এত দুর্গন্ধ, দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়
হাতিরঝিলের পাশের সড়ক দিয়ে হেঁটে গেলেই নাকে ভেসে আসে দুর্গন্ধ
ছুটির দিন শুক্রবার বিকেলে স্ত্রী-সন্তানসহ হাতিরঝিলে ঘুরতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুস সোবহান। পুলিশ প্লাজা থেকে ঝিলের পাড় ধরে গুলশান ঘাটের কাছাকাছি যেতেই মাস্কের ওপর দিয়ে রুমালে নাক চেপে ধরলেন তারা। দুর্গন্ধের কারণেই এ অবস্থা তাদের।
ঘাট পেরিয়ে সামনে এগিয়ে গেলেই দেখা যায় সড়কের এক পাশে গড়ে উঠেছে ফাস্টফুডের অনেকগুলো দোকান। এসব দোকান আর ঝিলের মাঝখানে শুধু একটি পাকা সড়ক। এ অংশে দেখা যায় ঝিলের কোলে যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়েছে আবর্জনা। এসব গিয়ে পড়ছে পানিতে। ওয়াটার ট্যাক্সির ঢেউয়ে আবর্জনা ছড়িয়ে যাচ্ছে ঝিলজুড়ে।
বিজ্ঞাপন
আব্দুস সোবহানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, রাজধানীতে ঘোরাফেরার জায়গা কম থাকায় বেশিরভাগ মানুষ হাতিরঝিলে আসেন। কিন্তু এখানে এত দুর্গন্ধ, দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। সবাই নাক চেপে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উচিত অব্যবস্থাপনা দূর করে সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখা।
বিজ্ঞাপন
মগবাজার থেকে হাতিরঝিলের এফডিসি ঘাটের দিকে আসছিলেন এক নারী। কথা বলে জানা গেল, নাম রেহেনা খাতুন, পেশায় গৃহিণী। সন্তান ও গ্রাম থেকে আসা স্বজনদের নিয়ে হাতিরঝিলে ঘুরতে এসেছেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, সন্তান আমার হাত ছেড়ে হাঁটছিল। টাইলস উঠে তৈরি হওয়া গর্তে পড়ে ব্যথা পেয়েছে। এখানে যদি টাইলস ভেঙে, আবর্জনা পড়ে থেকে পরিবেশ নষ্ট হয়, তাহলে মানুষ হাঁটবে কীভাবে?
তিনি আরও বলেন, এখানে আশেপাশে অনেক বিন স্থাপন করা ছিল। সেগুলোর বেশিরভাগই নেই। যেগুলো আছে, সেগুলো ময়লায় ঠাসা। মানুষ বাধ্য হয়ে চিপসের প্যাকেট, বোতল এসব আবর্জনা সড়কে ফেলছে। ফলে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এই দেখুন না আশেপাশে কত আবর্জনা পড়ে আছে।
হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা হাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি ঢাকা পোস্টের কাছে অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ঝিলপাড়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট তাদের উচ্ছিষ্ট খাবার, ময়লা-আবর্জনা পানির পাশে বা ঝিলপাড়ে ফেলে। পানির সঙ্গে আবর্জনা মিশে পানিতে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।
এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গুলশান ঘাট থেকে পুলিশ প্লাজায় যাওয়ার পথের পাশে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি ফাস্টফুডের দোকানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে তারা বিষয়টি অস্বীকার করে। একটি দোকানের ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান বলেন, আমরা কেউ ঝিলের পানিতে ময়লা-আবর্জনা বা খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলি না। আমাদের বিন আছে, সেখানে ফেলি। সকালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এসব নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা যেহেতু এখানে ব্যবসা করি, তাই দোকান মালিকদের এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। কেউই যেন এখানে কোনো ময়লা-আবর্জনা না ফেলে। এখানে দুর্গন্ধ হলে আমরাই কাস্টমার পাব না।
রাজধানীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হাতিরঝিল। এটি ঘিরে প্রতিদিনই থাকে মানুষের আনাগোনা। যান্ত্রিক জীবনে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে ঝিলপাড়ে মানুষ ভিড় জমায়। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে হাতিরঝিল এলাকায় আবর্জনার অব্যবস্থাপনার দৃশ্য। ঝিলপাড়ের সড়ক ঘেঁষে যেসব বিন স্থাপন করা হয়েছিল সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। ব্যবহারের একেবারে অনুপযোগী।
গত বছরের ৩০ জুন হাতিরঝিল প্রকল্প এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে। সাত মাস যেতে না যেতেই হাতিরঝিলে অব্যবস্থাপনাসহ সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার বিষয়গুলো চোখে পড়ছে।
এ বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী জানান, হাতিরঝিল এলাকায় বেশকিছু অবকাঠামোর উন্নয়ন কাজ চলছে। নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পুরো হাতিরঝিল সুন্দরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে আরও জনবল দরকার, তবুও আমাদের যা আছে তা দিয়েই সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
যারা ঝিলপাড়ে আবর্জনা ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকে আছেন যারা সচেতন নন। তারাই ময়লা-আবর্জনা ফেলে যান। আমরা আমাদের কাজ শুরু করেছি, আশা করছি আমরা পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখতে পারব।
হাতিরঝিল প্রকল্পের আওতায় ৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার এক্সপ্রেস রোড, ৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার সার্ভিস রোড, দুটি ইউলুপ, তিনটি ভায়াডাক্ট, চারটি সেতু এবং চারটি ওভার পাস রয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য তিন শিফটে ১৭১ নিরাপত্তাকর্মী এবং ৫৬ পরিচ্ছন্নতা ও গাছ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন। সব মিলিয়ে মোট ২২৭ কর্মী পুরো হাতিরঝিলে কাজ করছেন। এখানেই ব্যয় করতে হচ্ছে অনেক টাকা।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে রয়েছে জটিলতা। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ডিপিডিতে কোনো বরাদ্দ ছিল না। হাতিরঝিলের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বছরে ১৮ কোটি টাকা দরকার। বর্তমানে হাতিরঝিল এলাকার দোকান, রেস্টুরেন্টসহ সার্বিক দিক থেকে আয় হয় বছরে ১০ কোটি টাকা। বাকি ৮ কোটি টাকা ঘাটতির বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে রাজউক। কিন্তু মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাজউককেই এ ব্যয় বহন করতে হবে।
এএসএস/আরএইচ