ছবি : সংগৃহীত

ভবনের নকশা অনুমোদনে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কথা শেয়ার করি, যদি কারও কাজে লাগে। ধরুন, আপনি নকশা অনুমোদন কমিটির সদস্য। এই কমিটির নাম অথোরাইজেশন কমিটি। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সরকার নির্ধারিত এই কমিটিই বড় বড় শহরগুলোয় বাস্তবায়ন করে।

আপনার কাছে একটা আবেদন (ফাইল/নথি/নকশা) এলো যেখানে ২০/২৫ ফুট প্রশস্তের রাস্তার পাশে একটি বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদনের আবেদন রয়েছে। ফাইলটি কখন আপনার দপ্তরে যাবে তা নজরে রাখার জন্য আপনার অফিসেরই লোক গুপ্ত দালাল হিসেবে নিয়োজিত থাকে। ফলে, ওই ফাইল আপনি খুলতে খুলতেই দেখবেন তদবিরকারী 'উপহার' নিয়ে হাজির।

এই 'উপহার' বা স্পিডমানি (সাবেক এক অর্থমন্ত্রীর ভাষায়) গ্রহণ করে নথিতে স্বাক্ষর করে দিলে সবাই খুশি। তা না করে, আপনি যদি মাঠ পর্যায়ে তদন্তে যান তাহলে হয়তো দেখবেন রাস্তার প্রশস্ততা আসলে ১০/১২ ফুট, বা তারও কম; বা এমনও হতে পারে, অনুমোদনের আগেই ফাউন্ডেশনের কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন >>> জলবায়ু পরিবর্তন : তলিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের ১৩ শতাংশ ভূমি

নকশায় রাস্তা বড় করে দেখানো হলো কেন? কারণ, সরু রাস্তায় বহুতল ভবনের অনুমতি দেওয়ার বিধান নেই। হাতেনাতে ধরা পড়লে আপনাকে বহুগুণে বেশি 'উপহার' অফার করা হবে। তাতে রাজি না হলে আপনার বসকে দিয়ে চাপ দেওয়া হবে। তাতেও কাজ না হলে আসবে রাজনৈতিক চাপ।

কোনকিছুতেই কাজ না হলে আপনার ভাগ্যে মাছিমারা কেরানির পোস্টিং ঠেকায় কে? আপনি যাবেন কোথায়? তারচেয়ে বরং 'একটা পুরো ডিমের অর্ধেকখানা' খেয়ে হলেও শান্তিতে চাকরি করা উত্তম নয় কি? 

এত সরু রাস্তার পাশে বহুতল ভবন নির্মাণ করলে সমস্যা কী? যানজট, পানি নিষ্কাশন (ড্রেনেজ), এসব নিয়ে ভাবুন, উত্তর পেয়ে যাবেন। তবে, এগুলো হলো ছোটখাটো সমস্যা।

বড় সমস্যা তাহলে কোথায়? আগুন, ভূমিকম্প... এসব নিয়ে ভাবলে বুঝবেন সরু রাস্তায় কী ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হতে পারে সেইসময়। উদ্ধারকাজ পরিচালনা সেইখানে সম্ভব? উদ্ধারকারী বা উদ্ধারকাজে ব্যবহারের যন্ত্রপাতি নিয়ে যাতায়াত করতে পারবে?

আরও পড়ুন >>> নিমতলী, চুড়িহাট্টা, সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি : এর শেষ কোথায়? 

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় রাত ১১টায় ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয়। শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে উত্তরপূর্ব আফ্রিকার দেশ মরক্কো। রিখটার স্কেলের রেকর্ড অনুযায়ী ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮। শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে রাবাত থেকে শুরু করে উত্তরের সিদি ইফনিতেও কম্পনের সৃষ্টি হয়।

মরক্কোতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে প্রায় ২৯০০ (ঢাকা পোস্ট, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩)। আর, ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়ে আছে কয় হাজার তার হিসাব অজানা।

বাংলাদেশে তেমন ঘটনা ঘটবে না তা কে বলল? আমি বলবো না আপনি এটা করেন, ওটা করেন। ভবন নির্মাণের সময় রাস্তার প্রশস্ততা যথাযথ রাখা উচিত কি না সেই প্রশ্ন নিজের বিবেককেই করুন। উত্তর পেয়ে যাবেন। আপনার ভবনটি যেন মৃত্যুকূপ না হয়।

এম এল গনি ।। কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট (আরসিআইসি)