বলা সত্য মানুষ সাময়িক দুর্ভোগের শিকার হলেও তারা শেষ অবধি জয়ী হন। কেননা সত্যের জয় নিশ্চিত। চাপা দিয়ে রাখা যায় না, কোন না কোনভাবে সে টিকে যায়। আপন গতিতে চলে। মনে আছে তো রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’র কথা। করবী গাছটির কথা। কেমন করে দারুণভাবে টিকে গিয়েছিল।

সাহিত্য বলি আর বিজ্ঞান সত্যের জয় সর্বত্র। সক্রেটিস, কোপারনিকাস, জিওর্দানো ব্রনো সবাই সত্যের লড়াই করেছেন। সভ্যতা বা বিজ্ঞানের ইতিহাসও সত্যের লড়াই। সত্যটা জানলে, আদর্শ, নৈতিকতা থাকলে মানুষ শেষ অবধি জয়ী হয়। লড়াই বা সংগ্রামও একটি প্রক্রিয়া, জয়ের প্রক্রিয়া। আলটিমেট জয়ী হওয়া বলে কিছু নেই।

মোহাম্মদ এ আরাফাত আরেক সংগ্রামী, আরেক লড়াকু, যিনি অসত্যের বিরুদ্ধে, অপরাজনীতির বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন অনেককাল। অক্লান্ত। কাজটি শুরু করেছেন অনেক আগে, সেই শৈশবে মুক্তিযোদ্ধা বাবার হাত ধরে। মনে প্রশ্ন কাজ করত, যে মানুষটি দেশ স্বাধীন করল যাকে মানুষ ‘বঙ্গবন্ধু’ বলে ডাকে তাকে কোথাও দেখি না কেন? তার কথা কেন শোনা যায় না, রেডিও টেলিভিশন কোথাও? সেই মহান নেতার কথা জানতে চাওয়া, বলতে চাওয়া, লিখতে চাওয়াও বারণ ছিল একটা সময়। মোহাম্মদ এ আরাফাতের রাজনৈতিক হাতেখড়ি আর আদর্শের বীজটা বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা সেতাবউদ্দিন বপন করে দিয়েছিলেন সেই তখনই।

এতো এতো বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ রেখে আওয়ামী লীগ থেকে মোহাম্মদ এ আরাফাত মনোনয়ন পেলেন? তাও ঢাকা-১৭, গুলশান থেকে? পদার্থ বিদ্যায় ‘আপাত’ আর ‘প্রকৃত’ বলে দুটো বিষয় রয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে তিনি রাজনীতির মাঠে তুলনামূলকভাবে নতুন, কিন্তু প্রকৃত তথ্যটি হলো রাজনীতির মাঠে তিনি কাজ করছেন প্রায় ২০ বছর ধরে।

আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল না, ছিল বিরোধী দলে তখন থেকেই তিনি শেখ হাসিনার নির্দেশে একেবারে প্রান্তিক এলাকায় কাজ করেছেন। নীরবে, নিভৃতে; প্রান্তিক মানুষদের জীবনমান উন্নয়নে। আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে পিএইচডি শেষ না করে, বন্ধু স্বজনদের নিষেধ না মেনে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর পুরোপুরি দেশে চলে আসেন। কেউ তাকে আর ফেরাতে পারে না। দেশে এসে শুধু করেন শিক্ষকতা, গবেষণা, লেখালেখি, সেমিনার, বক্তৃতা। লক্ষ্য কিন্তু একটাই বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন সুচিন্তা ফাউন্ডেশন।

সুচিন্তা মূলত তরুণদের প্ল্যাটফর্ম আর চেতনার নেটওয়ার্ক। সারাদেশে সুচিন্তা কাজ করেছে, করে এখনো। সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রবাদের বিপক্ষে মানুষকে সচেতন করে তুলে সুচিন্তা দেশে বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই স্বাধীনতা বিরোধীদের টার্গেটে পরিণত হন তিনি। তার বক্তব্যে সবসময়ই স্পষ্ট ও ক্ষুরধার। নিরপেক্ষতার ভান ভণিতা নেই। খুব পরিষ্কারভাবে বলেছেন- “আমি জয় বাংলার পক্ষের লোক। আমি ‘জয় বাংলা’ এবং ‘জিন্দাবাদ’ এর মাঝখানে নিরপেক্ষ নই। আমার সুস্পষ্ট একটা পক্ষ আছে। আমার কাছে ‘জয় বাংলা’ শুধু একটি স্লোগান নয়, ‘জয় বাংলা’ মানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ‘জয় বাংলা’ মানে মুক্তির লড়াই, ‘জয় বাংলা’ মানে স্বাধীনতা। ‘জয় বাংলা’ মানে গণতন্ত্র। ‘জয় বাংলা’ মানে অসাম্প্রদায়িকতা।

‘জয় বাংলা’ মানে আইনের শাসন। ‘জয় বাংলা’ সুশাসন। ‘জয় বাংলা’ মানে ভোটের অধিকার। ‘জয় বাংলা’ মানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা। ‘জয় বাংলা’ মানে কুসংস্কারমুক্ত বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ। ‘জয় বাংলা’ মানে আধুনিকতা, কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া। ‘জয় বাংলা’ মানে প্রগতিশীলতা, ‘জয় বাংলা’ মানে উদার নৈতিকতা, ‘জয় বাংলা’ মানে দারিদ্র বিমোচন, ‘জয় বাংলা’ মানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই। ‘জয় বাংলা’ মানে অসত্য ও মিথ্যা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সত্যের লড়াই।” সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

অধ্যাপক এ আরাফাত বৈদেশিক নীতি ও আঞ্চলিক সহযোগিতা, ভারত ও অন্যান্য প্রতিবেশীদের সাথে পানির ন্যায্য হিস্যা ভাগাভাগি, যুদ্ধাপরাধের বিচার, সংবিধান ও গণতন্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন। তাকে দক্ষিণ এশিয়া ইন্দো-বাংলা সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার অন্যতম প্রবক্তা বলেও অভিহিত করা হয়।

অধ্যাপক আরাফাত প্রতিনিয়তই নির্বাচনী প্রচারণা করছেন, নিয়মের মধ্যে থেকে। কখনো ছুটে গিয়েছেন সাততলা বস্তি এলাকায়, কখনো গুলশান সোসাইটির সিনিয়র সিটিজেনদের কাছে। প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায়, শেখ হাসিনার বার্তা নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বুকে ধারণ করে। তার সতীর্থ, শুভানুধ্যায়ী অনেকে তাকে নিয়ে লিখছেনও পত্রপত্রিকায়। প্রচারণার এই পুরো আয়োজনটির মধ্যে একটি একতা রয়েছে, ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান রয়েছে, রুচির প্রকাশ রয়েছে। তার এপিয়ারেন্সও চোখে পড়ার মতো, সাদামাটা, নিরহংকার, কিন্তু প্রজ্ঞায় উজ্জ্বল দ্যুতিময়। একজন অধ্যাপক হয়ত এমনই হওয়ার কথা, এমনই হয়ত মানুষ দেখতে চেয়েছেন। আড়ম্বর নেই। অশ্লীল গান বাজনা নেই। সিনেমার নায়িকাদের ঝাঁপিয়ে পড়া নেই।

সবচেয়ে সুন্দর যে দৃশ্য তা হলো অধ্যাপক আরাফাতের বিভিন্ন সময়ের ছাত্ররা যাদের তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করেছেন সেই তরুণরা এই প্রচারণায় যুক্ত হয়েছে স্বতস্ফূর্তভাবে তাদের প্রিয় শিক্ষকের জন্য, নৌকার জন্য। যে আদর্শে তিনি তাদের বড় করেছেন আজ তারাই এসে দাঁড়িয়েছে তার পাশে।

বাংলাদেশের তরুণরা একসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছে ‘ আই হেইট পলিটিক্স’ তাদের কোন আগ্রহ নেই কারণ তারা শিক্ষিত, রুচিমান, প্রজ্ঞাবান, আধুনিক মানুষদের প্রত্যাশা করে। যারা তাদের পালস্ বুঝবে। তাদের টেস্ট বুঝবে। অধ্যাপক আরাফাতের নির্বাচনী প্রচারণায় তরুণদের স্বপ্রণোদিত উপস্থিতি হয়ত বাংলাদেশে রাজনীতির শুদ্ধতার প্রশ্ন আর গতি প্রকৃতির বাক বদলে দিতে পারে। 

হয়ত ভবিষ্যতের শুরু এখানে।
জয় আসবেই।

লেখক: সম্পাদক, আজ সারাবেলা। সদস্য, ফেমিনিস্ট ডট কম, যুক্তরাষ্ট্র।