১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের হাজার বছরের নিজ বাসভূমি থেকে বিতাড়িত করে। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য অস্থিতিশীল, সংঘাত ও সংকটে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। পর্যায়ক্রমে ইসরায়েল রাষ্ট্রটি যুদ্ধ এবং শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে টিকে থাকার চেষ্টা করে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ এবং ভয়াবহ।

১৯৪৮ থেকে বর্তমান ইসরায়েলি আক্রমণ পর্যন্ত প্রতিটি যুদ্ধে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার পরিচয় দেয়। ১৯৬৭ সালের ইসরায়েলের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে দেশটি পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, মিসরের সিনাই, সিরিয়ার গোলানভূমি ও জর্ডানের ভূমিসহ ব্যাপক এলাকা দখল করে। ফলে ফিলিস্তিনি জনগণ ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম গণহত্যার শিকার হয়।

লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি আশ্রয় গ্রহণ করে শরণার্থী শিবিরে। ইসরায়েলের এই ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার পেছনে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতা একটি বড় ভূমিকা পালন করে। ইসরায়েলের আত্মরক্ষার নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের চরম নিষ্ঠুরতাকে বারবার প্রশ্রয় দিয়েছে।

১৯৪৮ থেকে বর্তমান ইসরায়েলি আক্রমণ পর্যন্ত প্রতিটি যুদ্ধে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার পরিচয় দেয়। ১৯৬৭ সালের ইসরায়েলের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে দেশটি পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, মিসরের সিনাই, সিরিয়ার গোলানভূমি ও জর্ডানের ভূমিসহ ব্যাপক এলাকা দখল করে। ফলে ফিলিস্তিনি জনগণ ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম গণহত্যার শিকার হয়।

গত প্রায় দুই দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র যেমন ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ার ব্যাপক পতন, আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ইরান, সৌদি আরব ও তুরস্কের পারস্পরিক বৈরিতা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতি ইসরায়েল তথা নেতানিয়াহু সরকারের ফিলিস্তিন বিরোধী আগ্রাসনকে বহুমাত্রায় বাড়িয়ে দিয়েছে।

তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের মাধ্যমে নেতানিয়াহু সরকারকে রীতিমত ভয়াবহভাবে উসকে দিয়েছে।ফলশ্রুতিতে মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটনের মধ্যস্থতায় ‘ভূমির বিনিময়ে শান্তি’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ইসরায়েল প্রতিমুহূর্তে লঙ্ঘন করে আসছে।

প্রায় তিন দশক ধরে ইসরায়েল এবং দেশটির মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তার হাস্যকর যুক্তিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রস্তাবটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আটকে রেখেছে। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি জনগণের উপর যেকোনো অজুহাতে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে আসছে।

নিষ্ঠুরতার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করে দেশটি রমজান মাসে পবিত্র আল-আকসা মসজিদে আক্রমণ করে। বিতাড়িত করে জেরুজালেমের শেখ জারা এলাকা থেকে ফিলিস্তিন পরিবারসমূহকে।

হামাস এবং সাধারণ ফিলিস্তিনি জনগণ যখন প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ শুরু করে, তখনই শুরু হয় ইসরায়েলের নিষ্ঠুরতম হামলা। এখন পর্যন্ত আনুমানিক ২১৯ ফিলিস্তিন নাগরিককে হত্যা করা হয় যার মধ্যে রয়েছে ৬৩ জন শিশু। শিশু ও নারীসহ নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক বোমাবর্ষণ ও আকাশপথ আক্রমণের মাধ্যমে গাজা নগরীকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ব সম্প্রদায়, বিশ্ব মানবতা কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছে।

ইসরায়েলের এই ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার পেছনে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতা একটি বড় ভূমিকা পালন করে।

গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ধ্বজাধারী বৃহৎ রাষ্ট্রসমূহের নীরবতা ও নখদন্তহীন প্রতিক্রিয়া ইসরায়েলকে করেছে উৎসাহিত। মুসলিম দেশ ও সংস্থাগুলোর আচরণ দুর্বল ও আত্মসমর্পণমূলক। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মার্কিন জোটের ভয়ে সম্পূর্ণ কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। রাজনৈতিক শক্তির অসহায় শিকার ফিলিস্তিনি জনগণ।

এ প্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি ন্যূনতম ন্যায় বিচার প্রদর্শন করতে হলে অবিলম্বে নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। নেতানিয়াহুর দুর্নীতি ও রাজনৈতিক সংকটকে সামনে রেখে ফিলিস্তিনি অসহায় মানুষকে নিষ্ঠুর হামলার মাধ্যমে রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। অবিলম্বে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি প্রদান ব্যতীত এই নরহত্যার সমাধান নেই। দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আর পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। লন্ডন থেকে জাকার্তা সমগ্র বিশ্বে প্রতিবাদের লেলিহান শিখা জ্বলে উঠছে। যুবক সম্প্রদায় ও নাগরিক সমাজের ব্যাপক প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বৃহৎ শক্তির বিবেককে কাঠগড়ায় দাঁড় করছে।

বাংলাদেশের মতো দ্ব্যর্থহীন ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্বের সকল রাষ্ট্র ও জনগণকে এক মঞ্চে আসতে হবে। তবেই মানবতার দান থেকে মুক্তি পাবে ফিলিস্তিনি জনগণ।

ড. দেলোয়ার হোসেন ।। অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ ও পরিচালক, দ্যা ইস্ট এশিয়া স্টাডি সেন্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়