়। এ জাতীয় অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ব্লক/নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা বর্ণিত প্রকল্পে আছে কি না বা এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে সভায় আলোচনা করতে হবে।

৪. আলোচ্য প্রকল্পে বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যার সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সেন্ট্রাল কন্ট্রোল সিস্টেম বা সফটওয়্যার কন্ট্রোলের সক্ষমতা কীভাবে বৃদ্ধি পাবে সে বিষয়ে সংস্থার ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে।

৫. বর্ণিত প্রকল্পের মাধ্যমে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক (ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদি) এর অযাচিত কন্টেন্টের বিষয়ে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের সক্ষমতা রয়েছে সে বিষয়ে সংস্থা আলোকপাত করতে পারে।

৬. আইসিটি বিভাগ, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), সাইবার সিকিউরিটিজ সেন্টার অব এক্সসেলেন্সি, ডিজিএফআইয়ের টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ এবং কারিগরি সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্প কিংবা আরও অন্য কোনো সংস্থার প্রকল্পের কার্যক্রমের সঙ্গে দ্বৈততা আছে কি না এ বিষয় সভায় বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে।

৭. প্রস্তাবিত ডিপিপির লগফ্রেমের বস্তুনিষ্ঠ যাচাই নির্দেশক অংশটি সুনির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন। সেবা গ্রহীতা ও প্রদত্ত সুবিধা আরও স্পষ্ট করা প্রয়োজন।

৮. সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি ২০১৬-এর পরিপত্র অনুযায়ী পিআইসি, পিএসসিসহ সব প্রস্তাবিত কমিটি গঠন করতে হবে। সর্বশেষ পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)-তে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

৯. প্রকল্পের জনবল নির্ধারণের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের জনবল নির্ধারণ কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করতে হবে।

১০. প্রস্তাবিত ডিপিপিতে বৈদেশিক সফর/প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণার্থীর ধরন ও সংখ্যা, প্রশিক্ষণ প্রদানকারী সংস্থা/দেশ এবং প্রশিক্ষণের বিষয়সহ মেয়াদ সুনির্দিষ্টভাবে সংলগ্নী আকারে উল্লেখ করতে হবে।

এসআর/এসএসএইচ