দীর্ঘদিন পর চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে। শনিবার (২৮ মে) শুরু হতে যাওয়া সম্মেলন ঘিরে চলছে সাজ সাজ রব। কারা আসছেন নেতৃত্বে, তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে আলোচনা, হিসাব-নিকাশ।

সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে আসন্ন কমিটিতে শীর্ষস্থান পেতে পদপ্রত্যাশী নেতারা যে যার মতো তদবির করে যাচ্ছেন। শেষ মুহূর্তে এসে কেউ কেউ ঘুরছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে। আবার কেউ কেউ ধরনা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের কাছে।

২৮ মে চট্টগ্রাম দক্ষিণ, ২৯ মে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা এবং ৩০ মে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সম্মেলন। জানা গেছে, ২ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় কমিটি। সবমিলিয়ে জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়েছে ১৮৯টি। সবার আগ্রহের কেন্দ্রে চট্টগ্রাম মহানগর।  

চট্টগ্রাম মহানগরে সভাপতি পদে ৩৫, সাধারণ সম্পাদক পদে ৭০ জন লড়ছেন। উত্তর জেলায় সভাপতি পদে নয় ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২২ জন এবং দক্ষিণ জেলায় সভাপতি পদে ১৩ ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৯ জন জীবনবৃত্তান্ত কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন

চট্টগ্রাম মহানগরে সভাপতি পদে ৩৫, সাধারণ সম্পাদক পদে ৭০ জন লড়ছেন। উত্তর জেলায় সভাপতি পদে নয় ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২২ জন এবং দক্ষিণ জেলায় সভাপতি পদে ১৩ ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৯ জন জীবনবৃত্তান্ত কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন।

মহানগর যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৩ সালে।  সে সময় গঠিত কমিটি দিয়েই এতদিন চলছিল সংগঠনের কার্যক্রম। তবে শেষ পর্যন্ত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র।

দীর্ঘদিন পর সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হবে, এ কারণে মহানগরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি। সভাপতি পদের জন্য যে ৩৫টি  জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়েছে, সেগুলোর মধ্যে আলোচনায় এগিয়ে আছেন— নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম, নগর যুবলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহবায়ক দিদারুল আলম চৌধুরী ও মাহবুবুল হক সুমন, সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দেবাশীষ পাল দেবু, যুবলীগ নেতা দিদারুল আলম, হেলাল উদ্দিন, নুরুল আনোয়ার, হাসান মুরাদ বিপ্লব, সুরজিৎ বড়ুয়া লাভু, আরশাদুল আলম বাচ্চু, হাবিবুর রহমান তারেক, আবদুল মান্নান ফেরদৌস, মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন, সুমন দেবনাথ ও হাবিবুর রহমান তারেক।

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন— নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, মো. সালাউদ্দিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক আশিকুন্নবী, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ ওয়াসিম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইয়াসির আরাফাত, আবু মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, ইলিয়াছ উদ্দিন, আবু নাছের চৌধুরী আজাদ, ইমরান আহমেদ ইমু, শহিদুল কাওসার, ফজলে রাব্বি সুজন ও আলমগীর টিপু সাইফুল আলম লিমন।

সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এম আর আজিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুঃসময়ে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি, কাজ করেছি। তার ভিত্তিতে আমরা চাই যুবলীগকে একটি সুন্দর ও শক্তিশালী যুব সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে। চাঁদাবাজ, মাদক, টেন্ডারবাজমুক্ত একটি কমিটি চাই।

তিনি বলেন, যুবলীগের বর্তমান চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সংগঠনের আলাদা ইমেজ তৈরি হয়েছে। আমি সেই ইমেজ কাজে লাগাতে চাই। সারাদেশে যুবলীগকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে চান পরশ ভাই। মানবিক যুবলীগের যে কার্যক্রম চলছে, তাতে আমি শরিক হতে চাই। 

৩০ মে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সম্মেলন হবে চট্টগ্রাম নগরের কিং অব চিটাগং কমিউনিটি সেন্টারে। চলছে একেবারে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সম্মেলনের প্রস্তুতি দেখতে যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ নাঈম একাধিকবার চট্টগ্রামে এসেছেন। যুবলীগের তিনটি ইউনিটের সম্মেলনস্থল পরিদর্শন করে নানা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

মহানগর যুবলীগের সম্মেলন উদ্বোধন করবেন সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সম্মেলন প্রস্তুতির বিষয়ে যুবলীগের নগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সম্মেলনের প্রস্তুতি একেবারে শেষপর্যায়ে। মঞ্চ সাজসজ্জা, শৃঙ্খলা, কাউন্সিলর ডেলিগেটদের তালিকা তৈরিসহ সব কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি সুন্দর একটি সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে।

তিনি বলেন, অনেকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে একটি সুন্দর নেতৃত্ব আসবে বলে আশা করছি। যারা ক্লিন ইমেজের, যারা সাংগঠনিকভাবে দক্ষ, ত্যাগী, যারা পরীক্ষিত তাদের মধ্য থেকেই নেতৃত্বে বেছে নেওয়া হবে। নতুন ও অভিজ্ঞ মিলেই কমিটি হবে বলে মনে করি।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগ

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল ২০১০ সালে। দীর্ঘ ১২ বছর পর দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলন ও নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে উজ্জীবিত স্থানীয় নেতাকর্মীরা।  দক্ষিণ জেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ২৮ মে অনুষ্ঠিত হবে পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে।  সম্মেলন ঘিরে দক্ষিণের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, পটিয়া, কর্ণফুলী ও বোয়ালখালী উপজেলায় ফেস্টুন, ব্যানার, তোরণ ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে।

দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন— চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক নাসির উদ্দিন মিন্টু, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফারুক, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আজম শেফু, বোয়ালখালী পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক আকতার হোসেন ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী চৌধুরী।

এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন— দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নুরুল আমিন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম, মাহবুল আলম, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান চৌধুরী, ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ হোসাইন, রাজু দাশ হিরু এস এম আজিজ ও জাহেদুল ইসলাম। 

মহানগর যুবলীগের সম্মেলন উদ্বোধন করবেন সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম

দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী নাসির উদ্দিন মিন্টু ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ মুহূর্তে যুবলীগের অন্যরকম একটি ইমেজ তৈরি হয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যান যুবলীগকে মেধাভিত্তিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সুন্দর-শৃঙ্খল সংগঠন হিসেবে পরিচালনা করতে চাচ্ছেন। সুন্দর-শৃঙ্খল যুবলীগে নিজেকে কাজে লাগাতে চাই। দলের জন্য, দেশের জন্য যাতে কাজ করতে পারি, সে লক্ষ্য নিয়েই সভাপতি প্রার্থী হয়েছি। এখানে যুবলীগকে নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। 

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগ

চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল ২০১২ সালে। দীর্ঘ ১০ বছর পরে উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ২৯ মে। হাটহাজারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হবে এ সম্মেলন। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি, সন্দ্বীপ  হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়ার নেতাকর্মীরা পছন্দের প্রার্থীর ছবি দিয়ে তৈরি করেছেন ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ ও বিলবোর্ড।

উত্তর জেলার সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন— বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির হায়দার বাবুল, উত্তর জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবুর রহমান স্বপন, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিবুল আহসান সুমন ও নুরুল মোস্তফা মানিক।

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন— উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তৈয়ব, উত্তর জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সন্দ্বীপ মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিজান, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনজুর আলম, চবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এস এম আল নোমান, চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল মনসুর জামশেদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেদ চৌধুরী ও উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন বাবু।

উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী উত্তর জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান মিজান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের রাজনীতি করেছি। সংগঠনকে গতিশীল রাখতে অত্যন্ত কঠিন ও দুঃসময় পার করেছি। মানবিক কাজগুলো করে যাচ্ছি। যুবাদের ভালোবাসা আছে আমার প্রতি। তাদের ভালোবাসা নিয়েই প্রার্থী হয়েছি। আশা করি নেতারা আমার অতীত কাজে ও ত্যাগের মূল্যায়ন করবেন।

তিনি বলেন, জনকল্যাণ ও মানবিক কাজ করে যুবলীগকে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে চাই। এছাড়া আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনার জন্য কাজ করব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে কাজ করব। যুবলীগকে তৃণমূল পর্যায়ে সমৃদ্ধ করতে পারব বলে মনে করি।

চট্টগ্রাম যুবলীগে কেমন নেতৃত্ব আসবে— জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম বদি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথম অধিবেশনের পর দ্বিতীয় অধিবেশনে নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করা হবে। সেখান থেকে যুবলীগের চেয়ারম্যান যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, ত্যাগ ও শ্রম দেখে নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।  রাজনৈতিক দক্ষতা, সততা ও গ্রহণযোগ্যতা আছে, ভালো সংগঠক— এমন নেতৃত্বই নির্বাচন করা হবে।

তিনি বলেন, এক কথায় যুব সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য ও মেধাবীদেরই নেতৃত্বে আনা হবে। তরুণ ও অভিজ্ঞদের মিশেলেই যুবলীগের কমিটি গঠন করা হবে।

কেএম/আরএইচ