ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্যোগময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সংবাদপত্র শিল্পকে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। একই সঙ্গে সংবাদপত্র শিল্পের কাঁচামাল নিউজপ্রিন্টের ওপর প্রযোজ্য শুল্ক-ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় নোয়াবের নেতারা এমন দাবি উপস্থাপন করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নোয়াবের প্রেসিডেন্ট এ কে আজাদ, টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকোর সিনিয়র সহ-সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য সাংবাদিক মাহফুজ আনাম ও দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, এনবিআর সদস্য সামস উদ্দিন আহমেদ, ড. সহিদুল ইসলাম, মাসুদ সাদেক ও জাকিয়া সুলতানাসহ প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।  

ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেন, বৈশ্বিক মহামারিতে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক অর্থনীতিতে চরম সংকট অতিক্রম করছে। এ সময়কে সংবাদপত্র-শিল্পের জন্য ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো দুর্যোগ হিসেবে ধরা যায়। এ অবস্থায় সরকারের সহযোগিতা ছাড়া টিকে থাকা কঠিন। ২০১৪ সালে সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেবা শিল্প হওয়া সত্ত্বেও বিশেষ কোনো সুবিধা পাচ্ছে না এ শিল্প। বর্তমান অবস্থায় করোনা মহামারির জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অংশ বিশেষ সংবাদপত্র শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। সঙ্গতকারণে সংবাদপত্র শিল্পকেও সরকার ঘোষিত প্রণোদনার আওতায় আনার বিশেষ অনুরোধ করছি।

সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, সংবাদপত্র এমন একটি সেবা, যার বিক্রিত মূল্যের চেয়ে উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেশি। বিজ্ঞাপন আয় দিয়ে কোনোভাবে উৎপাদন ব্যয়ের ঘাটতি পূরণ করে টিকে আছে। করোনা পরিস্থিতিতে পত্রিকাগুলোর বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছে। ভয়াবহ আর্থিক লোকসান গুনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, সংবাদপত্রের প্রধান উপাদান নিউজপ্রিন্টের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। দেড় বছর আগেও যেখানে প্রতি টনের দাম ছিল ৫৭০ ডলার। এখন সেখানে দাম ৮৯০ ডলার। অন্যদিকে পত্রিকাগুলোর কর্মীদের মাসিক বেতন ব্যয় অপরিবর্তিত রয়েছে। উল্লেখ্য সরকার ঘোষিত ওয়েজ বোর্ডগুলোর মধ্যে সংবাদপত্রে ওয়েজ বোর্ডের বেতনকাঠামো সবচেয়ে বেশি। সংবাদপত্রগুলো খুব কষ্টে এবং কেউ-কেউ লোকসান দিয়েও এই বেতন ব্যয় চালিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমান পরিস্থিতি এটাকে আরও ভয়ংকর সংকটের মুখে ফেলেছে। অন্যদিকে পত্রিকাগুলোর অফিস ভাড়া ব্যবস্থাপনা ব্যয়, পত্রিকা পরিবহণ ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয়গুলোও অপরিবর্তিত। তাই সংবাদপত্র শিল্পকে বাঁচানোর জন্য ২০২২-২০২৩ সালের বাজেটের জন্য নোয়াবের প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনা করার অনুরোধ করছি।

নোয়াবের প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে-

কর্পোরেট কর কমানো

সেবা শিল্প হওয়া সত্ত্বেও সংবাদপত্র বিশেষ কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। একে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি, অনিবন্ধিত কোম্পানি ও নন-রেসিডেনসিয়াল ক্যাটাগরিতে রেখে কর্পোরেট কর ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ এই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা অন্য ৮-১০টি প্রতিষ্ঠানের মত নয়। ইতোমধ্যে রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে। তাই কর্পোরেট ট্যাক্স ১০-১৫ শতাংশ করার দাবি করা হয়।

নিউজপ্রিন্টের ভ্যাট প্রত্যাহার

সংবাদপত্র শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল হচ্ছে নিউজপ্রিন্ট। যা মোট খরচের ৫০-৬০ ভাগ। অথচ কাগজ আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদান করতে হয়। সেবা শিল্প হিসেবে সংবাদপত্রকে ভ্যাটমুক্ত সুবিধা কিংবা নুন্যতম ৫ শতাংশ করার দাবি করেছে নোয়াব।

টিডিএস ও আইটি অব্যাহতি

ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৪ অনুসারে সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনের ওপর ট্যাক্স ডিডাকশন অ্যাট সোর্সে (টিডিএস) ৪ ও কাঁচামালের উৎসে ৫ শতাংশ এআইটি প্রযোজ্য রয়েছে। সবমিলিয়ে ৯ শতাংশ কর। অথচ অধিকাংশ সংবাদপত্রের ৯ শতাংশ লভ্যাংশই থাকে না। তাই নোয়াব সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনের উপর টিডিএস ২ শতাংশ কম ও এআইটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে।

এছাড়াও কর্মীর আয়ের ওপর প্রযোজ্য আয়কর প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী ৭০ শতাংশ বাড়িভাড়া করমুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে নোয়াব।

এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এনবিআর সব সময় সংবাদ মাধ্যমের অত্যন্ত সাপোর্ট পেয়ে আসছে। বিশেষ করে করের আওতা বৃদ্ধি ও করভীতি দূর করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত ইতিবাচক। আমরা অনিয়ম ও জটিলতা দূর করতে অটোমেশন কিংবা আইন সহজীকরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রেও মিডিয়া সহযোগিতা করে যাচ্ছে। আপনাদের যৌক্তিক দাবিগুলো অবশ্যই বিবেচনা করা হবে।

আরএম/আইএসএইচ