আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের শরীক দলের নেতাদের সরকারের সমালোচনায় উষ্মা প্রকাশ জোট নেতা শেখ হাসিনা। সরকারের সমালোচনা করে জোটের কয়েকজন নেতার বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য নিয়ে বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। 

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সভায় তিনি উষ্মা প্রকাশ করেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেছেন, সরকারি দলের জোটে থেকে সরকারের সমালোচনা করা সমীচীন নয়। আপনারা দল টেকানোর জন্য যদি এভাবে সমালোচনা করেন তাহলে বিরোধী পক্ষ তো এটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে। 

জোটের কয়েকজন নেতাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, জোটে থাকার কারণে গত ১৩ বছরে তাদের অনেকে এমপি-মন্ত্রীসহ সরকারের নানা সুবিধা পেয়েছেন। জোটে না থাকলে তাদের অনেকে এই সুবিধা পেতেন কি-না প্রশ্ন রয়েছে। ফলে সরকারের সঙ্গে থেকে এভাবে সমালোচনা তো দ্বিচারিতার মধ্যে পড়ে যায়।

জানা গেছে, জোটভুক্ত দলকে নিজেদেরকে আরও শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এজন্য দরকার হলে তিনি তাদের সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। সংগঠন শক্তিশালী হলে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলার পাশাপাশি নির্বাচনে জয়লাভ সহজ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

১৪ দলকে মাঠের কর্মসূচি দিয়ে বিরোধী শক্তিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামাতসহ বিরোধী গোষ্ঠী বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মাঠে নামার চেষ্টা করছে। 

জানা গেছে, বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন হেফাজত প্রশ্নে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে তো সবাইকে নিয়ে চলতে হয়। এদেরকে অন্য কেউ ব্যবহার করতে না পারে সেই বিষয়টিও আমাদের দেখতে হবে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীসহ কয়েকজন নেতা ১৪ দলীয় জোটের আগামী সংসদ নির্বাচন ও জোটের ভবিষ্যত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন। তারা আগেভাগেই বিষয়টি স্পষ্ট করার প্রস্তাব করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ভোটও জোটগতভাবে আমরা করব। ১৪ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধ থাকবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশে জাসদের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, সিট না দেওয়ায় আম্বিয়ারা আসে নাই।

আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেন নাই বলে একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, একাধিক নেতা রেশনিং প্রথা চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছিলেন। 

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেশনিং প্রথা চালু করতে গেলে আবার ডিলারশিপ দিতে হবে। সেখানে আবার দুই নম্বরি হবে। তার থেকে এক কোটি কার্ড করে দেব। সেখানে কম মূল্যে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা পণ্য কিনতে পারবেন।

বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে জোরদার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে কোনো সিন্ডিকেটকে জনগণের অসুবিধা গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে না।

এর আগে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অংশ নেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম প্রমুখ।

এইউএ/ওএফ