ছবি : সংগৃহীত

হজরত খান বাহাদুর আহ‌্ছানউল্লা ছিলেন সমাজের জন্য একজন নিবেদিত প্রাণ। তিনি চাইলে সুখ শান্তি আর আড়ম্বর জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু তিনি আড়ম্বর জীবন না কাটিয়ে মানব সেবায় ব্রতী হয়েছিলেন।

শিক্ষায় তার অবদান ছিল অনবদ্য। তিনি নিজ উদ্যোগে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়তে অবদান রেখেছিলেন। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করেছিলেন।

তৎকালীন সময়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ ছিল মুসলমান। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

নারী শিক্ষার জন্যেও হজরত খান বাহাদুর আহ‌্ছানউল্লার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তার পরিবারেও তিনি নারী শিক্ষার চর্চা করেছেন। তারই পুত্রবধূ ফজিলতুন্নেসা জোহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম নারী শিক্ষার্থী ছিলেন।

পরিবার থেকে নারী শিক্ষা উৎসাহের এক অনবদ্য উদাহরণ ছিল তার পরিবার। আমরা এখনো দেখি আমাদের সমাজে অনেক কূপমণ্ডুকতা আছে। কিন্তু তার সময় সকল বাধা বিপত্তির উত্তরণ ঘটিয়ে নিজেকে সমাজের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন তিনি।

নীতি নৈতিকতা ও মূল্যবোধে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। ঘরে বাইরে যে চর্চাটি সবসময় তিনি করতেন তা হলো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের এগিয়ে নেওয়া।

বর্তমান সমাজে নীতি নৈতিকতার অবক্ষয় আমরা লক্ষ্য করে থাকি। আমাদের তরুণ প্রজন্ম তার জীবন-দর্শন থেকে যদি কিছু বুঝতে ও শিখতে পারে, অনুশীলন করতে পারে তাহলে আমাদের সমাজের অনেক উন্নতি সাধন হবে।

বর্তমানে আমাদের সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় অনেক বেশি। আমাদের নতুন প্রজন্ম বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে। তারা লেখাপড়া শিখছে। কিন্তু লেখাপড়াকে সম্মান দিচ্ছে না, পরিবারের সদস্যদের সম্মান দিচ্ছে না।

পরিবারে নারীর প্রতি সম্মান, এই দর্শন আমরা তার জীবন দর্শন থেকে নিতে পারি। তার বিভিন্ন কাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে নারী শিক্ষা ও নারীর প্রতি সম্মান তিনি একটি রীতিতে পরিণত করেছিলেন। আমাদের উচিত বর্তমান সমাজের তরুণ প্রজন্মের নৈতিক অবক্ষয় রোধে এই রোল মডেলকে সকলের সামনে তুলে ধরা।

হজরত খান বাহাদুর আহ‌্ছানউল্লা’র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার জীবনের আলেখ্য তুলে ধরার জন্য ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন যে উদ্যোগ নিয়েছে তার জন্য তাদের স্বাগত জানাই। এবং তার অবদান, জীবনচর্চা ও দর্শন যদি নতুন প্রজন্মের কাছে সামাজিক মাধ্যম বা অন্যান্য মাধ্যমের  মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া যায়, তাহলে তরুণ প্রজন্ম তার সম্পর্কে জানতে পারবে।

আশা করব তারা যেন নতুন প্রজন্মের কাছে এই রোল মডেলের জীবন দর্শন, অবদান, নিবেদন বা যা করে গেছেন পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য, তা তুলে ধরা এবং তার এই মূল্যবোধ যেন নতুন প্রজন্ম ধারণ করে সেই লক্ষ্যে কাজ করা।

আমাদের উচিত খান বাহাদুর আহ‌্ছানউল্লা’র জীবন দর্শন ও অবদান সব মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া। আমাদের নতুন প্রজন্ম রোল মডেল খুঁজে পায় না। কিন্তু তিনি একজন রোল মডেল হিসেবে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।

রাশেদা কে চৌধূরী ।। নির্বাহী পরিচালক, গণসাক্ষরতা অভিযান