শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উদাহরণ টেনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার সময় শেষ হয়ে এসেছে। তারা ভাবতেই পারে না ক্ষমতা ছাড়তে হবে। তারা ভাবে এটা মনে হয় তাদের জন্মগত অধিকার। আওয়ামী লীগ সব ছাড়তে রাজি কিন্তু ক্ষমতা ছাড়তে রাজি না। কিন্তু ক্ষমতা ছাড়তেই হবে। 

শনিবার (১৪ মে) বিকেলে চট্টগ্রামের কাজীর দেউরী নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে ‘দেশব্যাপী বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে’ আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাড়িতে, কুমিল্লায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদের গাড়িতে এবং ফেনীতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীনের বাড়িতে হামলার প্রতিবাদ জানানো হয় এ সমাবেশ থেকে।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবকে আমি ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেছেন ‘যারাই আওয়ামী লীগ করেছে; তারাই বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে’ অর্থাৎ দলের সবাই চোর সেটা তিনি স্বীকার করেছেন। তবে টাকা যেখানেই পাচার হোক বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তা দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। দেশের টাকা আকাশে যাক, আর সাগরে ভাসুক, সেই টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। আওয়ামী লীগ টাকা ছাড়া কিছু বোঝে না। ব্যবসায়ীদের এখন ১০ নয় ১০০ শতাংশ কমিশন দিতে হয়। 

বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না উল্লেখ করে দুদু বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বুঝতে পারবেন কতো ধানে কতো চাল। ১৩ বছর ধরে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার নির্যাতন করেছেন। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলা দিয়েছেন। তবে বিএনপি শহীদ জিয়ার দল। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। আমারা ভোট দেওয়ার অধিকার চাই, গণতন্ত্র ও গণনির্বাচন চাই। খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। নেত্রীকে মুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। 

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বাংলাদেশের পুলিশ দেশের জন্য রক্ত দিয়েছে। পুলিশের অনেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের পুলিশ সুনামের সঙ্গে কাজ করেছে। এই ৫০ বছরে পুলিশের বিরুদ্ধে কোন দেশের নিষেধাজ্ঞা আসেনি। পুলিশকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। তারা পুলিশকে ডাকাতের দলে পরিণত করেছে। 

সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক ও কক্সবাজারের সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, বাংলাদেশের মানুষের যে করুণ দুর্দশা, শুধু তেলের দাম বাড়ছে তা নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম বেড়েছে। এই অবস্থায় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে দেশের মানুষকে রূপকথার গল্প শুনিয়েছিল, ১০ টাকায় চাল খাওয়াবে, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, গ্রামকে শহরে রূপান্তর করবে। কিন্তু এখন ১০ টাকায় চালের বদলে ঘরে ঘরে হাহাকার ছাড়া কিছু দেয়নি।  

সভাপতির বক্তব্যে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, গণতন্ত্রকে বিলীন করে আইনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা সমগ্র দেশটাকে রক্তাক্ত জনপদে পরিণত করেছে। নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে সরকার আরও লাগামহীন ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।  

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলম ও ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের যৌথ পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সি. যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজ, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মিয়া ভোলা, সৈয়দ আজম উদ্দীন, নাজিমুর রহমান, কাজী বেলাল উদ্দিন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য অধ্যাপক ইউনুছ চৌধুরী, নুরুল আমিন, নুর মোহাম্মদ, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন প্রমুখ। 

কেএম/এসকেডি