জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা এবং একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। জিয়াউর রহমানকেও সেভাবে নিহত হতে হয়েছিল। তার লাশটাও কেউ পায়নি। 

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াউর রহমানের লাশ দেখেনি দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুলি খাওয়া লাশ তো দেখা যায়। তারা তো দেখতে পায়নি। সে কথাটা একবারও স্মরণ করে না বিএনপির নেতারা। জিয়ার লাশ কোথায়? এরশাদ সাহেব একটা বাক্স নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু সেখানে কী ছিল? পরবর্তী সময়ে তার (এরশাদ) মুখেই তো আসে ওই বাক্সে জিয়ার লাশ ছিল না। কারণ জিয়ার লাশ তারা পায়নি। লাশ কোথায় গেছে কেউ বলতে পারে না। 

তিনি বলেন, বাক্স নিয়ে এসে সংসদ ভবনের ওই জায়গায় রেখে দিয়েছে। সেখানে গিয়ে ফুল মালাও দেয়। কিন্তু সেখানে খালেদা জিয়ার স্বামীও নাই, বিএনপির নেতাও নাই। এই বাস্তব সত্যটা একদিন না একদিন প্রকাশ হবেই। এরা স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না, তাই তাদের কথা নিয়ে বেশি কিছু বলার দরকার নেই।

আওয়ামী লীগের ইতিহাস আর বাংলাদেশের ইতিহাস একই দাবি করে দলটির সভাপতি বলেন, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ গঠনের মাধ্যমে আবার এই ভুখণ্ড স্বাধীনতা অর্জন করে। আমরা পাই স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ। দলটি জন্মলগ্ন থেকে এ ভুখণ্ডের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছে এবং সাফল্য এনেছে। আওয়ামী লীগ আর বাংলাদেশের ইতিহাস একই ইতিহাস।

আওয়ামী লীগকে আদর্শের ভিত্তিতে সুসংগঠিত দল হিসেবে গড়ে তুলতে সবসময় বঙ্গবন্ধু দৃষ্টি দিয়েছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা। প্রথমে আওয়ামী মুসলিম লীগ হলেও ১৯৫৫ সালে অসম্প্রদায়িক চেতনায় দলকে গড়ে তোলার জন্য মুসলিম নামটি বাদ দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার ঘটনা ও পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাবলী বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সেই সময় ১৯টি সামরিক অভ্যুত্থান হয়। যেখানে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশ ও দেশের মানুষ। সামরিক শাসন দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয় সংবিধানকে। 

নির্বাচন নামে প্রহসন জিয়াউর রহমানের আমল থেকেই শুরু বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, তার হ্যাঁ/না ভোট, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সেনাপ্রধান হিসেবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে, তিনি আবার নির্বাচনে প্রার্থী হয়। এটা সংবিধান ও সেনা আইনেও পারে না। কিন্তু তারপরও অবৈধ কাজগুলো তিনি করে যায়। 

শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের তখন কিছু লোক তার সঙ্গে জুড়ে যায়। সংবিধান ও সেনা আইন লঙ্ঘন করে যে ব্যক্তি দল গড়া শুরু করলো, তাকেই বানানো হলো গণতন্ত্রের প্রবক্তা। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের জন্য ট্র্যাজেডি। তাদের সঙ্গে অনেকেই যুক্ত হয়ে গেল। অনেক জ্ঞানী, গুণীজন হাত মিলাল। 

কিছু মুষ্টিমেয়, কিছু পদলেহকারী ক্ষমতার চাটুকারী করতে ছুটে গেলেও সাধারণ বাঙালি তা করেনি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু সবসময় ঠিক ছিল। সত্তরের নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ২০দলীয় জোট করা হয়েছিল। মাঝে-মধ্যে আমার মনে হয় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপির ২০দলীয় জোট হলো। 

স্বাধীনতা পরবর্তী দেশগঠনে বঙ্গবন্ধুর কার্যক্রম তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সে সময় দেশ গঠনে বিভিন্ন বাঁধার কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ। নগদ টাকা দিয়ে কেনা খাবার, সেটা বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হয়নি। তারপর অপপ্রচার। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এই ভুখণ্ডের বিরুদ্ধে করা হয়। তারপরও যখন দেখলো বাংলার জনগণের মন থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা যাবে না, তখন ১৫ আগস্ট চরম আঘাত হানা হয়।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া স্লোগান দেয় পঁচাত্তরের পরাজিত শক্তি। এতে এটাই প্রমাণ হয় তার বাপ যে পাকিস্তানের দালাল ছিল, তার মাও যে পাকিস্তানি দালাল হিসেবেই ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা নস্যাৎ ও আদর্শগুলো একে একে মুছে ফেলেছিল। ইতিহাস মুছে ফেলেছিল। জাতির পিতার নাম মুছে ফেলেছিল। তাই এটা খুব স্বাভাবিক তারতো সেই স্লোগান দেবেই। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি সেনাদের পদলেহন করে চলাটাই বিএনপির অভ্যাস। তারাতো স্বাধীনতার চেতনাই বিশ্বাস করে না। স্বাধীন জাতি হিসেবে যে একটা মর্যাদা এটাই তাদের পছন্দ না। তারা পরাধীন থাকতেই পছন্দ করে। তাদের লাঠিঝাটাটাই পছন্দ। এটাই বাস্তবতা। এটা মনে করে এদের করুণা করতে হবে। কিন্তু এরা চক্রান্তকারী ও ষড়যন্ত্রকারী সেটাও মনে রাখতে হবে। 

পঁচাত্তর সালে রাষ্ট্রপতি হবার পরে জিয়াউর রহমানই গুম ও খুন শুরু করেছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া এসেও আমাদের কত নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। এরশাদের আমলেও আমাদের নেতাকর্মীদের নির্যাতিত হতে হয়েছে। 

তারেক রহমানকে আসতে দেওয়া হয় না বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কথাট তো ঠিক না। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলেছে। ২০০৭ সালে রাজনীতি না করার মুছলেকা দিয়ে কারাগার থেকে মুক্তি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। এটাতো দলটির নেতাদের ভুলে যাওয়ার কথা না। তাকে তো কেউ বিতাড়িত করে নাই। স্বেচ্ছায় চলে গেছে সে। তারপর সে ফিরে আসেনি। একজন রাজনৈতিক নেতার যদি ফিরে আসার সাহস না থাকে সে আবার নেতৃত্ব দেয় কীভাবে? 

সেনা সমর্থিত এক এগারো সময়ে বাধা সত্বেও দেশে ফিরে আসার ঘটনা এবং পরবর্তী গ্রেপ্তারের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, রাজনীতি করে কারাবন্দি হতেই হবে। 

গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্তে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ প্রমুখ।

এইউএ/এসএম