বিশ্ব ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা দিবসে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা দিতে আইন করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন এবং ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্য জনসচেতনতা মূলক লিফলেট বিতরণ কার্যক্রমে এ দাবি জানানো হয়।

কর্মসূচি পালনকালে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য হুমকির মুখে পড়েছে। রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকদের কেউ নিরাপদ নয়। কথায় কথায় কল রেকর্ড বা ভিডিও রেকর্ড, ব্যক্তিগত ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। চুল কাটার বা চুলে কলপ দেওয়া থেকে শুরু করে হাজার হাজার ই-কমার্সের নামে গ্রাহকের ব্যক্তিগত নম্বরে বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে। আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করাও ভীতির কারণ হয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল বিন্যাস এখন আর নিরাপদ নেই।

তিনি আরও বলেন, ডাটা প্রাইভেসি দিবসের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তথ্য সুরক্ষা ও আস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সংবিধানের ৪৩ (খ) অনুচ্ছেদে প্রাইভেসি রাইটস বা ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা ও গোপনীয়তাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। অথচ স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বাংলাদেশ ডাটা প্রাইভেসি আইন প্রণয়ন করা হয়নি। দেশে বর্তমানে সক্রিয় সিমের সংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলক ফাইভ জি চালু করা হয়েছে। এমএফএসে লেনদেনকারীর সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি, অনলাইন ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে যুক্ত সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। আজকাল জন্ম নিবন্ধন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি সব সেবা নিতে হয় অনলাইনে। সেবা নেওয়ার সময় নাগরিকদের আঙুলের ছাপ, এনআইডি নম্বর, জমির দলিলের কপি, বিদ্যুৎ বিলের কপিসহ অন্যান্য প্রায় ১৮ প্রকার তথ্য দিতে হয়। সিম নিবন্ধনে লাগে আঙুলের ছাপ। সব সেবাকে এনআইডি নম্বর বা মুঠোফোন নম্বর দ্বারা সমাধান বা একই ছায়া তলে না আনার কারণেই যত্রতত্র তথ্য প্রদান করায় বাধছে বিপত্তি। নাগরিক তথ্য বা ব্যক্তিগত তথ্য এখন হুমকির সম্মুখীন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় অনুমতি ছাড়া কারও ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এসময় আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশকিছু দাবি তুলে ধরা হয়। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— ব্যক্তিগত ডাটা সুরক্ষা আইন ২০২২ নামে আইন পাস, সরকারি বা বেসরকারি সব সেবার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র এনআইডি নম্বর বা ফোন নম্বর দিয়ে সেবা নিশ্চিত করা, গ্রাহকের ব্যক্তিগত ফোন আলাপ বা অডিও-ভিডিও প্রকাশকারীদের শনাক্ত করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা ইত্যাদি।

মানববন্ধন কর্মসূচি ও লিফলেট বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন— সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিক, বাংলাদেশ ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, জাতীয় নারী আন্দোলনের সভাপতি নেত্রী মিতা হক, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু প্রমুখ।

এএসএস/এসএসএইচ