রাজধানীতে পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ ভিওআইপির অবৈধ সরঞ্জামাদিসহ তিনজনকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এসময় তাদের কাছ থেকে তিন হাজার ৪০০ টেলিটক সিম উদ্ধার করা হয়।

বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা থেকে বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা পর্যন্ত র‍্যাব-১০ এর একটি দল রাজধানীর নিউমার্কেট, তুরাগ ও শাহ আলী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। তারা হলেন- কাজী এম এম মাহমুদ ওরফে ছোটন (৩২), রাকিব হাসান (৩০) ও বাবর উদ্দিন(৩০)।

র‌্যাব বলছে, চক্রটি অবৈধ টেলিযোগাযোগ স্থাপনার মাধ্যমে প্রতিদিন আনুমানিক প্রায় ছয় লাখ আন্তর্জাতিক কল মিনিট অবৈধভাবে বাংলাদেশে টার্মিনেট করছে। সংঘবদ্ধ চক্রটির ভিওআইপির অবৈধ ব্যবসার কারণে সরকার বর্তমান আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেট অনুযায়ী দৈনিক প্রায় তিন লাখ টাকা ও বছরে প্রায় ১০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর কারওয়ার বাজারের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান।

তিনি বলেন, বুধবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০ এর একটি দল জানতে পারে যে, রাজধানীর নিউমার্কেট থানার কাঁটাবন এলাকার এলিফ্যান্ট রোডের তালহা এন্টারপ্রাইজ নামক একটি প্রতিষ্ঠান ভিওআইপির অবৈধ যন্ত্রাংশ বিক্রয় করছে।

ওই সংবাদের ভিত্তিতে বিটিআরসির কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় চারটি সিম বক্স ডিভাইস (অ্যামপ্লিফায়ার ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম) ও দুটি মোবাইল ফোনসহ রাকিব হাসান ও বাবর উদ্দিনকে আটক করে র‌্যাব। পরে তাদের দেওয়া তথ্যে রাজধানীর তুরাগ থানা এলাকা থেকে ভিওআইপির অবৈধ ব্যবসা চক্রের প্রধান কাজী মাহমুদ ছোটনকে আটক করা হয়।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের থেকে ভিওআইপি ব্যবসায় ব্যবহৃত ১৯টি সিম বক্স ডিভাইস, ৪১৬টি জিএসএম এন্টেনা, তিন হাজার ৪০০ পিস টেলিটক সিম, সাতটি মিনি কম্পিউটার, তিনটি ওয়ারলেস রাউটার, পাঁচটি বাংলা লায়ন মডেম ও রাউটার, তিনটি ল্যাপটপ, একটি ল্যাপটপ কুলার, ১০টি বিভিন্ন চার্জার, ছয়টি ইউএসবি মডেম, ১২টি পাওয়ার ক্যাবল, ২৪টি কনসেল ক্যাবল, তিনটি থ্রিপ্ল্যাগ, চারটি মাল্টিপ্ল্যাগ, একটি মাউস ও চারটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব-১০ সিও বলেন, বিটিআরসির কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে টেলিযোগাযোগের অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে চক্রটি প্রতিদিন আনুমানিক প্রায় ছয় লাখ আন্তর্জাতিক কল মিনিট অবৈধভাবে দেশে টার্মিনেট করছিল। এরফলে সরকার দৈনিক প্রায় তিন লাখ টাকা ও বছরে প্রায় ১০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আটকরা ভিওআইপির অবৈধ ব্যবসা ও ভিওআইপির যন্ত্রাংশ ক্রয়-বিক্রয়কারী। তারা এক বছর ধরে সরকারকে কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসছিল।

একজন সর্বোচ্চ ১৫টি সিম নিবন্ধন করে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু চক্রটি কিভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠান টেলিটকের তিন হাজার ৪০০ সিম কিনে ব্যবহার করেছিল জানতে চাইলে র‌্যাব-১০ প্রধান বলেন, বিষয়টি র‌্যাব ও বিটিআরসির নজরে এসেছে। এটা নিয়ে তদন্ত করা হবে।

এই চক্রের সাথে আরও কেউ জড়িত কিনা ও ভিওআইপি কল কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হচ্ছিল কিনা জানতে চাইলে অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান বলেন, অবৈধভাবে যেহেতু তারা ভিওআইপি ব্যবসা ও সরকারকে কর ফাঁকি দিয়ে আসছিলেন। তাদের এই ভিওআইপি কল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হচ্ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।

জেইউ/ওএফ