জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অধিকাংশ ভুল বানানজনিত বলে দাবি করেছেন সংসদ কার্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবাকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সীমিত না রেখে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের ষোড়শ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীর এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

আরও দেখুন : এনআইডির ৪ ভুলের সংশোধন যেভাবে

আনিসুল হক বলেন, ২০০৭-০৮ সালে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সার্বিক সহযোগিতায় নাগরিকদের বায়োমেট্রিক সংগ্রহপূর্বক জাতীয়ভাবে ভোটার ডাটাবেজ গড়ে তোলা হয়। চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ টেকনিক্যাল জনবল না থাকায় এবং সময় স্বল্পতার কারণে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ভুল-ভ্রান্তি রয়ে যায়, যার অধিকাংশই বানানজনিত ভুল।

তিনি বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে জাতীয় তথ্য ভান্ডারে পাওয়া ভুলগুলোর বিষয়ে আইন ও বিধি অনুসারে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হলেও বিভিন্ন কারণে অনেকেই যথাসময়ে ওই সুযোগ গ্রহণ করেননি। বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুতের ক্ষেত্রে দেশের নাগরিকরা সচেতন হওয়ায় ভুলের পরিমাণ তুলনামূলক কম। এছাড়া ২০১২ সাল থেকে অদ্যাবধি জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুতের সব ক্ষেত্রে ভোটারের নিবন্ধন ফরম (ফরম-২) কেন্দ্রীয় তথ্য ভান্ডারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। নিবন্ধন ফরমগুলো বিবেচনা করেও দেখা গেছে, এনআইডি সঠিকভাবেই মুদ্রিত হয়েছে।

আরও দেখুন : ভুয়া তথ্যে ৮৯৭ রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মন্ত্রী বলেন, সংশোধনের জন্য প্রাপ্ত আবেদনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, অধিকাংশ আবেদনই সংশোধনের চাহিদা অনুযায়ী যুক্তিসংগত নয়। ফলে ওই আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রমাণপত্র ও দলিলাদি দাখিলসহ ক্ষেত্রবিশেষে সেসব পুনঃতদন্তের প্রয়োজন পড়ে। এসব আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কিছুটা বেশি সময় লাগে।

তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচন কর্মকর্তাদেরকে এ সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে একটি অত্যাধুনিক অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা হয়েছে (www.services.nidw.gov.bd)। পাশাপাশি অফলাইন ব্যবস্থাও চালু রয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, অনলাইন ব্যবস্থা চালু হলে আবেদনকারী ঘরে বসেই তার এনআইডি কার্ড সংশোধনের আবেদন করতে সক্ষম হচ্ছেন এবং আবেদন কোন পর্যায়ে রয়েছে সেটিও ট্রাকিং করতে পারছেন। এনআইডি সংশোধনের আবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার পর সংশোধিত কার্ডটি অনলাইনে ডাউনলোডের মাধ্যমে নিজেই প্রিন্ট করতে সক্ষম হচ্ছে। আবেদনকারী সশরীরে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে গেলেও আবেদন গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

আরও দেখুন : এক এনআইডিতে ৫ সিমের বেশি নয়, সুপারিশ সংসদীয় কমিটির

এ সময় মুক্ত আবেদন নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন মন্ত্রী। 

> জাতীয় পরিচয়পত্র সেবাকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সীমিত না রেখে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে

> এনআইডি উইংয়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের নির্বাচন অফিসগুলোর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারাও আবেদনের ধরন অনুসারে আবেদন নিষ্পত্তিকারী কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।

> এনআইডি  ডাটাবেজ আপগ্রেডেশন করায় নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছে;

> এনআইডি সেবা সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য মাঠপর্যায়ে থানা/উপজেলা নির্বাচন অফিসে সহকারী নির্বাচন অফিসারসহ রাজস্ব খাতে একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে উল্লিখিত সেবা সহজীকরণের জন্য মোবাইল অ্যাপস চালু করা হয়েছে। উক্ত অ্যাপসের মাধ্যমে ভোটার নিজেই মুখের ছবি স্ক্যানের মাধ্যমে সংশোধন/হারানোর আবেদন অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।

এইউএ/ওএফ