ডায়াবেটিস নিয়ে কীভাবে ভালো থাকা যায়?
প্রতিবছর নভেম্বর মাসের ১৪ তারিখে ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’ পালিত হয়। প্রথমে ১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের আহ্বানে দিনটি পালন করা শুরু হয়। পরে ২০০৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাধারণ সভায় বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
২০২৫ সালের দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘ডায়াবেটিস এবং ভালো থাকা’। মূলত ২০২৪, ২০২৫ এবং ২০২৬ এই তিন বছরের জন্য ‘ডায়াবেটিস এবং ভালো থাকা’ বিষয়টিকে প্রতিপাদ্য হিসাবে গ্রহণ করা হয়। ভালো থাকা বলতে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকাকে বোঝানো হয়।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস কেন?
ডায়াবেটিস একটি প্রাচীন রোগ। যিশু খ্রিষ্টের জন্মের চারশো বছর আগে প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসক ‘চরক আচার্য’ ডায়াবেটিস রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা পদ্ধতির বর্ণনা করে গিয়েছেন তার বিখ্যাত ‘চরক সংহিতা’ নামক গ্রন্থে। এরকম একটি প্রাচীন রোগের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার জন্য সাম্প্রতিক কালে বিশ্ব জুড়ে দিবস পালনের দরকার কেন হলো?
বিজ্ঞাপন
সভ্যতার সমান পুরোনো এই রোগটির প্রাদুর্ভাব সভ্যতার অগ্রগতির সাথে ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ১৯৮০ সালে পৃথিবীতে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল ১০৮ মিলিয়ন। সেই সংখ্যা ১৯৯০ সালে বেড়ে হয় ২০০ মিলিয়ন, ২০১৪ সালে হয় ৪২২ মিলিয়ন এবং ২০২২ সালে ৮৩০ মিলিয়ন মানুষ।
১৯৮০ সাল থেকে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। শুধু আক্রান্তের সংখ্যা নয়, ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ২০২১ সালে ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগের কারণে ২ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
আগে ধনী দেশগুলোয় ডায়াবেটিসের প্রকোপ বেশি ছিল। কিন্তু মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় ক্রমান্বয়ে ডায়াবেটিস বেড়ে চলছে। বর্তমানে বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন ১৯৯১ সালে পৃথিবীব্যাপী ডায়াবেটিস দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই পথ ধরেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে আজকের বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস।
ডায়াবেটিস কী?
পৃথিবীতে যে কয়টি রোগের নাম আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই জানে তারমধ্যে ডায়াবেটিস প্রথম দুটোর একটি। ডায়াবেটিস সম্পর্কে জানতে গেলে প্রথমে শরীরের কাজ সম্বন্ধে জানা দরকার। আমরা যেসব খাবার গ্রহণ করি তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ শরীরের ভেতর গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়। গ্লুকোজকে সাধারণ ভাষায় সুগার বলা হয়।
আমাদের পেটের ভেতরে পাকস্থলীর পেছনে লিভারের নিচে অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস নামের একটি অঙ্গ রয়েছে। অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামের একটি হরমোন তৈরি হয়ে রক্তে নিঃসৃত হয়। ইনসুলিনের কাজ হচ্ছে রক্ত থেকে গ্লুকোজ বা সুগার ধরে বেঁধে শরীরের নানাধরনের কোষের ভেতরে প্রবেশ করতে সাহায্য করা।
কোনো কারণে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন তৈরির ক্ষমতা কমে গেলে অথবা ইনসুলিনের গ্লুকোজ ধরার ক্ষমতা হ্রাস পেলে রক্তে সুগারের মাত্রা প্রয়োজনের চেয়ে বেড়ে যায়। রক্তে সুগারের এই আধিক্যকেই ডাক্তারি ভাষায় ডায়াবেটিস বলা হয়। এই শব্দটি ইংরেজি ভাষা থেকে এসেছে।
ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে—গলা শুকিয়ে যাওয়া ও ঘনঘন পিপাসা পাওয়া, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রস্রাবের বেগ আসা, কোনো কারণ ছাড়া শরীরের ওজন কমা, বারবার ক্ষুধা লাগা, ঘুমঘুম ভাব থাকা এবং ক্লান্তি অনুভব করা।
ডায়াবেটিস শব্দটি ব্যবহারের আগে বাংলা অঞ্চলে রোগটিকে বহুমূত্র, মধুমেহ ইত্যাদি বলা হতো। আগেরদিনে প্রস্রাব করা জন্য এখনকার মতো বাথরুমের প্রচলন ছিল না। বেশিরভাগ মানুষ মাটিতে নির্দিষ্ট জায়গায় অথবা যত্রতত্র প্রস্রাব করত। ডায়াবেটিস রোগী মূত্রত্যাগের পর সেই মূত্রের চারপাশে চিনি বা সুগার খাওয়ার লোভে পিঁপড়েরা ভিড় জমাতো। সেসময় এটা দেখেই ডায়াবেটিস শনাক্ত করা হতো।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ কী?
ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে—গলা শুকিয়ে যাওয়া ও ঘনঘন পিপাসা পাওয়া, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রস্রাবের বেগ আসা, কোনো কারণ ছাড়া শরীরের ওজন কমা, বারবার ক্ষুধা লাগা, ঘুমঘুম ভাব থাকা এবং ক্লান্তি অনুভব করা। এসব লক্ষণ না থাকলেও কিন্তু ডায়াবেটিস হতে পারে।
একজন ত্রিশ বা চল্লিশোর্ধ্ব পুরুষ মানুষ কোনো কারণ ছাড়া যৌন অক্ষমতায় আক্রান্ত হচ্ছে—কেবলমাত্র এরকম একটি উপসর্গ নিয়েও চিকিৎসকের কাছে আসতে পারে। আবার একই বয়সের একজন নারী তার যৌনাঙ্গের উপরিভাগে এবং ভেতরাংশে চুলকানি নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসতে পারে। উভয়ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষার পর রোগীর ডায়াবেটিস ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেশি।
ডায়াবেটিস কত ধরনের হয়?
ডায়াবেটিস সাধারণত তিন ধরনের হয়—
১. টাইপ-১ ডায়াবেটিস—এধরনের ডায়াবেটিসকে আগে শিশুকিশোরের ডায়াবেটিস, ইনসুলিন নির্ভরশীল ডায়াবেটিস ইত্যাদি নামে চিহ্নিত করা হতো। মানুষের অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াসের ‘বিটা কোষ’ ইনসুলিন তৈরি করে। আমাদের শরীরের ভেতর একটি প্রতিরক্ষা বাহিনী রয়েছে। ডাক্তারি ভাষায় একে ‘ইমিউন সিস্টেম’ বলা হয়।
কোনো কোনো মানুষের ক্ষেত্রে ইমিউন সিস্টেম ভুল করে অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষকে শত্রু ভেবে বসে এবং সেগুলো ধ্বংস করে দেয়। ফলে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এতে রক্তে সুগার বাড়তে থাকে। এটাই হচ্ছে টাইপ-১ ডায়াবেটিস। কেবলমাত্র ইনসুলিন দিয়ে টাইপ-১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করা হয়।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস—যখন অগ্ন্যাশয় প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করে তখন ইনসুলিন রক্তের সবটুকু সুগারকে ধরে কোষের ভেতরে নিতে পারে না। রক্তে থাকা অতিরিক্ত সুগার ডায়াবেটিস তৈরি করে। আবার যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি হচ্ছে কিন্তু সেগুলোর সামর্থ্য কম থাকায় সুগারকে ধরে কোষের কাজে লাগাতে পারে না। ফলে রক্তে সুগার বেড়ে যায়। এই দুই ধরনের ডায়াবেটিসকে একত্রে টাইপ-২ ডায়াবেটিস বলে। ইনসুলিন এবং মুখে খাওয়ার ওষুধ দিয়ে এ ধরনের ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করা হয়।
আরও পড়ুন
টাইপ-৩ ডায়াবেটিস—গর্ভাবস্থায় কোনো কোনো নারীর ডায়াবেটিস দেখা দেয়। সন্তান জন্মের পর এই ডায়াবেটিস ঠিক হয়ে যায়। তবে এই মা এবং শিশু উভয়ের পরবর্তী জীবনে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এই তিন ধরনের ডায়াবেটিস ছাড়াও আরও অন্তত ৪ ধরনের ডায়াবেটিস রয়েছে। তবে এগুলোয় আক্রান্তের খুব কম বলে আলোচনায় কম আনা হয়।
ডায়াবেটিসের প্রধান প্রধান জটিলতা কী?
ফসল উৎপাদনের জন্য যে জমিতে সার ব্যবহার করা হয় সে জমিতে ফসল বেশি হয়। যে মানুষের শরীরে সুগার বেশি থাকে সে শরীরে রোগের আধিক্য থাকে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস নানাবিধ জটিলতার জন্ম দেয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে—শরীরের নার্ভ বা স্নায়ুকে ধ্বংস করে।
এতে হাত-পাসহ শরীরের নানাস্থানে ব্যথা, ঝিনঝিন বোধ, অবশ বোধ করা ইত্যাদি অনুভব করা, চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে অন্ধ হওয়া, কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গিয়ে কিডনির পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক এবং ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যাওয়া, পায়ে ও শরীরের চামড়ায় প্রদাহজনিত ক্ষত হওয়া, অনেকের পা বা আঙুল কেটে ফেলার মতো অবস্থা তৈরি হওয়া, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, যৌনক্ষমতার মারাত্মক হ্রাস, মানসিক সমস্যা ইত্যাদি।
এছাড়াও আরও অনেক জটিলতা ডায়াবেটিসের কারণে হয়ে থাকে। অনেকে মজা করে বলে ‘আকাশের তারা যত ডায়াবেটিসের জটিলতা তত’।
ডায়াবেটিস হলেই কি মৃত্যু অনিবার্য?
যে ধরনের হোক না কেন, ডায়াবেটিস একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং বহুলাংশে প্রতিরোধযোগ্য রোগ। টাইপ-১ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায় না। কারণ শরীরের ভেতরের দুটি সিস্টেমের ভুল বোঝাবুঝির কারণে এটা হয়। তবে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে ইনসুলিন সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করলে এ ধরনের ডায়াবেটিস পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ডায়াবেটিস চিকিৎসার চারটি মূল স্তম্ভ—
১. গতিশীল কর্মময় জীবনযাপন অর্থাৎ শারীরিক শ্রমকে প্রতিদিনের জীবনযাপনের অংশ করে ফেলা।
২. স্বাস্থ্যকর ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা। এক্ষেত্রে চিকিৎসক খাদ্য সম্পর্কে ধারণা দিয়ে সহযোগিতা করবেন।
৩. প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়মিত গ্রহণ করা।
৪. ব্লাড সুগার পরীক্ষা—চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাঝেমাঝে রক্তের সুগারের মাত্রা পরীক্ষা করে ওষুধের মাত্রার সমন্বয় সাধন করা। এ অংশটি চিকিৎসকের দায়িত্ব। ওষুধ হিসেবে চিকিৎসক মুখে খাওয়ার ওষুধ বা ইনসুলিন অথবা দুটোই দিতে পারেন। একজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী চারটি স্তম্ভ সঠিকভাবে অনুসরণ করলে মানসম্পন্ন একটি কর্মময় পূর্ণ জীবন যাপন করতে পারবেন। এ ধরনের জীবনযাপনকেই বলা হয় ‘ভালো থাকা’।
বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের হার কেমন?
২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীর ডায়াবেটিস পীড়িত প্রথম ১০টি দেশ হচ্ছে—চীন, ভারত, পাকিস্তান, ইউএসএ, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো, বাংলাদেশ, জাপান এবং মিসর। ২০২১ সালে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩.১ মিলিয়ন। এই সংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ডায়াবেটিস আক্রান্ত দেশের তালিকায় ৮ম স্থানে ছিল। কিন্তু বর্তমানে যে হারে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে তাতে ২০৪৫ সালে আমাদের দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ২২.৩ মিলিয়নে পৌঁছাবে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি ধারণা রয়েছে যে, চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খেলে ডায়াবেটিস হয়। বিষয়টি মোটেই তেমন নয়, বরঞ্চ একেবারে উল্টো। চিনি বা মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হয় না তবে ডায়াবেটিস হলে মিষ্টি জাতীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
তখন বাংলাদেশের অবস্থান সাতে উঠে যাবে। বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে আমাদের নীতিনির্ধারকদের জরুরিভিত্তিতে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে সেটা বাস্তবায়নে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। পরিকল্পনা প্রস্তুত এবং বাস্তবায়নে অতি অবশ্যই জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
চিনি খেলে কি ডায়াবেটিস হয়?
সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি ধারণা রয়েছে যে, চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খেলে ডায়াবেটিস হয়। বিষয়টি মোটেই তেমন নয়, বরঞ্চ একেবারে উল্টো। চিনি বা মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হয় না তবে ডায়াবেটিস হলে মিষ্টি জাতীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তবে একটি অবস্থা আছে যার নাম প্রি-ডায়াবেটিস বা আইজিটি (Impaired Glucose Tolerance)।
এটা হচ্ছে সুস্থতা ও ডায়াবেটিসের মধ্যবর্তী এলাকা। এ সময় সচেতন ও সতর্ক হলে ডায়াবেটিস এড়ানো সম্ভব। আর অসতর্ক হলে ডায়াবেটিস রোগী হতে হয়। প্রি-ডায়াবেটিস অবস্থায় কায়িক শ্রম বাড়িয়ে এবং চিনি-মিষ্টি বাদ দিয়ে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায়।
ডায়াবেটিসে গাছ-গাছড়া, নানা সবজি/পাতা/বিচি, হার্বাল ওষুধ কি কার্যকর?
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হয় সেগুলো বহু স্তরের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়ে আসতে হয়। ওষুধগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, মানবশরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব, গর্ভস্থ শিশুর ওপর প্রভাব, অন্যসব ওষুধের সাথে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, কিডনি লিভারের ওপর প্রভাব ইত্যাদি বহুবিধ বিষয়ে বছরের পর বছর গবেষণার মধ্যদিয়ে নিরাপদ প্রমাণিত হলেই কেবল মানুষের শরীরে ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়।
একটি ওষুধ শরীরে প্রবেশের পর কীভাবে কাজ করে, কত ঘণ্টা পরে শরীর থেকে কোন পথে বের হয় এটা আমাদের জানা থাকে। কিন্তু নানা জাতীয় গাছ-গাছড়া, ফল, বিচি, পাতা, সবজি বা হার্বাল ওষুধ ডায়াবেটিস রোগে এগুলোর কার্যকারিতা কোনো ধরনের বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়নি।
মানুষের শরীরের এসবের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও কোনো গবেষণা নেই। ফলে এসব দ্রব্যাদির ব্যবহারে ‘শোধরানোর অযোগ্য’ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া শরীরে তৈরি হয়। তাতে কেবলমাত্র অকাল মৃত্যু বা অনাবশ্যক ভোগান্তিকে ডেকে আনা হয়। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি এমন কোনো দ্রব্য কোনো বিচারবোধ সম্পন্ন মানুষ ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা হিসেবে এইসব গ্রহণ করবে না।
ডা. লেলিন চৌধুরী : চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ