আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)’র গবেষণা বলছে, ঢাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপদজনক ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা অনেক সংক্রমণ হচ্ছে। মার্চের চতুর্থ সপ্তাহে প্রায় ৮১ শতাংশ ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টটি ছড়িয়ে পড়ার খবরটি খুবই উদ্বেগজনক। কারণ, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন এই ভ্যারিয়েন্টের বিপক্ষে তেমন কার্যকর নয়। পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি-অর্থাৎ, এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

সম্প্রতি একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল থেকে জানা গেছে যে, দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সৃষ্ট মৃদু ও মাঝারি ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন মাত্র ১০ শতাংশ সুরক্ষা দেয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টে প্রাপ্ত ‘ই৪৮৪কে’ মিউটেশনের উপস্থিতির কারণে এই নতুন ধরনটির মাঝে প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়ানোর কৌশল বিদ্যমান। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন মৃদু এবং মাঝারি সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা না দিলেও, গুরুতর সংক্রমণের বিরুদ্ধে কিছুটা সুরক্ষা দেয়। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার তাদের জনগণকে অক্সফোর্ড-এর ভ্যাকসিন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পরিবর্তে দক্ষিণ আফ্রিকা জনসন অ্যান্ড জনসন’র ভ্যাকসিন প্রদান শুরু করেছে।

N501Y নামক মিউটেশনের উপস্থিতির কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়ায়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষজ্ঞদের মতে এই ধরনটি মূল স্ট্রেনের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি সংক্রামক।

দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার তাদের জনগণকে অক্সফোর্ড-এর ভ্যাকসিন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পরিবর্তে দক্ষিণ আফ্রিকা জনসন অ্যান্ড জনসন’র ভ্যাকসিন প্রদান শুরু করেছে। আবিষ্কৃত সকল ভ্যাকসিনের মাঝে জনসন অ্যান্ড জনসন’র ভ্যাকসিনটি দক্ষিণ আফ্রিকার এই ভ্যারিয়েন্টের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি কার্যকর।

গবেষণায় জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজের এই ভ্যাকসিন দক্ষিণ আফ্রিকায় ৬৪ শতাংশ এবং মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে ৮২ শতাংশ কার্যকরিতা দেখিয়েছে। বাংলাদেশের কেবল অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের উপর নির্ভরতা বন্ধ করা উচিত এবং জনসন অ্যান্ড জনসন ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করা উচিত।

আমরা ফেব্রুয়ারির শেষের দিক থেকে বাংলাদেশে নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলোর প্রবেশ এবং সম্ভাব্য বিস্তার সম্পর্কে সতর্কতা প্রদান করে আসছি। দুর্ভাগ্যক্রমে সময়মতো বর্ডার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নতুন ভ্যারিয়েন্টের অনুপ্রবেশ রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিশ্বের ৬৮টিরও বেশি দেশে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টটি ছড়িয়ে পড়েছে, কাজেই বাংলাদেশ এই ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার অবাক হওয়ার মতো বিষয় নয়।

আমরা ফেব্রুয়ারির শেষের দিক থেকে বাংলাদেশে নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলোর প্রবেশ এবং সম্ভাব্য বিস্তার সম্পর্কে সতর্কতা প্রদান করে আসছি। দুর্ভাগ্যক্রমে সময়মতো বর্ডার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নতুন ভ্যারিয়েন্টের অনুপ্রবেশ রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশে অধিক পরিমাণ জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে হবে। জিনোম সিকোয়েন্সিং নতুন মিউটেশন শনাক্তকরণ এবং ভ্যারিয়েন্ট-এর বিরুদ্ধে টিকার কার্যকারিতা মূল্যায়নে সহায়তা করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অধিক পরিমাণ জিনোম সিকোয়েন্সিং করার উপদেশ দিয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টের বিপক্ষে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা খুব সীমিত; তাই নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য সকলকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে-মাস্ক পরতে হবে, হাত ধোয়ার অভ্যাস চালু রাখতে হবে, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।

আমাদের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে কারণ এটি করোনার অরিজিনাল স্ট্রেইন এবং অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলো থেকে প্রতিরক্ষা দেয় এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এটি দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা গুরুতর অসুস্থতার বিরুদ্ধে কিছুটা সুরক্ষা প্রদান করে।

সরকারকে সকল প্রকার জনসমাগম ও আন্তজেলা চলাচল নিষিদ্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে-কেউ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। লকডাউন বা কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। যদি কঠোর পদক্ষেপগুলো যথাযথভাবে প্রয়োগ করা না হয়, তবে আগামী সপ্তাহে দেশে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশের প্রাপ্ত বিপদজনক ভ্যারিয়েন্টগুলো সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা দরকার; এতে করে জনগণ সাবধান হবে। এর ফলে মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা বাড়বে এবং সরকারের জন্য কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে।

ডা. শাহরিয়ার রোজেন ।। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র পলিসি বিশ্লেষক, কানাডা