‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ১২ বছর পর অনুষ্ঠিত হয় লিখিত পরীক্ষা। এরপর ব্যবহারিক ও ভাইভা। ভাইভায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন কারা, তা জানতে প্রতীক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না। দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাস গিয়ে বছরও পার হয়। কিন্তু ভাইভার ফল এখনও প্রকাশ পেল না।’ 

ঢাকা পোস্টের কাছে এভাবেই আক্ষেপ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএডিসি) ড্রাইভার (গাড়ির চালক) পদে চাকরির পরীক্ষা দেওয়া এক ব্যক্তি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রায় ১৩ বছর কেটে গেলেও ওই পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি বিএডিসি। 

বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, গত ২০০৯ সালের ১২ মে (মঙ্গলবার) পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় বিএডিসি। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের নিম্নবর্ণিত শূন্য পদসমূহ পূরণের জন্য প্রকৃত বাংলাদেশি জনগণদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করা যাচ্ছে। গাড়িচালক পদে ২৪টি, ট্রাকচালক পদে ৩০টি, স্পিডবোটচালক পদে দুটি এবং ট্রাক্টরচালক পদে ২৭টি শূন্যপদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলো। এই চার পদে অষ্টম শ্রেণি পাস প্রার্থীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করা হচ্ছে।’ 

পরীক্ষার্থীরা জানান, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দীর্ঘ ১২ বছর পর ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি ওই চার পদে লিখিত পরীক্ষা শেষ করে বিএডিসি। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ওই মাসের ২২ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষাও শেষ হয়েছে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়। 

গাড়িচালক পদে অংশগ্রহণ করা রুহুল (ছদ্মনাম) নামের এক পরীক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘২০০৯ সালের মে মাসে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল বিএডিসি। নিয়োগ পেয়েই আবেদন করি। কিন্তু বছরের পর বছর ঘুরে পরীক্ষা হচ্ছিল না। অবশেষে ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি লিখিত পরীক্ষা হয়। জানুয়ারি মাসেই ব্যবহারিক ও ভাইভা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু তারপরই শেষ। এক বছর চলে গেল, এখনও রেজাল্ট দেয়নি। কবে দেবে সেটাও জানি না। তবে আমি নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি।’ 

বিএডিসির নিয়োগ ও কল্যাণ বিভাগের প্রধান যুগ্ম পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রশাসনিক কারণে রেজাল্ট দেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হলে রেজাল্ট দেওয়া হবে। মামলার কারণে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটা আটকে ছিল।’ 

মৌখিক পরীক্ষার এক বছর পরও কী কারণে ফল দেওয়া হচ্ছে না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি আমার অফিসে আসেন, সাক্ষাতে কথা বলব। আমি আপনাকে তথ্য দেওয়ার কর্তৃপক্ষ না।’ 

এ শাখার প্রধান তো আপনি— এমনটি জানালে তিনি বলেন, ‘আই অ্যাম নট অথরাইজড। আপনি আমাদের (বিএডিসি) সচিব স্যারকে বলতে পারেন।’ চেয়ারম্যানকে ফোন দেব কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সচিবকে ফোন দেন।’ 

গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিএডিসি চেয়ারম্যান এ এফ এম হায়াতুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি একটা মিটিংয়ে আছি। এখন কথা বলতে পারব না। খুব জরুরি হলে দুই ঘণ্টা পর ফোন দেবেন।’ দুই ঘণ্টা পর ফোন দিলে তিনি আর রিসিভ করেননি। 

পরবর্তীতে ১৭ ফেব্রুয়ারি বিএডিসি চেয়ারম্যানকে কল করা হলে ফোন রিসিভ করেন তার একান্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘স্যার একটু দূরে আছেন। পরে ফোন দেন।’ কী বিষয়ে কথা বলতে চান— জানতে চেয়ে এ প্রতিবেদককে প্রশ্নও করেন তিনি। 

‘নিয়োগের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাই’— জানালে চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব বলেন, ‘আমরা প্রসেস অনুযায়ী এগোচ্ছিলাম। পরে আমরা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটার জন্য এক বছর সময় বাড়িয়ে গত বছরের (২০২১) ডিসেম্বর পর্যন্ত করি। কিন্তু এ মেয়াদে শেষ করতে না পারায় আমরা আবারও চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়াতে বলেছিলাম। আমাদের এ প্রস্তাবে কৃষি মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিতে পারেনি। সেখান থেকে পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। জনপ্রশাসন এ নিয়োগের বিষয়ে কিছু কোয়ারি দিয়েছে। আমরা জনপ্রশাসনকে কোয়ারির জবাবটা দেব।’

‘জনপ্রশাসনকে বুঝিয়ে মেয়াদ বাড়িয়ে অনুমোদন আনতে পারলে ডিসেম্বরের মধ্যে ফল দিতে পারব’— বলেন চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব সাইফুল ইসলাম। 

এ বক্তব্যটা কার নাম দেব— প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে বিএডিসি চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এটা আমার নামে কীভাবে দেবেন? স্যারের (বিএডিসি চেয়ারম্যান) নামে দিতে পারেন।’ 

এসআর/এইচকে/এমএআর//