বিএনপির সংবাদ সম্মেলন

দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসায় সরকারের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এমন দাবি এসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা যতটুকু জানি খালেদা জিয়া অসুস্থ। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন, যা দেশে সম্ভব নয়। সুচিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে হতে পারে তার। তবে এ বিষয়ে সরকারের একটি নিষেধাজ্ঞা আছে।

তিনি বলেন, আমরা চাই খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেটি প্রত্যাহার করা হোক। দেশনেত্রীর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হোক, যেন তিনি চিকিৎসার প্রয়োজনে যখন যেখানে প্রয়োজন, সেখানে যেতে পারেন।

গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাস স্থগিত করে মুক্তি দেওয়ার পর থেকে তিনি গুলশানে নিজের বাসা ফিরোজাতে রয়েছেন। প্রথম দফার পর পরিবারের আবেদনে আরও ৬ মাস সাজা মওকুফ করা হয়, যার মেয়াদ আগামী ২৪ মার্চ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

সরকারের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা অমানবিক ও অযৌক্তিক। কারণ এদেশের ইতিহাস বলে যে, অসুস্থতার কারণে রাজনৈতিক নেতাদের বাইরে যাওয়ার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। এমনকি জেলে থাকা অবস্থাও বাইরে যাওয়ারও দৃষ্টান্ত আছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি এ অযৈাক্তিক ও অমানবিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা দরকার। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বারংবার বিরোধী দলীয় নেত্রী, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষ। শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে, কখন কোথায় চিকিৎসার জন্য যেতে চান।  

খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতাদেশের দ্বিতীয় মেয়াদও শেষপ্রান্তে। এসময় বিএনপির চাওয়া কী- জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বারবার বলেছি- আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি তাকে সাজাই দেয়া হয়েছে অন্যায়ভাবে, বিনা অপরাধে।

নজরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার চেয়েও বেশি দণ্ডপ্রাপ্তদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কেন দেওয়া হয়েছে সেটা আপনারাও জানেন। কারণ এটা খালেদা জিয়ার জন্য প্রযোজ্য না। তিনি সরকারের আপনজন না, প্রতিপক্ষ। যদিও সরকার তার প্রতি যে আচরণ করছে যেটা প্রতিপক্ষের না, শত্রুর আচরণ।

তিনি আরও বলেন,  আমরা মনে করি, সরকারকে সবার হতে হবে। এটি প্রমাণ করার জন্য হলেও অবিলম্বে তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া উচিত। তিনি যাতে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে পারেন ও সুচিকিৎসা নিতে পারেন সেটিও নিশ্চিত করা উচিত।

খালেদা জিয়া বর্তমানে কেমন আছেন- জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এ ব্যাপারে তার যারা চিকিৎসক টিম এবং তার আত্মীয়স্বজনদের বক্তব্য আপনারা বিভিন্ন সময়ে জেনেছেন এবং প্রকাশও করছেন। এর বাইরে তো বলার কিছু নাই। কারণ আমরা তো তার সঙ্গে দেখাই করতে পারি না। আমরা আপনাদের মতো যতটুকু জানি তিনি দারুণভাবে অসুস্থ। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন। একজন অসুস্থ মানুষ সুচিকিৎসা না পেলে যা হতে পারে, তা সরকারের বিবেচনায় নেওয়া দরকার।  

এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে সিঙ্গাপুর চিকিৎসাধীন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ খন্দকার মোশারররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু যুক্ত ছিলেন। সে বৈঠকে আলোচিত বিষয়গুলোই সংবাদ সম্মেলনে উঠে এসেছে।   

এএইচআর/আরএইচ