২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর। এদিন ভোরে কুমিল্লা নগরীর নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ে একটি অস্থায়ী পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় সারা শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একদল ব্যক্তি বেশকিছু পূজামণ্ডপে হামলার চেষ্টা চালায়। যা দাগ কাটে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মনে।

নানুয়া দীঘির পাড়ের ওই ঘটনার প্রতিফলন ঘটবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে— এমনটি মনে করছেন সাধারণ ভোটার ও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তাদের মতে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভোটার রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার। এসব ভোট পাল্টে দিতে পারে সব হিসাব-নিকাশ। যার পক্ষে এসব ভোট পড়বে তিনিই হবেন আগামীর নগরপিতা।

নানুয়া দীঘির পাড়ের ওই ঘটনার প্রতিফলন ঘটবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে— এমনটি মনে করছেন সাধারণ ভোটার ও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তাদের মতে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভোটার রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার। এসব ভোট পাল্টে দিতে পারে সব হিসাব-নিকাশ। যার পক্ষে এসব ভোট পড়বে তিনিই হবেন আগামীর নগরপিতা

সরেজমিনে কুসিকের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন এবং স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পেয়েছে ঢাকা পোস্ট। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলছেন, ‘নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে এবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন তারা। বিশেষ করে নানুয়া দীঘির পাড়ের অস্থায়ী ওই পূজামণ্ডপে হামলার পর সারা শহরে সহিংস যেসব ঘটনা ঘটে তা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন সাধারণ ভোটাররাও।’ জানা গেছে, এবারের কুসিক নির্বাচনে বিভিন্ন সাধারণ ওয়ার্ডসহ সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী হয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

‘সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ৩৭ হাজার ভোট আছে’— জানিয়ে কুমিল্লা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত দাস টিটু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ এখনও থামেনি। মন্দিরে হামলার ঘটনা যারা ঘটিয়েছেন, তাদের কথা মাথায় রেখেই আমরা এবার ভোট দেব।’

কুমিল্লা নগরীর নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে হামলার পর পুলিশের সতর্কাবস্থা / ছবি- সংগৃহীত

কুমিল্লা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাবু শিবু প্রসাদ রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এটা শুধু রাজনৈতিক বা শুধু কুমিল্লার বিষয় নয়। জাতীয়ভাবে এটা করা হয়েছে। কুমিল্লার মানুষও বিষয়টি বুঝে গেছে। তাদের কাছে সবকিছু পরিষ্কার। না বোঝার কোনো কারণ নাই।’

‘ওনার বাড়ির সামনে ঘটনাটি ঘটেছে, উনি এটা বলতে পারেন না। উনি এসে বলেন, আমি কী করব? মানুষের মনে তো দাগ কেটেছে। এটা এখনও রয়ে গেছে।’

বাবু শিবু প্রসাদ রায় বলেন, ‘কোনো পলিটিক্যাল নেতার যদি এই ধরনের চরিত্র থাকে; জায়গা দখল, মার্ডার, দুর্নীতি...; জনগণ তো এসব ভেবেই ভোট দেবে। আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু বিগত দিনগুলোতে ভালো কোনো মেয়র আনতে পারিনি। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। একবার যদি মানুষের মনে ঢুকে যায়, সে আমাকে মেরেছে, আমার সম্পত্তি নিয়ে গেছে; এগুলো কিন্তু অনেক বড় ফ্যাক্ট। এবার কুমিল্লার নির্বাচনের রেজাল্টে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। ১৩ অক্টোবরের ঘটনা দিয়েই মূল্যায়িত হবে কুমিল্লা সিটির রেজাল্ট।’

প্রসঙ্গত, কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির পাড়ের একটি অস্থায়ী পূজামণ্ডপ থেকে কোরআন পাওয়ার পর শহরজুড়ে বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটে। পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নোয়াখালীর চৌমুহনী, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, ফেনী এবং রংপুরের পীরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। মন্দির-মণ্ডপে হামলা, ভাঙচুরের পাশাপাশি আক্রমণের শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশকিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। পীরগঞ্জে পুড়িয়ে দেওয়া হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে কুমিল্লা সিটি এলাকা / ছবি- সংগৃহীত

নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপসানালয় ও বাড়িঘরে হামলার ওই সব ঘটনা প্রভাব ফেলবে এবারের কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে।

এবার কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আরফানুল রিফাত, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক মেয়র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল হক সাক্কু, কামরুল আহসান বাবুল, মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম। তবে ঘুরেফিরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাতের নাম আলোচনায় আসছে।

কুমিল্লা সিটির ২৭টি ওয়ার্ডে মোট দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০ ভোটার। তাদের মধ্যে এক লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারী ও এক লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন পুরুষ ভোটার। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন দুজন।

মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাতের নাম আলোচনায় আসছে / ছবি- সংগৃহীত

রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২৭টি ওয়ার্ডে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রার্থী হয়েছেন।

নির্বাচনে ১০৫ প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৭৫টি তল্লাশিচৌকি, ১০৫টি মোবাইল টিম, ১২ প্লাটুন বিজিবি, র‍্যাবের ৩০টি টিম, ৫২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, নয়জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। পুলিশের তিন হাজার ৬০৮ সদস্য নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন।

এইউএ/এমএইচএন/এমএআর/