আজ থেকে ২৬ বছর আগের কথা। আমি এক আশি ঊর্ধ্ব ভদ্রলোককে চিনতাম। বাড়ি ময়মনসিংহ, থাকতেন ঢাকায়। ১৯৯৪ সাল তখন দেশের চারটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন চলছে। আজগুবি এক বায়না ধরলেন তিনি। চট্টগ্রামে গিয়ে ভোট দিতে চান। ছেলেদের সাথে চিৎকার চেঁচামেচি, তিনি চট্টগ্রাম যাবেনই এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীকে তিনি ভোট দেবেন।

আওয়ামী লীগের কট্টর বিরোধী একজন মানুষ, অথচ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। কারণ ছিল একটাই তার দলের প্রতীকের প্রতি ভালোবাসা। তখন মহিউদ্দিন চৌধুরীর মার্কা ছিল হারিকেন। মুসলিম লীগের দলীয় প্রতীকও ছিল হারিকেন। মুসলিম লীগ বিলীন হয়ে গেলেও দলের প্রতীকের প্রতি ওনার ভালোবাসা শেষ হয়নি। দল ও দলের প্রতীকের প্রতি ভালোবাসা এমন হওয়াই উচিত, যদি সত্যিকারের দল প্রেমিক হয়।

এই গল্পের প্রসঙ্গ আসলো, সাম্প্রতিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পরিস্থিতি দেখে। দ্বিতীয় দফা ইউনিয়ন পরিষদের কথায় যদি বলি, সেখানে নৌকা মার্কা নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ৪৮৬ জন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। আর স্বতন্ত্র নির্বাচিত হয়েছেন ৩৩০ জন। বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।

বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী নেই বললেই চলে। আওয়ামী অধ্যুষিত অনেক এলাকাতেই নৌকার জামানত বাজেয়াপ্ত। তিন/চার নম্বর পজিশনে। দলের বিদ্রোহীরা জিতে গেছেন অথবা অন্য প্রার্থীরা এই দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়েছেন। অনেক জায়গায় দলের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা মেম্বার পদপ্রার্থী হয়েছেন। নিজেরা পাস করার জন্য নৌকার বিরুদ্ধে ভোট ভাগাভাগি করে অন্যদের সাথে ব্যালেন্স করেছেন।

এই নৌকা শুধু আওয়ামী লীগের প্রতীক না। স্বাধীনতার প্রতীক, মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক, মানুষের অর্থনৈতিক সামাজিক মুক্তির প্রতীক, সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতীক। এই প্রতীককে তৃণমূল পর্যায়ে এই রকম হেনস্তা খুবই কষ্টদায়ক।

আগে শুনতাম, বিএনপি জামায়াত রাতের আঁধারে নৌকা প্রতীকে আগুন দিত। কারণ স্বাধীনতা বিরোধীদের কাছে নৌকা প্রতীক দুশমন। তারা সহ্য করতে পারে না। এইবার সংবাদে দেখেছি, আওয়ামী লীগাররাই আগুন দিয়েছে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর পক্ষ হয়ে। নৌকার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নৌকা। এটা ভাবা যায়? তবে এখনকার বাস্তবতায় এটাই সত্য।

এর জন্য দায়ী কে তা বিতর্কের বিষয়। কেউ হয়তো বলবেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা-থানা নেতৃবৃন্দ নিজস্ব বলয় তৈরি করার জন্য দলের ত্যাগীদের বাদ দিয়ে নিজের লোকের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। কেউ হয়তো বলবেন, টাকার বিনিময়ে এই কাজ করেছেন আমি ওই বিতর্কে যাব না। বিতর্কে না গেলেও চরম সত্য হচ্ছে, এই ঝড়টা ভালো না। কারণ নৌকার বিরুদ্ধে ঝড় মানেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঝড়। তাই তো নৌকার জন্য অনেক মায়া।

আশরাফুল আলম খোকন ।। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপ-প্রেস সচিব