কথাগুলো অনেকের কাছে খাপছাড়া মনে হতে পারে। তবুও কিছু সমীকরণ মেলাব। ডা. মুরাদ হাসানের গত কয়েক মাসের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে কিছু বিষয় পরিষ্কার হওয়া যাবে।

তিনি রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে কথা বলেছেন। তার এই বক্তব্যের সাথে আমার মতো অসাম্প্রদায়িক চেতনার অনেকেই একমত। তবুও এই সময়ে, কোনো ইস্যু ছাড়া হঠাৎ করে তার এই বক্তব্য দেওয়ার কারণ কী? যখন দেশে জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলন চলছে। এইখানে তিনি মোল্লাদের খেপিয়েছেন।

বেগম জিয়ার পর বিএনপির নেতৃত্বে কে আসবেন—এটা এখন খুবই আলোচিত বিষয়। দলের একটি গ্ৰুপ ছাড়া পুরা জাতির কাছেই তারেক রহমান চরম বিতর্কিত ব্যক্তি। কর্মকাণ্ডে তার আর মুরাদের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। ভাবা হচ্ছিল, তারেক রহমানের বৌ ডা. জুবাইদা রহমান হয়তো বিএনপির হাল ধরবেন। কিন্তু তিনিও অনিচ্ছুক। সেই জন্যই কি চরম অশ্লীল মন্তব্য করে জাইমা রহমানকে লাইমলাইটে নিয়ে আসার চেষ্টা? তার প্রতি নারীদের সহানুভূতি তৈরি করা? এইখানে তিনি বিএনপি এবং নারীদেরকে বিক্ষুব্ধ করেছেন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন। ছাত্রী হলের মেয়েদেরকে নিয়ে অপ্রীতিকর মন্তব্য করেছেন, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বয়ং বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু কন্যা পড়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেপলে কী হয় তা মুরাদ হাসান খুব ভালো করেই জানেন। আর এর সাথে যদি মেয়েরা মাঠে নামে তো কথাই নেই। এইখানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেপিয়েছেন।

এরপর তিনি হয়তো সিরিয়ালি হাইকোর্ট তথা আইনজীবী এবং প্রেসক্লাব তথা সাংবাদিকদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করতেন। এই সকল গোষ্ঠীকে বিক্ষুব্ধ করতে পারলে সরকারের পতন ঘটাতে আর কিছু লাগে না।

একজন চলচ্চিত্র নায়িকার সাথে চরম আপত্তিকর কথাগুলো তিনি বলেছেন দুই বছর আগে। দুইপক্ষের কেউই এটা রেকর্ড করে অনলাইনে ছাড়েননি। তাহলে কীভাবে বাইরে আসলো? একটু মাথা খাটান। উত্তর পেয়ে যাবেন। সরকারের আরও সর্বনাশ করার আগেই ধরা খেয়েছেন। সরকারকে বিনাশ করতে গিয়ে নিজেই বিনাশ হয়ে গেছেন। কপালে হয়তো আরও শনি আছে।

মনে রাখা দরকার, ডা. মুরাদ একসময়ের ছাত্রদল নেতা। কিন্তু তার বাবা মতিউর রহমান তালুকদার বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনীতি করেছেন। ওই পরিবারের সন্তান হয়ে মুরাদের রাজনীতি শুরু ছাত্রদল দিয়ে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে হয়তো তিনি এখন বিএনপির রাজনীতিই করতেন।

আশরাফুল আলম খোকন ।। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপ-প্রেস সচিব