বিএনপি ঘরানার রাজনীতিতে এখন বেশ আলোচিত ইস্যু ‘জাতীয় সরকার।’ জাতীয় সরকারের এই ধারণার ভবিষ্যৎ কী তা অনেকটা নির্ভরশীল ২০ দলীয় জোটের শরিকদের ওপর। এই শরিকদেরই একটি- বাংলাদেশ জাতীয় দল; যার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা মনে করেন, বিএনপি তার ভুল বুঝতে পেরেছে। কিন্তু কী সেই ভুল? আবার বিএনপি যে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, জামায়াতকে রেখে সেই ঐক্য সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি। 

এসব বিষয় নিয়ে ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক আদিত্য রিমনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। 

ঢাকা পোস্ট : ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি জোট ছেড়ে অনেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছে। আগামী নির্বাচনে সেই রকম কোনো সম্ভাবনা দেখেন কি না বা আপনাদের সঙ্গে সরকারের কোনও যোগাযোগ আছে কি না?
সৈয়দ এহসানুল হুদা :
বাংলাদেশে রাজনীতিটা অনেক সময় ‘সুযোগ’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ঠিকই বলেছেন যে, ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে ৩টি দল ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যায়। আবার তাদের ভগ্নাংশ নেতা-কর্মী জোটে রয়ে যায়। যারা জোট থেকে বেরিয়ে গেছে তারা সরকারের জোটসঙ্গী যুক্তফ্রন্টের হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। আর এখন আগামী নির্বাচনের পৌনে দুই বছর সময় আছে। আমার মনে হয়, এতো আগে নির্বাচন নিয়ে যে আলোচনাগুলো হচ্ছে এটা কিছুটা অপরিপক্কতা। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ নির্বাচনী আবহে নেই। 

ঢাকা পোস্ট : তাহলে আগামী নির্বাচনে নিতে জাতীয় দলের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ আছে?
সৈয়দ এহসানুল হুদা :
সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। তারা জানে, আমাকে প্রস্তাব দিয়ে কোনো লাভ হবে না।

ঢাকা পোস্ট : আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির কথা বলছে, কিন্তু অনেকে মনে করেন ঐক্যের পথে বাধা জামায়াত। আপনি জোট শরিক হিসেবে কী মনে করেন?
সৈয়দ এহসানুল হুদা : আমি বিশ্বাস করি, জামায়াতকে রেখে ঐক্য সম্ভব। কারণ, আজ জামায়াত থেকে বড় এবং একমাত্র ইস্যু হচ্ছে দেশটাকে উদ্ধার করা। হারানো গণতন্ত্র উদ্ধার করা। দুর্নীতি থেকে দেশের মানুষকে পরিত্রাণ দেওয়া। এসব কমন ইস্যু থেকে জামায়াতের ইস্যুটি গৌণ। এখানে যারাই এই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছে, তাদের নিয়ে যুগপৎ বা ঐক্যমতের আন্দোলন করা সম্ভব। সেই ক্ষেত্রে সবাইকে কিছুটা ছাড় দিতে হবে। জামায়াতকেও তাদের অবস্থান আরও পরিষ্কার করতে হবে। 

ঢাকা পোস্ট : খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেও গতবার শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বিএনপি। এবার বলছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচেন যাবে না। আপনার কি মনে হয়, শেষ পর্যন্ত তারা কথা রাখতে পারবে। জোটের শরিক হিসেবে আপনার দল দলীয় এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে?
সৈয়দ এহসানুল হুদা :
এটা ঠিক যে বিএনপি প্রথমে বলেছে, তাদের দলীয় প্রধান খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যাবে না। তারপর তারা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। মাঝখানে ২০১৮ সালে ঐক্যফ্রন্ট নামে একটি জোটের আবির্ভাব হলো ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে। সেটাকে আমি সব সময় সরকারের পাতানো ফাঁদ বলে অভিহিত করে আসছি শুরু থেকে। তাদের দূরভিসন্ধিমূলক যে ইচ্ছা ছিল, সেটার বাস্তবায়ন করেছে বিএনপিকে নির্বাচনে নেওয়ার মাধ্যমে। এখন আমি মনে করি, বিএনপি তার ভুল বুঝতে পেরেছে। বিএনপি ভবিষ্যতে এই ধরনের ফাঁদে পা দেবে না।  আগামীতে তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকবে।

ঢাকা পোস্ট : নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার গঠন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে শরিকদের মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এটা নিয়ে আপনার দলের অবস্থান কী? 
সৈয়দ এহসানুল হুদা : জাতীয় সরকার নিয়ে গুটি কয়েক দল ও ব্যক্তি সরব আছেন। নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকারের যে ফর্মুলা সেটা অসাংবিধানিক। তারা রাষ্ট্র মেরামতের কথা বলে একটি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য জাতীয় সরকারের প্রয়োজনীতার কথা বলে আসছে। আমি এটাকে সমর্থন করি না এবং এটাকে সরকারের গভীর ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের অংশ হিসেবে মনে করি। আগামীতে কেবল একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যুগান্তকারী ঘোষণা জাতীয় সরকারের ফর্মুলাকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই এবং নিঃশর্ত সমর্থন জ্ঞাপন করি। আমি মনে করি, যারা আগামীতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে থাকবে তাদের নিয়ে এবং গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি ঐক্যমতের জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

এএইচআর/এনএফ