বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে সারা বিশ্বের মতোই রাজধানীসহ সারাদেশে চলছে নানা আয়োজন। দিনটিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর দুই সিটিতে তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীদের টিকা দিচ্ছে সরকার।

ফাগুনের ছোঁয়া লেগেছে তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষগুলোর মনেও। তাই পরনে শাড়ি, মাথায় রঙিন ফুলের মুকুট, গলায় মালা, হাতে-খোঁপায় ফুল পরেই তারা টিকা নিতে এসেছেন। কেউ কেউ মুখে এঁকেছেন আলপনা। টিকা নিতে পেরে মুখে হাসি, চলনেও তাদের উচ্ছ্বাস।

সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুইটি স্পটে শুরু হওয়া এই বিশেষ টিকা কর্মসূচি চলবে রাত আটটা পর্যন্ত। এই কার্যক্রমে সার্বিক সহায়তায় রয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক।

এ বিষয়ে ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির ম্যানেজার ডা. মিরানা জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজধানীর দুইটি সিটি করপোরেশনে আজ তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এ কার্যক্রম চলছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে, দুপুর দেড়টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে দুইশ জন তৃতীয় লিঙ্গ টিকা নিয়েছেন। এ ছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বাড্ডা এলাকার আলীর মোড়েও তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীদের টিকা দেওয়া হয়। দুপুর পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে সাড়ে তিনশ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, রাত আটটা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চালানোর কথা থাকলেও যদি শেষ সময়ে যদি আরও লোকজন আসে, তাদেরকেও আমরা টিকা দেব। কারণ, তাদেরকে তো সবসময় পাওয়া যায় না। সবমিলিয়ে আজকের দিনে এক হাজার তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীদের টিকার আওতায় আনতে চেষ্টা করব।

কতদিন তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর এ বিশেষ টিকা কর্মসূচি চলবে জানতে চাইলে ডা. মিরানা জামান আরও বলেন, আপাতত আমরা আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একটি শিডিউল করেছি রাজধানীর কোথায় কোথায় করব। এরপর নতুন করে আবারও শিডিউল করে এই টিকা কার্যক্রম আমরা চালিয়ে নেব।

টিকা নিতে আসা কয়েকজন তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্যদের মত তাদেরকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় টিকা দেওয়ায় তারা উচ্ছ্বসিত। 

তারা বলেন, করোনা টিকা নিতে এতোদিন তাদেরকে বেশ কয়েকটি বাধায় পড়তে হত। টিকা নিতে ভয় পাওয়া, জন্মনিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকা, বয়সসীমা নিয়ে বিভ্রান্তি, সুরক্ষা অ্যাপে হিজড়া অপশন না থাকা—মূলত এই সমস্যাগুলোর কারণে তারা টিকা নিতে নিরুৎসাহিত হন। টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনলাইনে সুরক্ষা ওয়েবসাইট ও অ্যাপে অগ্রাধিকার তালিকায় ২৬টি ক্যাটাগরি আছে। তবে এর মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গরা অন্তর্ভুক্ত নেই।

দেশে তৃতীয় লিঙ্গের সংখ্যা কত—এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য বা জরিপ না থাকলেও সমাজসেবা অধিদপ্তরের ২০১৩ সালের করা এক জরিপ বলছে, এদের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তবে তৃতীয় লিঙ্গদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনের হিসাবে, সারা দেশে এই সংখ্যা লাখ ছাড়াবে।

দেশে করোনা টিকার নিবন্ধন শুরু হয় গত ২৭ জানুয়ারি। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮ বছর বয়সী যেকোনো মানুষ এখন টিকা নিতে পারছেন। দেশে এখন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম, মডার্না ও ফাইজার—এই চার ধরনের টিকা দেওয়া হচ্ছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে ১০ কোটি ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৪১২ জন মানুষ করোনা টিকার প্রথম ডোজের আওতায় এসেছেন।

টিআই/আইএসএইচ