সার্স-কোভ-২সহ সকল ভাইরাস যখন রেপলিকেটেড হয় তখন কোথাও না কোথাও তার পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তন হওয়াকে বলে ‘মিউটেশন’। আবার এটার যখন এক বা একাধিক মিউটেশন হয়, তখন তাকে বলা হয় মূল ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট।

সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের ই৪৮৪ ও এল৪৫২ স্থানে মিউটেশনের ফলে যে ভ্যারিয়েন্টটা তৈরি হলো সেটার নাম বি.১.১৬৭, যা ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনেতে প্রথম চিহ্নিত হয়েছিল। এটাকেই বলা হচ্ছে ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ বা ‘ডাবল মিউটেড’ (বি.১.১৬৭.২) যা দেশটির সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে বলে প্রমাণিত হয়েছে।

স্বভাবতই এই ভ্যারিয়েন্টটির আগের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টগুলো থেকে সংক্রমিত করার ক্ষমতা অনেক বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের যে দ্বিতীয় ঢেউ চলছে, যেখানে এই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের মাধ্যমে এখানকার রোগীদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল এবং আছে।

সরকারের কিছু বলিষ্ঠ পদক্ষেপে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের মাধ্যমে বেশিসংখ্যক রোগীদের মধ্যে এখনো এটি এত ছড়াতে পারেনি। তারপরেও জানা গেছে কিছু মানুষ যারা এই মহামারির মধ্যে ভারতে বিভিন্ন কাজে গিয়েছিল, স্থলবন্দর দিয়ে ফেরার সময় নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে নিজেদের সংক্রমণের তথ্য লুকিয়ে পরিবারের সাথে মিশেছে ও পরিবেশে ঘোরাফেরা করেছে।

কালো ছত্রাক বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসটি হলো ‘মিউকরমাইকোসিস’ জাতীয় সংক্রমণ, যা ‘মিউকর মোল্ড’-এর ফলে হয়ে থাকে। এই মোল্ডটি মাটি, গাছপাতা, গোবর এবং পচনশীল ফল ও শাক-সবজিতে পাওয়া যায়।

মনে করা হয়, এরকমই কয়েকজনের মধ্যে একজন ভারত ফেরত রোগী ঢাকার কোনো এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। আবার কিছু কিছু রোগী পুলিশ তত্ত্বাবধানে ১৪দিনের কোয়ারেন্টাইন থাকার সময় পালিয়ে গেছে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আবার তাদেরকে ধরে এনে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

সব মিলিয়ে ভারতে যেভাবে এই ভ্যারিয়েন্টটি সংক্রমিত হচ্ছে ও দিন দিন মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে, আইইডিসিআর কর্তৃক এটি বাংলাদেশে চিহ্নিত হলেও এখনো তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। সেজন্য ভারতের সাথে সবধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নসহ সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপে ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সার্বিক সহায়তায় সেটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। তবে তা ছড়ানো নিয়েও শঙ্কা আছে।

আমরা যারা চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে জড়িত আছি, তারাসহ অনেকেই জানেন যে, মানবদেহে কোনো ধরনের সংক্রমণ হলে তার ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে সুবিধাবাদী জীবাণুগুলো যেমন ভাইরাস সংক্রমণ হলে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক/ফাঙ্গাস মানবদেহে সংক্রমণ ঘটায় বা ব্যাকটেরিয়া হলে ভাইরাস ও ছত্রাক বা ছত্রাক হলে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস।

তাই আমরা দেখি প্রতিটি কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগী নিউমোনিয়ায় ভোগে, যা একধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ। আর সেখানে ছত্রাক/ফাঙ্গাসের মাধ্যমেও সংক্রমিত হতে পারে।

কালো ছত্রাক বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণের ফলে রোগীর নাক বন্ধ হওয়া, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, নাকের চারপাশে কালচে ভাব হয়ে যাওয়া, বুকে ব্যথা, শ্বাস কষ্ট হওয়া, কাশিতে রক্ত পড়া, চোখ ফোলা, চোখে ব্যথা, ঝাপসা দেখা এবং অবশেষে অন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ভারতে এরকমই ঘটনা ঘটেছে বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের ধারণা। সেখানে একধরনের কালো ছত্রাক বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এই সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। এই কালো ছত্রাক বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসটি হলো ‘মিউকরমাইকোসিস’ জাতীয় সংক্রমণ, যা ‘মিউকর মোল্ড’-এর ফলে হয়ে থাকে। এই মোল্ডটি মাটি, গাছপাতা, গোবর এবং পচনশীল ফল ও শাক-সবজিতে পাওয়া যায়।

কালো ছত্রাক বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণের ফলে রোগীর নাক বন্ধ হওয়া, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, নাকের চারপাশে কালচে ভাব হয়ে যাওয়া, বুকে ব্যথা, শ্বাস কষ্ট হওয়া, কাশিতে রক্ত পড়া, চোখ ফোলা, চোখে ব্যথা, ঝাপসা দেখা এবং অবশেষে অন্ধ হয়ে যেতে পারে।

যাদের এধরনের লক্ষণ থাকবে তারা যদি দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তাহলে এই কালো ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
তথ্যসূত্রে জানা যায় যে, ভারতে যে সকল রোগী দেরিতে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন তাদের অস্ত্রোপচার করে চোখ ফেলে দিতে হচ্ছে এবং কখনো কখনো মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে কালো ছত্রাক বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপসর্গ নিয়ে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে তিনজন শনাক্ত হয়েছে এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে।

তবে এই কালো ছত্রাক বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে কার্যকর শিরায় প্রয়োগকৃত কিছু এ্যান্টিফাংগাল ড্রাগ রয়েছে, যেটা প্রয়োগ করে এই সংক্রমণ নিরাময় করা সম্ভব। সেজন্য আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। কোনো রকম অবহেলা করা যাবে না। অবহেলা করলে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হবে।

অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার ।। ফার্মেসি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়