মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। শহীদ মিনারের বেদীজুড়ে আঁকা হচ্ছে আলপনা। লাল-সাদা আঁচড়ে স্পষ্ট হচ্ছে চারুকর্ম। দেয়াল দেয়ালে বর্ণমালার অক্ষরে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে মাতৃভাষার মর্ম।

শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শহীদ মিনার এলাকায় দেখা যায়, সৌন্দর্য বাড়াতে শহীদ মিনারের মূল বেদীসহ আশপাশের রাস্তা ও রাস্তার পাশের দেয়ালে নতুন রঙ করা হচ্ছে। ঝাড়ু ও ধোয়ামোছাসহ পরিষ্কার করার কাজ চলছে পুরোদমে। আলপনা, সাজসজ্জা ও গাছের গোড়ায় রং করার কাজ চলছে।

কাউকে মিনারের আঙিনায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। মূল বেদীসহ পুরো চত্বর নতুন করে রং করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চারদিকে সিসিটিভি স্থাপন করা হচ্ছে। মিনারের উত্তর দিকের দেয়াল নানা রঙে রাঙানো হচ্ছে। দেয়ালে নানা রকম আলপনা এবং ভাষা আন্দোলনের নানা গান, কবিতা ও স্লোগান লেখার কাজ চলছে। 

প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরাই শহীদ মিনারে আলপনা আঁকা ও সাজসজ্জার কাজ করেন। তারা আশা করছেন, শনিবার রাতের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। চারুকলার শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার বলেন, ‘আমরা প্রতিবারই আনন্দের সাথে এই কাজটা করে থাকি। এখানে কাজ করতে ভালো লাগে। আলপনা আঁকা প্রায় শেষ পর্যায়ে। সন্ধ্যা কিংবা রাতের মধ্যে কাজ শেষ হবে।’

এদিকে করোনার কারণে একুশের আয়োজন এবারো কিছু বিধিনিষেধের মধ্যে পড়েছে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজন আর ব্যক্তিপর্যায়ে দুজন স্বাস্থ্যবিধি মেনে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসতে পারবেন।

বিধিনিষেধের এই খড়গে অনেকে ইচ্ছা থাকলেও এবার একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে আসতে পারবেন না। কেউ কেউ তাই আজকেই আসছেন শহীদ মিনার দেখতে! তবে সাজসজ্জার সাথে সংশ্লিষ্ট চারুকলার শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে আজ (শনিবার) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিদর্শন শেষে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ডিএমপি। এ সময় ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার শহীদ দিবস উপলক্ষে ছয় স্তরের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি থাকবে না। ইউনিফর্ম পুলিশ, সাদা পোশাকের পুলিশ, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডিবি, র‍্যাব ও সোয়াটের টিম মোতায়েন থাকবে। 

তিনি বলেন, শহীদ দিবসে রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করতে আসবেন ধরে নিয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া শহীদ মিনার এলাকার চারদিকে যেসব রাস্তা রয়েছে তার প্রত্যেকটিতে পুলিশের চেকপোস্ট থাকবে। চেকপোস্টের বাইরে ও ভেতরের এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। 

শনিবার বিকেলে সার্বিক প্রস্তুতি দেখতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিদর্শন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। প্রস্তুতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে উপাচার্য বলেন, ‘রাষ্ট্রাচার অনুযায়ী একুশের প্রথম প্রহরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীমূল প্রস্তুত করা হচ্ছে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে, যথাসময়ে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।’

যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২২ পালনের জন্য সর্বসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২২ সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন উপাচার্য।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব একেএম গোলাম রব্বানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মহান একুশে ফেব্রুয়ারি পালন উপলক্ষে আমরা ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করে ফেলেছি। শহীদ মিনারের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে যাবতীয় কাজ শেষ পর্যায়ে। যথাসময়ে সব কাজ সম্পন্ন হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ১২টি পয়েন্টে ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কেউ পাস ছাড়া ঢুকতে পারবে না। সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রক্টরিয়াল টিম টহল দেবে।

এইচআর/এইচকে/জেএস