আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি অল্প সময়ের মধ্যে শক্তিশালী বিরোধীদল হিসেবে আবির্ভূত হবে— মির্জা ফখরুল ইসলামের এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে আবারও তাদের শক্তিহীনতা, দুর্বলতা, অক্ষমতা ও দৈন্যতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

রোববার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রকারান্তরে মহাসচিব স্বীকার করেছে নিয়েছেন যে, কার্যত বিএনপি একটি শক্তিহীন ও অন্তঃসারশূন্য রাজনৈতিক দল। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্তিশালী বিরোধীদলের অনুপস্থিতির যে কথা বলেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সেটিই প্রতীয়মান হয়েছে।

তিনি বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী বিরোধীদলের শক্তিমত্তা প্রতিষ্ঠিত করার স্থান হলো জাতীয় সংসদ। সে অর্থে বিরোধীদলকে ছায়া সরকার হিসেবেও অভিহিত করা হয়। সেজন্য যেকোনো রাজনৈতিক দলকে শক্তিশালী বিরোধীদল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন প্রাপ্তি নিশ্চিত করা আবশ্যক। বিএনপি নেতাদের প্রশ্ন করি, বর্তমানে জাতীয় সংসদে তাদের আসন সংখ্যা কত? আর তা দিয়ে তারা কতটা শক্তিশালী বিরোধীদল হতে পেরেছে? এসব আজ জাতির সামনে প্রমাণিত।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগামী নির্বাচন ব্যতীত জাতীয় সংসদে শক্তিশালী বিরোধীদল হয়ে ওঠা কোনোভাবেই বিএনপির পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কী ধ্বংসাত্মক এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাসের মতো ন্যক্কারজনক ও কাপুরুষোচিত শক্তি প্রদর্শনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বিএনপি? দেশের সচেতন জনগণ মনে করে, বিএনপির  দুরভিসন্ধিমূলক ঘোষণার নেপথ্যে দেশবিরোধী গভীর কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে। অবশ্য অতীত ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বিএনপি নেতাদের ‘অতি অল্প সময়’-এর কোনো সীমারেখা নেই। তাই বিএনপির হুমকি-ধমকিতে জনগণের কোনো আগ্রহ নেই।

তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী আদর্শের গর্ভে জন্ম নেওয়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে ফ্যাসিবাদী অভিহিত করে একদিকে বিরোধীদলের ওপর দমন-পীড়নের মিথ্যা অভিযোগ করছেন, অন্যদিকে একই কণ্ঠে বলছেন, শক্তিশালী বিরোধীদল আছে বলেই তো এখন পর্যন্ত কথাগুলো আমরা বলছি। সরকার যদি ফ্যাসিবাদী হয়, তাহলে তারা সরকারবিরোধী অপপ্রচার ও যথেচ্ছা মিথ্যাচার করেন কীভাবে? মির্জা ফখরুল ইসলামের এ দ্বিচারিতার কারণ হলো তারা জনকল্যাণে কখনো কোনো রাজনীতি করেন না। যেকোনো উপায়ে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করা তাদের রাজনীতির একমাত্র লক্ষ্য। নিজেদের স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী আদর্শের নিকৃষ্ট ইতিহাসকে আড়াল করতে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যই বিএনপি নেতারা বারবার এ চিত্তাকর্ষক পরিভাষাকে ব্যবহার করে। বিএনপি তার দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসী নেতৃত্বের স্বার্থ চরিতার্থে জনগণের স্বার্থকে ঢাল হিসেবে সামনে নিয়ে আসে। মূলত বিএনপি অন্তরে ফ্যাসিবাদী আর মুখে গণতন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিকশিত মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্ভাসিত। তাই দেশে যখনই কোনো ফ্যাসিবাদী শাসন জেঁকে বসতে চেয়েছে তখনই জনগণ গণআন্দোলন গড়ে তুলেছে। আর সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে গণমানুষের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ফ্যাসিবাদী বিএনপি রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফ্রেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে যখন ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চেয়েছিল, তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জনগণ গণআন্দোলন গড়ে তোলে। একইভাবে স্বৈরাচারী বিএনপি ২০০৬ সালে ক্ষমতাকে জবরদখল করতে যখন নীল নকশার নির্বাচনের আয়োজন করে, তখনও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বাংলার জনগণ।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী বিএনপি এদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ দ্বারা বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হয়েছে। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, শক্তিশালী বিরোধীদল হিসেবে আবির্ভূত হওয়া ও আন্দোলনের নামে বিএনপি যদি আবারও সন্ত্রাসী ও ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নেয় তাহলে জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলার মাধ্যমে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।

এইউএ/আরএইচ