পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকারের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, আমি খুব পরিষ্কার উত্তর দিতে চাই। যারা মানুষ হত্যা করে, যারা এদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পদ্মায় ডুবিয়ে মারতে চায়, যারা এদেশের সবচেয়ে প্রখ্যাত ও বড় সন্মান বয়ে আনা ব্যক্তি, গোটা পৃথিবীতে যিনি নন্দিত মানুষ ড. মুহাম্মদ ইউনুস তাকে চুবিয়ে চুবিয়ে মারতে চায় তাদের আমন্ত্রণে বিএনপির কোনো নেতা বা কর্মী কখনোই সে অনুষ্ঠানে যেতে পারে না।

বুধবার (২২ জুন) বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। 

পদ্মা সেতু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সত্যের অপলাপ

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকের প্রেস কনফারেন্সেও স্বভাবসুলভ বক্তব্য দিয়ে মিথ্যাচারের প্রমাণ রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। এসব মিথ্যাচারের মধ্যে আছে, ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মাওয়া প্রান্তে সেতুর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলেন। সেটা অন্যতম একটি মিথ্যা। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সির পূর্ণাঙ্গ ফিজিবিলিটি রিপোর্ট যেটা ধরে আজকের পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এ রিপোর্টের কপিও আছে আমাদের কাছে, আপনারা চাইলে দেখতে পারেন। এই রিপোর্টটি ২০০৪ সালের ৩ মার্চ সাবমিট করা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, এতো বড় একটা ফিজিবিলিটি রিপোর্ট অফিসিয়ালি দেওয়ার পরেও কী করে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলতে পারেন যে, বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এটাকে বন্ধ করে দেয় এবং এটা কোনো কাজ করেনি! এই ফিজিবিলিটি রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে পদ্মা সেতুর কাজ হয়েছে। তখনই বিএনপির আমলে এডিবি, বিশ্বব্যাংক ও জাপান যোগাযোগ করে ফান্ডের জন্য আলোচনা করে। কিন্তু সময়ের অভাবে সেটা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। অথচ তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সমানে বলে যাচ্ছেন বিএনপি সরকার এটা বন্ধ করে দিয়েছিল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সমস্যাটা হচ্ছে অন্য জায়গায়। কাজ শুরু করার পরে বিশ্বব্যাংক যখন ফান্ড বন্ধ করে দিলো দুর্নীতির কথা বলে তখন থেকেই সমস্যাটা শুরু হয়েছে। সেটার জন্য তিনি বিএনপিকে দায়ী করেন, ড. ইউনুসকে দায়ী করেন। কোথায় পেলেন তিনি? কীভাবে দেখলেন তিনি যে, দুর্নীতির কথা বিএনপি বা ড. ইউনুস তুলেছে।

ফখরুল বলেন, বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির কথা তোলার পর দেশবাসী জানল, আমরা জানলাম সেখানে দুর্নীতি হচ্ছে। আজকে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট এখন ৩০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সত্যের অপলাপ এবং বিএনপিকে জনগণের সামনে হেয়-প্রতিপন্ন করার চেষ্টা।

মির্জা ফখরুল পদ্মা সেতুর সমীক্ষার বিবরণী তুলে ধরে বলেন, এই সমীক্ষার সামারিতে বলা হয়েছে, এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার, প্রস্থ ২৫ মিটার, পাইলের সংখ্যা ২৬৮টি, নদী শাসন ১৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার, সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য (উভয় পাশে) ১২ দশমিক ১৬৩ কিলোমিটার, প্রকল্পের (মাওয়া-জাজিরা অবস্থানে) ইআইআরআর ১৪ দশমিক ৮০% রেলসহ, বিসিআর ১ দশমিক ৩৮, ভূমির পরিমাণ ৭৯০ দশমিক ৫০ হেক্টর (অধিগ্রহণ ৬১৬ দশমিক ৫ হেক্টর, হুকুম দখল ১৭৪ দশমিক ০ হেক্টর), ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ৭০ সিআর ১ দশমিক ৩৮, ভূমির পরিমাণ ৭০ থেকে ৮০ হাজার। ২০১৫ সালে মাওয়া-জাজিরা অবস্থানে পদ্মা সেতু দিয়ে দৈনিক ২১ হাজার ৩০০ টি যানবাহন পারাপার করবে এবং ২০২৫ সালে হবে ৪১ হাজার ৬০০টি। এই সেতুর নির্মাণকাজ ২০০৮ সালের অক্টোবর নাগাদ শুরু হবে এবং ২০১৩ সালের মার্চ নাগাদ শেষ হবে।

এটাই পদ্মা সেতুর বেসিক। এটাকে কেন্দ্র করেই তারা পদ্মা সেতুর পরবর্তী কাজ করেছে, পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

এএইচআর/এসকেডি