ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের হামলার জবাবে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করতে দেখা গেছে ছাত্রদলকে। মঙ্গলবার (২৪ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগ থেকে মিছিল নিয়ে শহীদুল্লাহ হলের সামনে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়ে। সেখানে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে ছাত্রদল। এসময় পিছু হটতে দেখা যায় ছাত্রলীগকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ছাত্রদলের পাল্টা প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম ভবনের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। আর ছাত্রদল অবস্থান নেয় দোয়েল চত্বরে। সেখানে একে অপরকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এ সময় ছাত্রদল নেতাদের হাতে বাঁশ ও ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে রড, হকি স্টিক দেখা যায়। ছাত্রদলের প্রায় দুইশ নেতাকর্মী কার্জন হল ও দোয়েল চত্বরের সামনে অবস্থান নেয়। প্রায় ১০-১৫ মিনিট ধরে চলে সংঘর্ষ।

এরপর বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রলীগের অন্তত ৫০০ নেতাকর্মী বের হয়ে এসে ছাত্রদলের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। ফলে পিছু হটতে বাধ্য হয় ছাত্রদল। এ সময় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলামসহ ১০-১৫ জন নেতাকর্মী আহত হন।

মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে শহীদুল্লাহ হলের গেটের ড্রেনে ফেলে ছাত্রদলের দুই নেতাকে বেধড়ক পেটায় ছাত্রলীগের কর্মীরা। তারা হলেন— বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এজিএস ছাত্রদল নেতা আল আমিন বাবলু, ঢাকা মহানগর ছাত্রদল নেতা মিনহাজুল আবেদীন নান্নু।

সরেজমিনে দেখা যায়, ছাত্রদলের এই দুই নেতাকে ড্রেনে ফেলে বেধড়ক মারধর করছেন ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। এ সময় তাদের বলতে শোনা যায়— এত বড় সাহস ছাত্রদল করিস। পরে ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক তুহিন রেজা, সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের নেতা সৈয়দ শরিফুল আলম শফুর হস্তক্ষেপে ড্রেন থেকে তোলা হয় তাদের। পরে আরও কয়েক দফায় তাদের মারধর করে রিকশায় তুলে দেওয়া হয়। রিকশায় তোলার পর আবার লাথি মেরে ফেলে দিতে দেখা যায়। পা ভেঙে যাওয়ায় রিকশায় উঠতে না পারলে তাকে ছাত্রলীগের দুই জন কর্মী তুলে দেন।

জানতে চাইলে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আখতার হোসেন বলেন, নেতাকর্মীদের চিকিৎসা শেষে আমরা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগ বাধা দেয়। আমরাও প্রতিরোধ করার চেষ্টা করি। পরে ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের নেতাকর্মীরা এসে আবার আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমাদের অন্তত ১৫-২০ জন আহত হয়েছে।

এ সময় ছাত্রলীগেরও দুই থেকে তিন জন কর্মী আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতারা। সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের নেতা শরিফুল ইসলাম শফু বলেন, আমাদের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট করে কারো নাম বলতে পারেননি তিনি।

এর আগে সকাল ৯টা থেকে ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের নেতাকর্মীরা টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন, শহীদ মিনারসহ ক্যাম্পাসেই গুরুত্বপূর্ণ সব মোড়ে অবস্থান নেয় এবং ছাত্রদল বিরোধী খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এসময় তাদের কিছু কিছু নেতাকর্মীর হাতে লাঠি দেখা যায়। ‘ছাত্রদলের গুণ্ডারা হুঁশিয়ার সাবধান’ বলে স্লোগান দেয় তারা।

পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ছাত্রদল মিছিল বের করলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী আহত হন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে কটূক্তি ও ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদের এ মিছিল বের করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল শহীদ মিনার এলাকা হয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকছিলাম। সেসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের বাধা দেয়। আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে চাইলে তারা আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। রড, স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও ছুরি দিয়ে তারা আমাদের ওপর আক্রমণ চালায়।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় আমাদের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, ঢাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ইজাজুল করিম এবং সদস্য মানসূরা গুরুতর আহত হয়ে জরুরি বিভাগের চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মীর আহত হয়েছেন, সবাই চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।

ঢাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক আখতার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হল, বঙ্গবন্ধু হল, জগন্নাথ হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করে। আমাদের ৩০-৪০ জন হাসপাতালে ভর্তি।

জানতে চাইলে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, সম্প্রতি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে বিভীষিকা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজও দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিহত করতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়েছে। ছাত্রলীগ ছাত্রদের এ অবস্থানকে সমর্থন জানাচ্ছে।

এইচআর/এসএসএইচ