তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পাথওয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। 

সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৩ সালে মন্ত্রিসভা হিজরাদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশে তারা আলাদা একটি লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত পেয়েছে। তবে প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে এই তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতির পাশাপাশি সমাজে মাথা উঁচু করে তাদের বাঁচার জন্য বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। 

এ বছরও সে আশাই দেখাচ্ছে পাথওয়ে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পাথওয়ে বরাবরের মতো এ বছরও শীতের প্রথম প্রহর থেকে সমাজের নিম্ন আয়ের, হতদরিদ্রের মাঝে শীতবস্ত্র সোয়েটার, কার্ডিগান ও কম্বল বিতরণ করে আসছে। 

তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) ঢাকা-মিরপুরের ১০নং জুটপট্টি ও মণিপুরে বসবাসরত অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গ যথাক্রমে শানু ও সোনালী দলের মাঝে দুই শতাধিক শীতবস্ত্র বিতরণ করেন পাথওয়ে।

সংগঠনটির চেয়ারম্যান মো. রইজুর রহমান ও নির্বাহী পরিচালক জনাব মো. শাহিন উপস্থিত থেকে তৃতীয় লিঙ্গদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। এ সময় তারা (তৃতীয় লিঙ্গ) নিজেদের অবহেলিত ও মানবেতর জীবনযাপনের বিভিন্ন প্রতিকূলতা ও সমস্যার কথা তুলে ধরেন। 

পাথওয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহিন বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ফের বেড়েছে। অনেক দরিদ্র, খেটে খাওয়া মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে। সেখানে তৃতীয় লিঙ্গদের বেঁচে থাকার বিষয়টি আরও প্রতিকূল হয়ে উঠছে। তাদের জন্যই মূলত আজকের এ উদ্যোগ।

তিনি বলেন, আমরা তৃতীয় লিঙ্গদের কর্মঠ ও পরিশ্রম করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহে উৎসাহিত করছি। পাথওয়ে তৃতীয় লিঙ্গদের জন্য একটি স্কিল ডেভলপমেন্ট ট্রেইনিং সেন্টার ও একটি অনলাইন ফ্রিলেন্সিং জব মার্কেটপ্লেস তৈরি করতে যাচ্ছে। যাতে করে তারা নিজেরাই চাকরির বাজারে তারা অবহেলিত না থাকে, কারো কাছে হাতপাততে না হয়। একটা সময় তৃতীয় লিঙ্গরা সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দেখা পাবে। 

সংগঠনটির চেয়ারম্যান মো. রইজুর রহমান বলেন, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো আমাদেরই কারো ভাই কারো বোন। ওরাও কোন না কোন মায়েরই সন্তান। কিন্তু কেন সমাজের বেশিরভাগ মানুষ তাদের ভালো চোখে দেখবে না? তাদের কি অপরাধ? অভাবে অথবা কর্মসংস্থান না থাকায় তারা কেন বঞ্চিত থাকবে? ওরাও সমাজ তথা রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে থাকতে চায় না। দরকার সবার সুদৃষ্টি, সহযোগিতা, স্থায়ী কর্মসংস্থান। মানুষ মানুষের জন্য। এটি বিবেচনায় পাথওয়ে তৃতীয় লিঙ্গদের জন্য উদ্যোগী হয়েছে।

পাথওয়ে এর আগে ২০২০ সাল থেকে জীবনমান উন্নয়ন ও হাত পেতে রোজগার থেকে বেড়িয়ে স্বাবলম্বী করতে তৃতীয় লিঙ্গদের জন্য ‘ফ্রি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ’ কর্মসূচি শুরু করে পাথওয়ে ড্রাইভিং ট্রেনিং স্কুল।

এ ব্যাপারে পাথওয়ে নির্বাহী পরিচালক মো. শাহিন জানান, দক্ষ প্রশিক্ষক দ্বারা মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রত্যেককে দক্ষ চালক হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে। যেন তারা কেউই সমাজে অবহেলিত না থাকে। কেউ যেন তাদের নিয়ে হাসিঠাট্টা বা তিরস্কার করতে না পারে।

পাথওয়ে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে তৃতীয় লিঙ্গরাও আমাদের সমাজ বা রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে যদি তাদের যোগ্য করে গড়ে তোলা যায়। এই আত্মবিশ্বাস থেকেই পাথওয়ে তাদেরকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ যেমন- ড্রাইভিং, সিকিউরিটি গার্ড, সেলাই, বিউটিশিয়ানসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। 

পাথওয়ে তাদেরকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করে পাথওয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘পাইলট কেয়ার’ অ্যাপসের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে ড্রাইভিং এর কাজ দিয়ে থাকে।

জেইউ/আইএসএইচ