খুব শিগগিরই বিএনপি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাংগঠনকি সম্পাদক শামা ওবায়েদ। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে না। আর কীভাবে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা যায় তা নিয়ে বিএনপি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। যা খুব শিগগিরই জাতির সামনে পেশ করা হবে।

ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক আদিত্য রিমনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচন, আন্দোলন, বিএনপিতে নারী নেতৃত্বের অবস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন শামা ওবায়েদ। নিচে তা পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দ্রুততার সঙ্গে সারা দেশে সংগঠন পুনর্গঠন করছেন। সহযোগী-অঙ্গসংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজাচ্ছেন। তবে জেলা-উপজেলায় কাউন্সিল করতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আমরা আওয়ামী পুলিশ দ্বারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। 

ঢাকা পোস্ট: বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনে নামার কথা বলছে। কিন্তু গত এক দশকে সাংগঠনিক ব্যর্থতার কারণে আন্দোলনে সফলতা আসেনি এমন কথা আসছে বারবার। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আপনি কী মনে করেন, এবার আন্দোলন করার মতো যথেষ্ট সাংগঠনিক শক্তি কি বিএনপির আছে?

শামা ওবায়েদ : গত ১৬ বছর ধরে বিএনপি রাস্তায় আছে। আওয়ামী লীগ গত ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। এ সময়ে আমরা দুটো কাউন্সিল করতে পেরেছি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এখনো শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার বিচারে গৃহবন্দি রয়েছেন। ওনার অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দ্রুততার সঙ্গে সারা দেশে সংগঠন পুনর্গঠন করছেন। সহযোগী-অঙ্গসংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজাচ্ছেন। তবে জেলা-উপজেলায় কাউন্সিল করতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আমরা আওয়ামী পুলিশ দ্বারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। তারপরও আমাদের কার্যক্রম চলমান।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে— বিএনপিসহ সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ আছে একটি ইস্যুতে, সেটা হচ্ছে মানুষকে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। যেটা আওয়ামী লীগ হরণ করেছে। আপনার প্রশ্ন ছিল, এই আন্দোলন করার জন্য আমাদের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী কিনা। আপনি তাকিয়ে দেখেন করোনার আগে আমরা বিভিন্ন জেলায় জনসভা করেছি।সেইগুলোতে মানুষ শতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। সেই উপজেলায় সংগঠন থাকুক বা না থাকুক মানুষ কিন্তু দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, সুশান প্রতিষ্ঠার দাবিতে সতস্ফুর্তভাবে অংশ নিয়েছে। কিছু-কিছু জায়গায় পুলিশ বিনা কারণে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল, সেটা ভেঙে আমাদের নেতাকর্মীরা জনসভা করেছে। সুতরাং তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত আমাদের সংগঠন শক্তিশালী আছে। একটা কথা কী, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের ওপর এত বেশি হামলা-মামলা, নির্যাতন করেছে যে মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন সামনের দিকে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। আমাদের লক্ষ্য স্থির আছে। সংগঠনও ঠিক আছে। আমরা বদ্ধপরিকর যে কোনো মূল্যে মাঠে থাকব, সেটার প্রমাণ ইতোমধ্যে বিএনপি দিয়েছে।

একটি রাজনৈতিক দল কখন কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা আগে থেকে সব সময় বলা যায় না। পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং জনগণের কথা চিন্তা করে রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ২০১৮ সালে নির্বাচনের নামে তামাশা হয়েছে।

ঢাকা পোস্ট: গত সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি বলেছিল- খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে অংশ নেবে না, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এবার বলছেন-নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবেন না। আসলে শেষ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তে আপনারা অটল থাকবেন কি?

শামা ওবায়েদ :  নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে, এটা শুধু বিএনপির দাবি নয়, আওয়ামী লীগ ছাড়া সব রাজনৈতিক দলেরই একই দাবি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে মোটামুটি যে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, সেটা তো প্রমাণিত।

আমরা ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে দেখেছি, আগের দিন রাতেই ভোট হয়ে গেছে। সেই নির্বাচনে আমাদের ১৮-২০ বছর বয়সী তিন কোটি নতুন ভোটারদের মধ্যে তিনশ জনও ভোট দিতে পারোনি। তবে, একটি রাজনৈতিক দল কখন কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা আগে থেকে সব সময় বলা যায় না। পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং জনগণের কথা চিন্তা করে রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ২০১৮ সালে নির্বাচনের নামে যে তামাশা হয়েছে, তাতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অটল থাকা ছাড়া বিএনপির আর কোনো উপায় নেই।

ঢাকা পোস্ট : সম্প্রতি বিএনপির অনেক নেতার পদাবনতি হয়েছে। এছাড়া আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে।আপনি কী মনে করেন?

বিএনপি নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার চায় না। আমরা এখন চাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। এই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা খুব শিগগিরই বিএনপি জাতির উদ্দেশ্যে পেশ করবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে কীভাবে নির্বাচন করা যায়, তা তুলে ধরা হবে।

শামা ওবায়েদ : ২০০৯ সালে বর্তমান অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করে আসছে। বিএনপিকে তিনি বিভিন্নভাবে ভাঙার চেষ্টা করছেন। এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু গত এক যুগ ধরে সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর এত অত্যাচারের পরও কয়জন বিএনপি ছেড়ে গেছে? ১/১১-এর সময় তো বিএনপি ভাঙার সব রকমের চেষ্টা হয়েছে। বিএনপিকে ভেঙে আরেকটি বিএনপি বানিয়ে তাদের নিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু সফল হয়নি। ফলে, দল ভাঙার নোংরা রাজনীতি আওয়ামী লীগের পুরোনো অভ্যাস। কিন্তু তারা বরাবরই ব্যর্থ হয়েছে। এবারও সফল হবে না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে- সংগঠন চালাতে গেলে কিছু নিয়ম-কানুন আছে, সেগুলো মেনেই সংগঠন চলছে। এতে দল ভাঙার কোনো কারণ নেই।

ঢাকা পোস্ট : আপনি বলছেন- শুধু বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগ ছাড়া সব দলই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছে। কিন্তু বিএনপির জোটের কয়েকটি মিত্র দল নির্বাচনের সময় জাতীয় সরকার চাচ্ছে। এটা নিয়ে বিএনপি ও জোটের মধ্যে কি বিরোধ আছে?

শামা ওবায়েদ : আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাতীয় সরকারের ফর্মুলা দেওয়ার পর আমরা কোনো দলের কাছ থেকে নেতিবাচক কিছু পাইনি। বিএনপির অবস্থান খুবই পরিষ্কার। এটি গণতান্ত্রিক একটি দল, বিগত দিনে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় গেছে।এখন কিছু সুশীল সমাজের লোকজন-কিছু রাজনৈতিক নেতা বলছেন বা তারা চান নির্বাচনের সময় জাতীয় সরকার হোক। কিন্তু তারা বিগত নির্বাচনগুলোতে ধানের শীষ বা নৌকা প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করেছে। ধানের শীষ বা নৌকা ছাড়া তাদের নির্বাচন করার হিম্মত নেই। বিএনপি নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার চায় না। আমরা এখন চাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। এই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা খুব শিগগিরই বিএনপি জাতির উদ্দেশ্যে পেশ করবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে কীভাবে নির্বাচন করা যায়, তা তুলে ধরা হবে। সেই নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হলে তখন সব দল-মতের লোককে নিয়ে, যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শরিক ছিল তাদের নিয়ে সরকার গঠন করবে। সেটাই হবে জাতীয় সরকার। এখন জাতীয় সরকার হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

ঢাকা পোস্ট: একজন নারী হিসেবে কী মনে করেন, বিএনপির নেতৃত্ব পর্যায়ে নারীর সংখ্যা যথেষ্ট?

শামা ওবায়েদ : নারী হিসেবে আমি অবশ্যই মনে করি, এটি যথেষ্ঠ নয়। সারা দেশে দলের মধ্যে নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধি করার যথেষ্ট সুযোগ আছে।আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক নারীকে চিনি যারা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দলের পেছনে অনেক শ্রম দেন। অনেক সময় দেখা যায়, নারীরা পুরুষদের চেয়েও বেশি কাজ করছেন। সুতরাং অবশ্যই তাদের মূল্যায়ন হওয়া দরকার। তাদের দলের একটা কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা প্রয়োজন। আশা করি দ্রুত সেটা করা হবে।

এএইচআর/এসএম