বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যে প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ করা হয়, ঠিক একই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের দাবি জানিয়েছে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা)।

বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর এক‌টি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান বায়রার সাবেক সভাপতি মো. আবুল বাশার।

তিনি বলেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী অভিবাসন খাতে অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও প্রতারণা রোধে যে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই দিক নির্দেশনাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা বায়রার সব সদস্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনা অনুসরণ করতে বদ্ধপরিকর।

মো. আবুল বাশার বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে পুনরায় বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। এজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর প্রশংসা করে বায়রার সাবেক এ সভাপতি বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বারবার দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন যে তিনি কোনো ধরনের সিন্ডিকেটকে প্রশ্রয় দেবেন না। মালয়েশিয়ান মানবসম্পদ মন্ত্রীর সিন্ডিকেটের প্রস্তাব সম্বলিত চিঠির প্রতি উত্তরেও তিনি সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে সম্পৃক্ত করার কথা উল্লেখ করে অত্যন্ত বিচক্ষণতার স্বাক্ষর রেখেছেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় মালয়েশিয়া শ্রমবাজারকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল আগের মতো মুষ্টিমেয় কয়েকজনের দখলে নিতে অপতৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার ধৃষ্টতা দেখিয়ে আসছেন। ২০১৬ সালে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার চালু হয়। অনিয়ম, দুর্নীতি ও অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ের কারণে মাত্র দেড় বছরের মাথায় মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বে গঠিত মালয়েশিয়ান সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয়।

মো. আবুল বাশার বলেন, উভয় ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ দেশের নিরীহ কর্মীরা, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারের কারণে নষ্ট হয় দেশের সুনাম। বাংলাদেশ বঞ্চিত হয় ধারাবাহিকভাবে এ দেশের গরিব, নিরীহ, কর্মহীন মানুষদের বৈদেশিক কর্মসংস্থান থেকে। এবারও সম্ভাব্য ২৫ সিন্ডিকেটের সদস্যরা অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর আপ্রাণ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও সহযোগী বা সাব এজেন্ট হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে একই মর্যাদার আরও আড়াইশ রিক্রুটিং লাইসেন্সকে, যাতে করে কর্তৃপক্ষকে বাগে আনতে তাদের অনেকটা সহজ হয়।

তিনি আরও বলেন, সিন্ডিকেটের সম্ভাব্য সদস্যরা তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সফল হলে বিদেশগামী নিরীহ কর্মী ও সিংহভাগ বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক এবারও তাদের (সিন্ডিকেট) লালসার শিকার হবেন বলে আমরা তীব্র আশঙ্কা করছি।

বায়রার সাবেক সভাপতি বলেন, স্বার্থান্বেষী মহলের সিন্ডিকেট বাস্তবায়িত হলে আগের মতো অনিয়ম, দুর্নীতি ও অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী মহলের দেশবিরোধী ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ হবে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি উপজেলায় ১০০০ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান বাস্তবায়ন হবে না। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে দেশি-বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক নেতিবাচক প্রচারণা হবে- যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ফলে সরকার ও দেশের সুনাম ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সীমিত সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সি কাজ করলে কর্মী পাঠানোর গতি যেমন কমে যাবে, অধিকন্তু সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও শত শত রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের ব্যবসার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে, আগের মতো যেকোনো সময় বাজারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

জনশক্তি রপ্তানি সেক্টরে অনিয়ম, অরাজকতা, পারস্পরিক রেষারেষি বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া সিন্ডিকেট ছাড়া অন্য ১৩টি দেশের মতো বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেবে এটাই স্বাভাবিক হওয়া বাঞ্ছনীয় কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিশেষ নিয়ম বা সিন্ডিকেট প্রথা আমাদের স্বাধীন দেশের জন্য অমর্যাদাকর। আন্তর্জাতিকভাবে মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় ও শ্রমিক শোষণের কারণে তাদের কিছু কিছু কোম্পানির পণ্য কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের শ্রম বাজারকে প্রভাবিত করবে। অন্যদিকে সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে সম্পৃক্ত করে কর্তৃপক্ষের নজরদারির মাধ্যমে বাজারটি উন্মুক্ত করার ব্যবস্থা করলে অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

সংবাদ সম্মেলনে বায়রার সাবেক সভাপতি নূর আলী, সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার, শামীম আহমেদ চৌধুরীসহ বায়রার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মালয়েশিয়ার কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সির সংগঠনের নেতারা জুমে যুক্ত ছিলেন।

এনআই/এসএসএইচ