জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। অস্বাভাবিকভাবে দেশে ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন, পেট্রোলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে পৃথক স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াত।

শনিবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনে থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের জনগণ যখন দিশেহারা, ঠিক সেই চরম দুঃসময়ে সরকার জ্বালানি তেলের দাম একলাফে প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মানুষের জীবন পরিচালনার ব্যয়ভার লাগামহীনভাবে বাড়বে। দেশের ইতিহাসে কখনোই জ্বালানি তেলের দাম একসঙ্গে এতটা বাড়ানো হয়নি।

তিন বলেন, মূলত ক্ষমতাসীন সরকার তাদের দুর্নীতি ঢাকতেই সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসবে। পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ হওয়ার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাবে। পরিবহন সেক্টরে অস্থিরতা দেখা দেবে। শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে, ফলে আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে। 

একদিকে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে জাতীয় অর্থনীতির ওপর চাপ আরও বাড়বে। অন্যদিকে বেকারত্ব সমস্যা আরও প্রকট হবে। তিনি অনতিবিলম্বে জ্বালানি তেলের এই বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করার জোর দাবি জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ চরম সংকটের মুখোমুখি। বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে, জনগণের প্রতি তাদের কোনো দ্বায়বদ্ধতা নেই। সরকারের ব্যর্থতায় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, হত্যা, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা ও সন্ত্রাসে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আজ দুর্বিষহ। দেশের মানুষ এখনো করোনা মহামারির আঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেনি, তারা মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সর্বোপরি দেশের সার্বিক অর্থনীতি আজ দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এই নৈরাজ্যকর অবস্থা চলতে পারে না। দেশের এই ক্রান্তিকালে জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই।

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ সরকারের নেওয়া সব অন্যায়, অযৌক্তিক ও অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় রাজপথে গণআন্দোলনের মাধ্যমে দেশের জনগণ এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামতে বাধ্য করবে। 

বিক্ষোভ মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য শামছুর রহমান, ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, হাফিজুর রহমান, আব্দুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মোবারক হোসাইন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী পুর্বের সভাপতি আরিফুর রহমান, ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের সভাপতি আব্দুল কাইউম মুরাদসহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের বিভিন্ন থানা আমির ও সেক্রেটারিরা।

অন্যদিকে সরকার লাগামহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের জন্যই অস্বাভাবিকভাবে জ্বালারির মূল্যবৃদ্ধি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম।

জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ও অবিলম্বে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে জোহরের নামাজের পর রাজধানীর শ্যামলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে শিশু মেলার সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে একথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, সরকার দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেই নিজেদের লাগামহীন দুর্নীতি ও লুটপাট অব্যাহত রাখার জন্যই অস্বাভাবিকভাবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করেছে। সরকার অতীতে দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণের কথা বলে কুইক রেন্টালের নামে ৭০ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিলেও দেশে এখন লোডশেডিংয়ের মহোৎসব চলছে।

তিনি অবিলম্বে সরকারকে কাণ্ডজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখার আহ্বান জানান। অন্যথায় সরকারকে জনরোষে পড়তে হবে।

রেজাউল করিম বলেন, সরকার বিশ্ব বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কথা বললেও তা মোটেই সত্য নয়। গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে  বিশ্ব বাজারে রেড ক্রুড তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৮০ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ কমে ১০৩ দশমিক ১৫ ডলার হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেলে ১ দশমিক ১৮ ডলার বা ১ দশমিক ২ শতাংশ কমে ৯৭ দশমিক ৪৪ ডলার হয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল আমদানিকারক দেশ চীনে করোনাজনিত লকডাউনের কারণে জুলাইয়ে উৎপাদন কমেছে। মার্কেট ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজার্স সূচক (পিএমআই) আগের মাসের ৫১ দশমিক ৭ থেকে জুলাই মাসে ৫০ দশমিক ৪ এ নেমে এসেছে। অন্যদিকে জাপানের উৎপাদনও গত ১০ মাসের মধ্যে জুলাইয়ে সবচেয়ে কমেছে। তাই এই মুহূর্তে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা নেই।

তিনি বলেন, অস্বাভাবিকভাবে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষক থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মানুষই ভোগান্তির শিকার হবেন। দাম বাড়বে নিত্যপণ্যের। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে গণপরিবহন, কৃষি ও সেচ খাতে। দেশের বিদ্যুৎখাতও এর আওতার বাইরে থাকবে না। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেল ব্যবহার করা হয়। সরকারের অদূরদর্শিতার কারণেই এমনিতেই দেশের অর্থনীতিতে বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। তারা বাজারে স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এমতাবস্থায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি সার্বিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। 

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহনগরীর সহকারী সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, মাহফুজুর রহমান ও ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জিয়াউল হাসান, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ ও জামাল উদ্দীন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য ডা. শফিউর রহমান, মুহাম্মদ আতাউর রহমান সরকার, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম খলিল ও আব্দুল হান্নান, ছাত্রনেতা জাকির হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।

জেইউ/জেডএস