করোনাভাইরাসের মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ এভিয়েশনে মানবিক এয়ারলাইন্সে পরিণত হয়েছে। যেখানেই যাত্রীদের সীমাহীন কষ্টের গল্প সেখানেই সমাধানে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে সারা বিশ্বের আকাশপথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বরাবরের মতোই ব্যবসার চেয়ে সেবাকেই প্রাধান্য দিয়ে যাত্রীদের করোনাকালে নানামুখী সেবার হাত বাড়িয়ে দিয়ে আসছে।

শুরু থেকেই করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে মহামারিতে রূপ ধারণ করে যা এখনো চলমান। করোনার বিস্তৃতির পর একের পর এক আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো বন্ধ হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল। তখনো বাংলাদেশের একমাত্র ক্যারিয়ার হিসেবে ইউএস-বাংলা চীনের গুয়াংজুতে স্বল্প পরিসরে ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে।

বিশ্বব্যাপী যখন করোনার আক্রমণে বিপর্যস্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা, তখন ইউএস-বাংলা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে। যখন কোথাও আশানুরূপ চিকিৎসা সামগ্রী ছিল না বললেই চলে, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় বিদেশ থেকেও আমদানি করাও যাচ্ছিল না, ঠিক তখনই চীন থেকে স্বাস্থ্য সেবাকে চলমান রাখার জন্য অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্ল্যাভস, সার্জিক্যাল মাস্ক, ফেস শিল্ড, করোনা টেস্ট করার জন্য বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস এর জন্য উপকরণের কাঁচামাল বিনা খরচে বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এর পক্ষ থেকে চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাজার হাজার চিকিৎসা সামগ্রী উপহার হিসেবে দিয়েছে।

বিশ্বব্যাপী যখন করোনার আক্রমণে বিপর্যস্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা, তখন ইউএস-বাংলা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে।

ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ সকল শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিনামূল্যে করোনা শনাক্তকরণের ব্যবস্থা করেছে। প্রয়োজনে সকল শ্রেণির কর্মচারীর পরিবারের সদস্যদেরও করোনার শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াসহ চিকিৎসা সহায়তাও দিয়েছে। সারা বিশ্ব যখন অবরুদ্ধ তখন চলমান ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের গুয়াংজু রুটের যাত্রীদের বিনামূল্যে করোনা শনাক্ত করার ব্যবস্থা করেছে।

করোনার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লকডাউন থাকায় বাংলাদেশি নাগরিকরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। দেশীয় পর্যটকরা, বিদেশে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা কিংবা চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশিরা বিদেশে গিয়ে আটকা পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছিল। তখনো ব্যবসাকে প্রাধান্য না দিয়ে সেবাকে গুরুত্ব দিয়ে মানবিকতা দেখিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেছে ইউএস-বাংলা।

বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে দুবাই, আবুধাবি, চেন্নাই, দিল্লি, কলকাতা, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, হ্যানয় এমনকি ফ্রান্সের প্যারিসেও বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। বিশেষ ফ্লাইটের মাধ্যমে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ইউএস-বাংলা।

যাত্রী পরিবহন যখন বন্ধ, কার্গো পরিবহনও তখন অনেকটা বেসামাল অবস্থা তখন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স প্যাসেঞ্জার এয়ারক্রাফটগুলোকে বিশেষ ব্যবস্থায় কার্গো এয়ারক্রাফটে রূপান্তর করে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। বিভিন্ন দেশে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতেও ভূমিকা পালন করেছে।
কলকাতা, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক বিভিন্ন দেশে মৃত্যুবরণ করেছে—তাদের মরদেহ বহন করার জন্যও স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনা করেছে ইউএস-বাংলা। চার ঘণ্টার নোটিশে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা-১৮ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের মরদেহও থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।

সারা বিশ্বের বিখ্যাত সব এয়ারলাইন্স করোনাকালীন সময়ে স্বল্প সময়ের নোটিশে হাজার হাজার কর্মচারী, কর্মকর্তা, পাইলট, কেবিন ক্রু বাধ্যতামূলক ছুটিতে কিংবা গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিতে বাধ্য হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ গত বছর করোনার শুরুতে সব ধরনের ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ ঘোষণা করে কর্মচারীদের বিনা বেতনে ছুটি দিয়েছে। সেখানে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্মচারী ছাঁটাই প্রক্রিয়াতে না গিয়ে সকল কর্মচারীদের চাকরিতে বহাল রেখেছে, করোনাকালীন সময়ে কর্পোরেট জগতে মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

একটি দেশের আকাশপথ সচল থাকলে ব্যবসা বাণিজ্যের গতি ত্বরান্বিত হবে—এটা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স শুধু বিশ্বাস করে না, আকাশপথ সচল রাখার জন্য প্রত্যক্ষ ভূমিকাও রাখছে।

করোনার প্রথম ধাপে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি প্রায় দুমাস পর স্বাস্থ্য সতর্কতা হিসেবে নানা বিধিনিষেধ দিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি প্রদান করে, তখনো ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স নিশ্চিত ব্যবসায়িক ক্ষতি জেনেও নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে।

শুধু ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স নয় বাংলাদেশের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সব ধরনের স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে যাত্রীদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছিল। যাত্রীদেরকে এভিয়েশনমুখী করার জন্য অভ্যন্তরীণ সকল রুটে মাত্র ২০০০ টাকা ভাড়ায় ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এখানে ব্যবসা নয়, সেবাকেই প্রাধান্য দিয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

গত প্রায় একমাস যাবৎ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় শুধুমাত্র বিদেশগামী কিংবা বিদেশ ফেরত যাত্রীদের সেবা দেওয়ার জন্য ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স নিশ্চিত ব্যবসায়িক ক্ষতি হওয়ার পরও ঢাকা থেকে প্রতিদিন চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর ও সৈয়দপুরে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

ইউএস-বাংলা সবসময়ই চেয়েছে যাত্রীরা যেন আস্থার সংকটে না পড়েন। দেশের মানুষের আস্থা আর ভালোবাসায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও একটি শক্ত ভিত তৈরি করার প্রচেষ্টায় মনোনিবেশ করেছে। বাংলাদেশি যাত্রীদের উপর পূর্ণ আস্থা রেখেই ইউএস-বাংলা বিদেশেও সুনামের সাথে ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে।

একটি দেশের আকাশপথ সচল থাকলে ব্যবসা বাণিজ্যের গতি ত্বরান্বিত হবে—এটা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স শুধু বিশ্বাস করে না, আকাশপথ সচল রাখার জন্য প্রত্যক্ষ ভূমিকাও রাখছে। এয়ারলাইন্স শুধু একটি ব্যবসা নয় , এটা একটি সেবার দৃষ্টান্তও তা পরতে পরতে মেনে এগিয়ে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা। যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশ পেরিয়ে, বাংলাদেশি জনগণ ও তথা প্রবাসী বাংলাদেশিদের আস্থার প্রতীক হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা।

মো. কামরুল ইসলাম ।। মহাব্যবস্থাপক- জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স