প্রেমের ফাঁদে ফেলে ময়মনসিংহ জেলা থেকে ডেকে এনে মো. এহসান রাব্বি পালোয়ান (৩৬) নামের একজনকে অপহরণের অভিযোগে দুজনকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

অপহরণের অভিযোগে আটকরা হলেন- মো. রিপন হোসেন (৩২) ও মোছা. লাবনী মিষ্টি ওরফে লাবণ্য (৩০)।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর কাফরুল থেকে ওই অপহৃতকে উদ্ধারসহ দুই অপহরণকারীকে আটক করা হয়। এদিন রাতে র‌্যাব-১ এর সহকারী পরিচালক (অপস অফিসার) ও সহকারী পুলিশ সুপার নোমান আহমদ জানান, গতকাল শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) আটক মোছা. লাবনী মিষ্টি ওরফে লাবণ্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অপহৃত এহসান রাব্বি পালোয়ানকে রাজধানীর কাফরুল থানাধীন মিরপুর- ১০ এলাকায় দাওয়াতের কথা বলে নিয়ে আসে।

‘দুপুর ২টার দিকে এহসান রাব্বিকে অপহরণ করা হয়েছে মর্মে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন হতে ভাইকে জানানো হয়। মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করা হয় ১০ লাখ টাকা। মুক্তিপণ না দিলে অপহরণকারীরা ভিকটিমকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ভিকটিমের ভাই দিশেহারা হয়ে অপহরণকারীদের কথা মতো তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে ২৫ হাজার টাকা প্রদান করে।’

এছাড়া অপহৃতের বিকাশ অ্যাকাউন্ট হতে ২৪ হাজার টাকা ক্যাশ-আউট করে নেয়। বাকি টাকা পরিশোধের জন্য অপহৃতের ভাইকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কোনো উপায় না পেয়ে উত্তরার র‌্যাব-১ কার্যালয়ে এসে অপহরণের বিষয়ে আইনগত সহায়তা চান অপহৃতের ভাই। এর পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব-১ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দ্রুত ছায়া তদন্ত ও অভিযান পরিচালনা করে।

তিনি আরও বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে র‌্যাব-১ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাফরুল থানাধীন ওয়ার্ড নং-১৪, মিরপুর-১০, সেনপাড়া পর্বতা এলাকার জনৈক মেহেদী হাসান বাবুলের বাসায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে রিপন হোসেন ও লাবনী মিষ্টিকে আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপহৃত এহসান রাব্বিকে পরে উদ্ধার করা হয়। 

এ সময় তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ ও ভিকটিমের বিকাশ অ্যাকাউন্ট হতে ক্যাশ-আউট করা নগদ ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা এবং তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের সদস্য। এই চক্রের মূলহোতা রিপন হোসেন। সে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। সে তার সহযোগী লাবনী মিষ্টির মাধ্যমে তাদের অপহরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।

অপহরণের পরিকল্পনা সম্পর্কে র‌্যাব-১ এর সহকারী পরিচালক বলেন, লাবনী প্রথমে ভিকটিমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরবর্তীতে ভিকটিমের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ভিকটিমদের তাদের সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে এসে আটক ও ভিকটিমের ভিডিও ধারণ করে। পরে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে পরিবারের নিকট বিপুল পরিমাণ মুক্তিপণ দাবি করে। মূলহোতা রিপন হোসেন ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে অর্থের বিনিময়ে ভিকটিমকে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়।

তারা দীর্ঘদিন ধরে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণামূলকভাবে টাকার বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্কের প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় করে আসছে মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণপূর্বক আটকদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে— বলেন ওই র‌্যাব কর্মকর্তা।

জেইউ/এমএআর/