আপনারা কয়েকজন বন্ধু মিলে সবাই বহুদিন পর এক সাথে মিলিত হওয়ার জন্য পরিকল্পনা করলেন। বহুদিন সবার সাথে অনেকের দেখা হয় না। অনেকটা পুনর্মিলনীর মতো। বন্ধুদের মধ্যে বিভিন্ন জন বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন। বন্ধুদের মধ্যে অনেক পেশার সাথে এয়ারলাইন্সের এক্সিকিউটিভও আছেন। দিন, তারিখ, সময়, স্থান সব ঠিক করে মিলিত হওয়ার দিন গণনা করতে থাকলেন।

অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ চলে আসলো। আপনাদের সবার ফোন নম্বর কিন্তু সবার কাছে রাখা আছে পূর্ব থেকেই। সময় যত ঘনিয়ে আসছে সবার সাথে সবার যোগাযোগ বেড়ে যাচ্ছে। এখন ডিজিটাল যুগ। কেউ মোবাইলে ফোন করছে, কেউ এসএমএস করছে, কেউ হোয়াটস অ্যাপে আবার কেউ ম্যাসেঞ্জারে কল করছে। সবাই সবার অবস্থান জানতে চাইছে। কখন সবার সাথে সবার দেখা হবে সেই অপেক্ষায়।

যেকোনো কিছুর জন্যই সবাই উল্লেখিত বন্ধুকেই জিজ্ঞেস করছে, তুমি কি পৌঁছেছো,  কে কে আসছে, আর কে কে এখনো আসেনি, আজকের প্রোগ্রামে কি কি থাকছে, খাবারের কি আয়োজন, কত জন আসছে ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে যাচ্ছে।

এয়ারলাইন্স বিজনেসের মূল ভিতই হচ্ছে সেবা। বর্তমানে সরকারি- বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে সার্ভিস কম্পিটিশন। নতুন নতুন এয়ারক্রাফট, নতুন নতুন র‌্যাম্প কোচ প্রতিনিয়ত যোগ করে চলেছে এয়ারলাইন্সগুলো।

তিনি নির্বিকার থেকে হাসিমুখে সবার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। তিনি আর কেউ নন, সেই বন্ধু মহলের মধ্যে এভিয়েশন কর্মী হিসেবে যিনি পরিচিত।

চাকরি জীবনের সময়ানুবর্তিতা যেন পুরোপুরি ব্যক্তিজীবনেও প্রভাব পড়েছে। বন্ধুটি অন-টাইমে ফ্লাইট পরিচালনা করতে গিয়ে সারাজীবনই নিয়মানুবর্তিতার মধ্যেই পরিচালিত হয়েছে। সেই বন্ধুর কাছে টাইম মিনস বিফোর টাইম। ছোট একটা ঘটনার মাধ্যমে সময় সচেতনতার বিষয়ে ফ্লাইটের টাইম নিয়ে নিম্নোক্ত বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

আপনাদের ফ্লাইট কি অন-টাইমে ছাড়ে, নাকি দেরি করে? বর্তমানে দেশীয় এয়ারলাইন্স এর ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন অনেকটা নেই বললেই চলে। এয়ারলাইন্স এর যাত্রীদের প্রধান ও প্রথম চাহিদা হচ্ছে ফ্লাইটটি যেন অন-টাইমে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

এয়ারলাইন্স বিজনেসের মূল ভিতই হচ্ছে সেবা। বর্তমানে সরকারি- বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে সার্ভিস কম্পিটিশন। নতুন নতুন এয়ারক্রাফট, নতুন নতুন র‌্যাম্প কোচ প্রতিনিয়ত যোগ করে চলেছে এয়ারলাইন্সগুলো। যাতে করে যাত্রীরা আরামদায়ক সেবা পান। ডোমেস্টিক রুটে ফ্লাইট ছাড়ার পূর্বে স্পেসিফিক নির্দেশনা দেওয়া আছে, যাত্রী যেন এক ঘণ্টা আগে চেক-ইন কাউন্টারে রিপোর্ট করেন। আর ইন্টারন্যাশনাল রুটে রিপোর্ট করেন ফ্লাইট ছাড়ার তিন ঘণ্টা পূর্বে।

একটি ফ্লাইটকে অন-টাইমে ছাড়তে হলে প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্ট এর টাইম পারফরমেন্স হতে হবে অন-টাইম। অন-টাইমে ফ্লাইট ছাড়ার পূর্বশর্তই হলো সব ডিপার্টমেন্ট এর কার্যক্রম শেষ করতে হবে বিফোর টাইমে। আপনার প্রশ্ন জাগতে পারে বিফোর টাইম কি করে সম্ভব হবে?

আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাইট ছাড়ার পূর্বেই এয়ারক্রাফট উড্ডয়ন উপযোগী আছে কি না তা চেক-রিচেক করে অপারেশন ডিপার্টমেন্টকে ইনফর্ম করা। প্রায় দুইঘণ্টা পূর্বে ক্যাপ্টেন, ফার্স্ট অফিসার, ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার, কেবিন ক্রু এয়ারক্রাফটে রিপোর্ট করেন।

এয়ারক্রাফটে রিফুয়েলিং, ক্লিনিং ও সিকিউরিটি চেক শেষ করে আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ফ্লাইট ক্যাপ্টেন ঘন্টাখানেক আগেই সমস্ত কিছু বুঝে নিয়ে কার্গো ও ক্যাটারিং আপলোডিং এর অনুমতি প্রদান করেন। পরক্ষণেই ক্যাপ্টেন ইন কমান্ড যিনি থাকেন কাস্টমার সার্ভিস অথবা গ্রাউন্ড সার্ভিস ডিপার্টমেন্টকে এয়ারক্রাফটে যাত্রী আরোহণের অনুমতি প্রদান। অন-টাইমে ফ্লাইট ছাড়ার জন্য প্রত্যেকটি কাজের সাথেই ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্টের সংযুক্তি রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই ট্রান্সপোর্ট রেডি থাকা খুবই জরুরি নতুবা সব পরিকল্পনাই ভেস্তে যেতে পারে।

একটি ফ্লাইটকে অন-টাইমে ছাড়তে হলে প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্ট এর টাইম পারফরমেন্স হতে হবে অন-টাইম। অন-টাইমে ফ্লাইট ছাড়ার পূর্বশর্তই হলো সব ডিপার্টমেন্ট এর কার্যক্রম শেষ করতে হবে বিফোর টাইমে।

অন-টাইমে ফ্লাইট ছাড়ার জন্য ফ্রন্ট অফিস, ব্যাক অফিসসহ সব অফিসকেই নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই কার্যক্রম শুরু করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অফিস টাইম যদি হয় ৯-৫টা হয় তাহলে আপনাকে অফিসে উপস্থিত থাকতে হবে ৯টার পূর্বেই। কাজ শুরু হবে সকাল ৯টায়। তেমনি যাত্রীদের ক্ষেত্রে, অন-টাইমে ফ্লাইট ছাড়তে পারবে তখনই যখন আপনারা নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই বিমানবন্দর চেক-ইন কাউন্টারে রিপোর্ট করতে পারবেন। বেশকিছু ফরমালিটিজ পালন করেই এয়ারক্রাফটে আরোহণ করা হয়। ডোমেস্টিক এর চেয়ে ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটে ফরমালিটিজ কিছুটা বেশি। এয়ারলাইন্স ছাড়াও বিমানবন্দরে অন্য এজেন্সিগুলো জড়িত থাকে। সেখানে আরও বেশি সময় ক্ষেপণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে আপনার বিমানবন্দরের উপস্থিতি থাকবে টিকেটে নির্দেশিত সময় অনুযায়ী।

এওজি- এয়ারক্রাফট অন গ্রাউন্ডেড। একটি এয়ারক্রাফট টেকনিক্যাল ত্রুটির জন্য গ্রাউন্ডেড হতে পারে যেকোনো সময়। ইঞ্জিনিয়ারিং স্টোরে যদি নির্দিষ্ট পার্টস না থাকে তবে জরুরি ভিত্তিতে বিশ্বের যেকোনো অঞ্চল থেকেই তা সংগ্রহ করে ন্যূনতম সময়ে তা এয়ারক্রাফটে সংযুক্তি করতে হবে। নতুবা কমার্শিয়ালি অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদিও স্বাভাবিক সময়ের থেকে প্রায় তিনগুণ বেশি খরচ করেই পার্টসটি সংগ্রহ করতে হয়। যত না কমার্শিয়াল তার চেয়ে বেশি সুনাম নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঠিক সময়ে এয়ারক্রাফটে পার্টস সংযুক্তি না ঘটালে অন-টাইমে ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। এয়ারলাইন্সের সুনাম সর্বোপরি নির্ভরতাই হচ্ছে টাইম পারফরমেন্স। আর টাইম পারফরমেন্সই হচ্ছে অন-টাইম পারফরমেন্স।

এখানে এয়ারলাইন্সকে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। জীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই টাইম পারফরমেন্স নিয়ে একইভাবে পালন করা উচিত।

অন-টাইম পারফরমেন্স বজায় রাখতে হলে মেনে চলতে হবে—টাইম মিনস বিফোর টাইম।

মো. কামরুল ইসলাম ।। মহাব্যবস্থাপক- জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স