বিশ্বের এভিয়েশন সেক্টর করোনা মহামারির সময়ে চরম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। গত বছর মার্চ মাস থেকে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য বেশ কিছু নিয়মাবলী সম্বলিত প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রতিবারই সময় এবং অবস্থা বিবেচনায় কিছু কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পরিবর্তনের বিষয়গুলো এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে পরিপালন করতে হয়। কোনো কারণে এয়ারলাইন্সগুলো পরিপালনে ব্যর্থ হলে জরিমানাও গুণতে হয়েছে কয়েকবার। যাদের জন্য প্রজ্ঞাপনের অধিকাংশ বিষয়গুলো প্রযোজ্য তারা হচ্ছেন এয়ারলাইন্সের যাত্রী। বারবার সংশোধনী থাকার কারণে যাত্রীরাও সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন।

সময়কে প্রাধান্য না দিয়ে হঠাৎ করে কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত নিলে বেশ কিছু জটিলতায় পড়তে হয় এয়ারলাইন্স ও যাত্রীদের। সিদ্ধান্তগুলো যদি ফ্লাইট অপারেশনে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত হয় তাহলে জটিলতা বেশি তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের হঠাৎ নিষেধাজ্ঞায় ভিসা জটিলতায় পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে, চাকরি হারানোর সম্ভাবনা, টিকেট পরিবর্তনে অধিক অর্থ ব্যয়, চিকিৎসার জন্য ভ্রমনেচ্ছু যাত্রীদের ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল, মুমূর্ষু রোগীদের জীবনহানীর আশঙ্কা, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটা, পর্যটকদের হোটেল বুকিং বাতিল ইত্যাদি পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।

আবার এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে যাত্রীদের কাছে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে হয়, ফ্লাইট পরিচালনা না করেও অ্যারোনটিক্যাল ও নন- অ্যারোনটিক্যাল চার্জ প্রদান করতে হয়, এয়ারক্রাফটের জন্য ব্যাংক ঋণের অর্থ, লিজিং মানি, ইনস্যুরেন্সের কিস্তি, প্রশাসনিক খরচ, মানব সম্পদের জন্য বেতন-ভাতা, ইউটিলিটি খরচ ইত্যাদি খরচগুলো বহন করতে হয়।

করোনাকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক রুট চালু কিংবা বন্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত দ্রুত গতিতে নিলে নানাবিধ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় এয়ারলাইন্সগুলোকে। দ্বিপাক্ষিক এয়ারসার্ভিস এগ্রিমেন্টের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে ল্যান্ডিং পারমিশন, ওভার ফ্লাইং পারমিশন, ট্রাভেল এজেন্সির সরব উপস্থিতি, কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট সংগ্রহ, বিভিন্ন দেশের শর্তানুযায়ী যাত্রীদের হোটেল বুকিং, আগমনী যাত্রীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন অথবা হোটেল কোয়ারেন্টাইন, হোম কোয়ারেন্টাইন ইত্যাদি নানাবিধ দিক বিবেচনা করতে হয়।

ফ্লাইট পরিচালনা না করেও অ্যারোনটিক্যাল ও নন- অ্যারোনটিক্যাল চার্জ প্রদান করতে হয়, এয়ারক্রাফটের জন্য ব্যাংক ঋণের অর্থ, লিজিং মানি, ইনস্যুরেন্সের কিস্তি, প্রশাসনিক খরচ, মানব সম্পদের জন্য বেতন-ভাতা, ইউটিলিটি খরচ ইত্যাদি খরচগুলো বহন করতে হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশে লকডাউন অবস্থা বিরাজ করছে। সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ। ব্যাংকিং ব্যবস্থা আংশিক চালু, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ। অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ, শুধু মাত্র ঢাকা থেকে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক কয়েকটি দেশে বিশেষ ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি রয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও যারা বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা করছে, তাদেরকে ভয়ানক ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

পরিবহন স্বল্পতার মধ্যে অধিক খরচ করে বিকল্প উপায়ে ঢাকায় পৌঁছানো, আবার নির্দিষ্ট সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর জানতে পারা যায় যে, ফ্লাইট বাতিল। এ খবর অনেকটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো। মুহূর্তের মধ্যেই নানা অনিশ্চয়তার গল্প চোখের সামনে ভেসে উঠে। দিগ্বিদিক শূন্যতায় ভরে উঠে। এ সকল অনিশ্চয়তা থেকে সহজেই প্রবাসী শ্রমিকদের এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ সহজেই নিস্তার দিতে পারে যদি সঠিক পরিকল্পনা আর যাত্রীদের প্রতি কমিটমেন্টের কথা বিবেচনা করার মাধ্যমে।

করোনাকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক রুট চালু কিংবা বন্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত দ্রুত গতিতে নিলে নানাবিধ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় এয়ারলাইন্সগুলোকে। ...আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে ল্যান্ডিং পারমিশন, ওভার ফ্লাইং পারমিশন, ট্রাভেল এজেন্সির সরব উপস্থিতি, কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট সংগ্রহ, বিভিন্ন দেশের শর্তানুযায়ী যাত্রীদের হোটেল বুকিং, আগমনী যাত্রীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন অথবা হোটেল কোয়ারেন্টাইন, হোম কোয়ারেন্টাইন ইত্যাদি নানাবিধ দিক বিবেচনা করতে হয়।

একটি প্রজ্ঞাপনে ফ্লাইট পরিচালনা মুহূর্তের মধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া যায় কিন্তু একটি প্রজ্ঞাপনে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করা যায় না। আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করার জন্য নির্দিষ্ট দেশের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি থেকে অনুমতি সাপেক্ষে নির্দিষ্ট বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে ল্যান্ডিং পারমিশন, যে সকল দেশের উপর দিয়ে ফ্লাই করবে সে সকল দেশের থেকে ওভার ফ্লাইং পারমিশন নিতে হবে।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে যাত্রী সংকটের কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে পরিবহন খরচের কথা পরিকল্পনায় রাখতে হবে। বাস্তবতার নিরিখে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা সাজালে ফ্লাইট বাতিল হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে না। যাত্রীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হবে না।

অস্থির সময়ে স্থির থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই সঠিক পরিকল্পনার অংশ বলেই বিবেচিত হয়। সবশেষে বলা যায়, এভিয়েশনে সিদ্ধান্তহীনতা অবিশ্বাসের জন্ম দেয়, যাত্রী ও এয়ারলাইন্সের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।

মো. কামরুল ইসলাম ।। মহাব্যবস্থাপক- জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স