ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) সম্প্রতি কিছু শর্তের ভিত্তিতে বিবাহ নিবন্ধনের জন্য কর ধার্য করার নীতি বাস্তবায়ন করেছে। যেমন প্রথম বা স্ত্রীর মৃত্যুর পর বিয়ে করার ক্ষেত্রে কর হবে ১০০ টাকা, প্রথম স্ত্রীর অনুমতিতে দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকা, দুই স্ত্রীর অনুমতিতে তৃতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকা এবং একইভাবে চতুর্থ বিয়ের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা কর ধার্য করা হয়েছে।

তবে স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন বা বন্ধ্যা হলে উক্ত শর্ত প্রযোজ্য নয় তবে বিয়ে করতে গেলে লাগবে ২০০ টাকা। উল্লেখ্য, এই নীতি শুধুমাত্র ঢাকা দক্ষিণ এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জন্য প্রযোজ্য, সম্পূর্ণ বাংলাদেশে নয়।

ডিএসসিসি-এর লক্ষ্য হলো ‘পৌর কর বিধিমালার’ ধারা ৫০ এবং ‘সিটি কর্পোরেশন আদর্শ কর তফসিল, ২০১৬’-এর ধারা ১০(৪) এ বর্ণিত বিধানগুলো ব্যবহার করে এই করগুলো কার্যকর করা।

তবে ডিএসসিসি কীভাবে এই নতুন নীতি সাফল্যের সঙ্গে কার্যকর করতে চায় তা নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে, যেহেতু বাংলাদেশে বিবাহ নিবন্ধন পদ্ধতি সম্পূর্ণ কাগজ ভিত্তিক এবং কোনো রকম তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট বা সফটওয়্যার দ্বারা পরিচালিত, নিয়ন্ত্রিত বা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। তাই প্রশ্ন থেকেই যায় যদি কেউ একাধিক বিয়ে করে এবং কর ফাঁকি দেয় সেইক্ষেত্রে ডিএসসিসির করণীয় কি এবং নিয়ম লঙ্ঘনের শাস্তি বা জরিমানা আরোপ কীভাবে করা হবে?

‘মুসলিম বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদ (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪’ এর ধারা ৩ এর অধীনে নিকাহ রেজিস্ট্রার দ্বারা সব মুসলিম বিবাহ নিবন্ধন করা বাধ্যতামুলক। যদি রেজিস্ট্রার ব্যতীত অন্য কারও দ্বারা বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়, সেইক্ষেত্রে বিবাহ নিবন্ধিত হওয়ার জন্য ৩০ দিনের মধ্যে নিবন্ধকের কাছে রিপোর্ট করতে হবে। এই ধারার কোনো বিধান লঙ্ঘন আইনত অপরাধ এবং তিনি সাধারণ কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন যা দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে বা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

প্রত্যেক রেজিস্ট্রার বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদের পৃথক রেজিস্টার বজায় রাখবেন। যেকোনো ব্যক্তি, নির্ধারিত ফি প্রদান করে, যদি থাকে, নিকাহ রেজিস্ট্রার বা নিবন্ধকের অফিসে রক্ষিত যেকোনো রেজিস্টার পরিদর্শন করতে পারেন বা সেইখানে যেকোনো প্রবেশপত্রের একটি অনুলিপি পেতে পারেন।

বাংলাদেশের নাগরিক যারা মুসলিম নন, তাদের বিবাহ ‘বিশেষ বিবাহ আইন, ১৮৭২’ এর অধীনে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই আইনের ধারা ১১ তে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন এর বিষয় বলা আছে যে, রেজিস্ট্রার এবং ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরকারী তিনজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিবাহটি সম্পন্ন করতে পারবেন।

এটি যেকোনো রূপে গৃহীত হতে পারে, তবে শর্ত থাকে যে প্রতিটি পক্ষ অন্যকে বলে, রেজিস্ট্রার এবং সাক্ষীদের উপস্থিতিতে এবং শুনানিতে, “আমি ‘ক’, ‘খ’-কে আমার বৈধ স্ত্রী বা স্বামী হিসেবে গ্রহণ করি” এবং ধারা ৩ অনুসারে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলে, রেজিস্ট্রার সেই উদ্দেশ্যে একটি বইয়ে তার একটি সার্টিফিকেট দেবেন যা বিবাহের পক্ষ এবং তিনজন সাক্ষীর দ্বারা স্বাক্ষরিত হবে।

ডিএসসিসি’র নিয়ম অনুযায়ী সব ধর্মের মানুষ যারা অত্র অধিক্ষেত্রে বসবাসরত আছেন সবার ক্ষেত্রে সমান ভাবে এই নতুন নীতি বর্তায়। উল্লেখ্য, বিশেষ বিবাহ আইনের ধারা ১৫ এবং ১৬ মতে এটি একটি পরস্পরবিরোধী বিধান। যেখানে বলা আছে, যদি কোনো বিবাহিত ব্যক্তি তার স্ত্রী বা স্বামীর জীবদ্দশায় পুনরায় বিবাহ করেন তবে তিনি দণ্ডবিধির ধারা ৪৯৪ এবং ৪৯৫ এর অধীনে একটি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য করা হবে এবং উক্ত বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে।

উপরোক্ত আইন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিবাহ নিবন্ধন এখনো একটি সম্পূর্ণ কাগজ-ভিত্তিক প্রক্রিয়া এবং ডিজিটালাইজড না হওয়ার কারণে বিবাহ নিবন্ধনের স্তর বা অসঙ্গতিগুলোর কোনো কেন্দ্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি নেই। একটি সমন্বিত সিস্টেমের অংশ হিসেবে অবহিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার্থে বিবাহ নিবন্ধন ডেটা ব্যবহার করা হয় না এবং করার সহজ কোনো উপায়ও নেই।

উপরন্তু, বিবাহ নিবন্ধন প্রক্রিয়া এবং নিবন্ধনের মান এবং অনুশীলন ধর্ম থেকে ধর্মে পরিবর্তিত হয়। বিবাহ নিবন্ধনকারীরা সরকারি কর্মচারী নন বিধায় তাদের বিবাহ নিবন্ধন করার জন্য সামান্য জবাবদিহিতা এবং অনুপ্রেরণা নেই।

নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা সম্পূর্ণই স্বেচ্ছাধীন যার কারণে বাংলাদেশে অগণিত বিবাহ এখনো অনিবন্ধিত। তাই ডিএসসিসির এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে অনেক পূর্বশর্ত এবং আরও অনেক ধাপ সংশোধন করা বাকি রয়ে গেছে।

মো. মাহমুদুল ইসলাম শাকিল ।। শিক্ষানবিশ আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট