কোভিড-১৯ এর এই মহামারির সময়ে সবকিছুই কেমন জানি এলোমেলো হয়ে গেছে। স্বাস্থ্যের কথাই বলেন, দৈনন্দিন জীবন ধারণের কথাই বলেন বা শিক্ষার কথাই বলেন সবখানেই আমরা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। সব চ্যালেঞ্জ একই সময়ে আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

সন্তানের জীবন বাঁচাতে রিকশা করে শত কিলোমিটার পথ অতিক্রম করা; বিভিন্ন হাসপাতালের দরজাই ঘুরে সন্তান বাবাকে ভর্তি করতে না পারা; কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে কিছুক্ষণ ভেন্টিলেটরে থেকে মৃত্যুবরণ করা; এই হচ্ছে আজকের স্বাস্থ্যের অবস্থা। এ অবস্থা আগে কখনো দেখিনি তা কিন্তু নয়। আগে এসব ঘটনা বিচ্ছিন্নভাবে ঘটছিল। এখন সবকিছুই দ্রুত গতিতে আবির্ভূত হচ্ছে। তাইতো এগুলোকে সামাল দেওয়ার জন্য দরকার সব ধরনের চেষ্টা করা।

চেষ্টা শুধু ডাক্তার দেখানো, ইনজেকশন নেওয়া, ক্যাপসুল খাওয়ানোতেই সারবে না। এর মানেই চিকিৎসা নয়। প্রত্যেক বিষয়েই প্রতিরোধ এবং ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আগে অনেক ভাবে চেষ্টা করতে হবে। ধরা যাক, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে জ্বর, কাশি, সর্দি, উপসর্গগুলো দেখা দিলেই প্রতিরোধের সব চেষ্টাই তখন আমরা ভুলে যায়।

কোভিড-১৯ এর টিকা ছাড়া অন্য ওষুধ দিয়ে এটাকে দমন করা যাবে না। তাই তো প্রাথমিকভাবে যত রকমের প্রতিরোধের ব্যবস্থা আছে সেগুলোর প্রতি বিশেষভাবে নজর দেওয়া উচিত। স্বাভাবিক খাবার খাওয়া, গরম পানি দিয়ে গার্গল করা, গরম পানি থেকে বাষ্প নেওয়া, ব্রিদিং এক্সারসাইজ করা জরুরি। এগুলো করতে আমরা যেন ভুলে না যায়।

মানসিকভাবে আমরা স্থির থেকে নিজের মধ্যে শক্তি সঞ্চয় করে, ফুসফুসের ব্যায়াম বা যেটাকে ব্রিদিং এক্সারসাইজ বলে তা করার কোনো রকম চেষ্টা করি না। কেউ কেউ হয়তো করেন, কিন্তু এই চেষ্টার উপরে কোনো বিশ্বাস নেই। যার ফলে হাসপাতালে যাওয়ার একটা চিন্তা মাথার মধ্যে চলে আসে।

এই কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য ৩টি স্বাস্থনীতি হলো মৌলিক। যার মধ্যে মাস্ক পরা ১০০% আবশ্যক। এই বিষয়ে জোরালো ভূমিকা রাখা দরকার ছিল, যা আমরা পারছি না!
এই মহামারির সময়ে স্বাস্থ্যের পরপরই আমাদের খাদ্যের সমস্যা একটা প্রকট আকার ধারণ করেছে। নিম্নবিত্ত লোকজনের মধ্যে অনেকের চাকরি নেই; দিনমজুরের দৈনন্দিন খেটে খাওয়ার সংস্থান নাই; তারপরেও তো খাদ্য পেতেই হবে। এই বিষয়েও আমাদের এই সংকটের উত্তরণের জন্য চেষ্টা করতে হবে।

৩৬ লাখ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। এটা বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন, নাগরিক সমাজের নেতৃস্থানীয় লোকজনের এই ব্যাপারে নিজে থেকেই উদ্যোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই অঙ্গীকারকে বাস্তবায়ন করার জন্য সাহায্য করতে হবে। এরই পাশাপাশি বিত্তবানদের সহায়তায় এই গরিব মানুষদের খাবারের জোগান দেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। এইসব দিকগুলোর বিষয়ে আমরা যারা সচেতন তাদেরকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।

এই কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য ৩টি স্বাস্থনীতি হলো মৌলিক। যার মধ্যে মাস্ক পরা ১০০% আবশ্যক। এই বিষয়ে জোরালো ভূমিকা রাখা দরকার ছিল, যা আমরা পারছি না!

স্বাস্থ্য ও খাদ্যের সঙ্গে যোগ হয়েছে মানসিক বিপর্যয়। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এখনো আমরা পারিবারিকভাবে একজন আরেকজনের সাথে সম্পর্কিত কিন্তু এখন আমরা একান্নবর্তী পরিবার থেকে দূরে সরে যাচ্ছি এবং মানসিক সাহায্য পাওয়ার কোনো জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না। এই ব্যাপারেও আমাদেরকে ভিন্ন উপায় বের করে মানসিকভাবে সমাজ ও ব্যক্তিবর্গদেরকে ঠিক রাখার জন্য চেষ্টা করতে হবে।

আজকের পৃথিবীতে টেলিমেডিসিন; মুঠোফোনে বার্তা প্রেরণ; ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের লোকজনদের সাথে কথা বলা; এর সবকিছুর মাধ্যমে মানসিক বিপর্যয় ঠেকানোর চেষ্টা করতে হবে। এই চেষ্টা থামানো যাবে না।

ডা. আবু জামিল ফয়সাল ।। জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ