মেয়রের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

কোরিয়া আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (কোইকা) সহযোগিতায় চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে নগরের উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে মতবিনিময় ও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। এ সমীক্ষার জন্য প্রায় ১৮ মাস সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জেং কিউন।   

সোমবার নগর ভবনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বিষয়টি জানান রাষ্ট্রদূত। তার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। 

দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রশংসা করে বলেন, চট্টগ্রাম পাহাড়, নদী, সাগরবেষ্টিত একটি অনন্য নগর। যেকোনো বিদেশি পর্যটক এর সৌন্দর্য দেখে বিমুগ্ধ হবে। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া শীর্ষস্থানে রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেমের আওতায় বাংলাদেশের জনগণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হচ্ছে। 

১৯৯৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশে কেইপিজেড প্রতিষ্ঠার জন্য অনুমতি পায়। ইয়ংওয়ানের মতো পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে বহু কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। কেইপিজেডের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হলে অন্য দেশের বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আস্থা পাবেন বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও নিজস্ব ব্র্যান্ডের বিকাশ ঘটাতে হবে।  

এ সময় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার নেপথ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার বিশেষ অবদান রয়েছে। উন্নয়ন সহযোগী এ দেশটি বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিশেষভাবে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

কোরিয়া আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (কোইকা) সহায়তায় চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রাথমিক সমীক্ষাকার্যে ৫১ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার মাধ্যমে সরকার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে বলে জানান মেয়র। 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সদিচ্ছার কারণে চট্টগ্রাম অচিরেই আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত নগরে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরের যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নয়ন সাধিত হওয়ায় বিনিয়োগে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখানে বাস্তবায়ন হচ্ছে বে-টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চল, কর্ণফুলী তলদেশে টানেল, গভীর সমুদ্র বন্দরসহ নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্প।

২০৪১ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করে উন্নত দেশের কাতারে বাংলাদেশকে উন্নীত করতে দক্ষিণ কোরিয়াকে বিনিয়োগ, তথ্য-প্রযুক্তিগত সহায়তা ও প্রশিক্ষণ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান মেয়র।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম, সচিব খালেদ মাহমুদ, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, কোরিয়ার ফার্স্ট সেক্রেটারি জেং ইউল লি, প্রফেসর ইলজন চ্যাং, কোইকার প্রতিনিধি চ্যাউন কিম, জিং বো চুই, মো জেন কং, চট্টগ্রাম কোরিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’র চেয়ারম্যান মি. জিনহুক পাইক প্রমুখ।

এর আগে রোববার সকালে সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জেং কিউনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এ সাক্ষাতের পর ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী জানান, বন্দর নগরী চট্টগ্রামের অফুরন্ত সম্ভাবনা কাজে লাগানোর পাশাপাশি নগরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, চট্টগ্রামে পরিকল্পিত পরিবহন ব্যবস্থা ও মেট্রোরেল চালুর লক্ষ্যে কোইকার সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় প্রায় ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সমীক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এতে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের অনুদান ৫১ কোটি টাকা।

কেএম/আরএইচ