বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা, চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর ১৯৭৭ সালের নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এর সব কিছুর পেছনে ছিল খুনি জিয়াউর রহমান। তার মতো পাষণ্ড মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিগত সহস্রাব্দে যদি কাউকে চেঙ্গিস খান, তৈমুর লং, নাদির শাহ নাম দিতে হয় তাহলে খুনি জিয়াকে দিতে হবে। কালো চশমা পরে থাকতেন যাতে মানুষ তার চোখ দেখতে না পারে।

৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক ‘গুম দিবস’ উপলক্ষে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

১৯৭১ সাল থেকেই পাকিস্তানের চর হিসেবে মেজর জিয়া কাজ করেছে দাবি করে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, পাকিস্তানই তাকে পূর্ব বাংলায় পাঠিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল চর হিসেবে কাজ করা। তিনি মোটেও মুক্তিযোদ্ধা ছিল না, পাকিস্তানের চর ছিলেন। তার বন্দুক থেকে একটি গুলিও ফোটেনি। আরও পাকিস্তানি চর পাঠিয়েছিল আইএসআই। ফারুক, রশিদ ডালিম সবাই চর হিসেবে কাজ করেছে। তখন থেকেই জিয়ার উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস, পাকিস্তানে পরিণত ও তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করা।

মানিক বলেন, তাকে বলা হয়েছিল, কীভাবে সব বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শেষ করে দেওয়া যায়। একটি জাপানি বিমান ঢাকা বিমানবন্দরে আনা হয়েছিল। এতে বিমান বাহিনীর মোটেও কোনো ভূমিকা ছিল না। সেটিই মোক্ষম সুযোগ হিসেবে নিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করে দেড় হাজারের বেশি মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। আড়াই হাজারের বেশি সেনা সদস্যকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়। ওই বিচার কোনোভাবেই নমুনায় পড়ে না। মিনিটে একজন করে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ফাঁসির নিয়ম হলো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও লাশ ফিরিয়ে দেওয়া। কিন্তু আত্মীয়-স্বজনরা জানতে পারেননি, লাশ কোথায়, বাঘের পেটে নাকি কুকুরকে দেওয়া হয়েছিল। সভ্যতার যুগে জিয়াই এধরনের অসভ্য কাজ করে ধিকৃত হয়েছে।

জিয়ার নাম বাংলাদেশে রাখতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়ার নাম মুছা যাবে না। জিয়ার নাম থাকবে তবে মীর জাফর হিসেবে। হৃদয়হীন-খুনি হিসেবে, পাকিস্তানি দালাল হিসেবে তার পরিচিতি থাকবে।

জাতীয় সংসদ থেকে জিয়ার নামে সব স্থাপনা অপসারণ করতে হবে। বিচারের নামে প্রহসন করে মিনিটে একজন করে ফাঁসি দেওয়ার ঘটনায় জিয়ার মরণোত্তর বিচারের জন্য একটি রিট হতে পারে। সেটির ভিত্তিতে হাইকোর্ট সেই বিচার রিভিউ করতে পারেন।

পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী মামলায় বলা হয়েছে, সামরিক সরকারের অধীনে সব কিছুই ছিল অবৈধ। যাদের সাজা দেওয়া হয়েছিল তাদের মওকুফ চেয়ে রিট করা হোক। হাইকোর্ট রিভিউ করতে পারেন। চার নেতার মৃত্যু ও ১৯৭৭ সালে গণহত্যার বিচারের জন্য আলাদা কমিশন গঠন করার দাবিও জানান তিনি।

গত ১৫ বছর যারা বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। খুনি জিয়ার স্ত্রী বেগম জিয়াও পাকিস্তান প্রেমি। তাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার আওয়ামী লীগের উচিত হবে বিচার দাবি পূরণ করা।

বিএনপি মহাসচিব ফখরুলকে রাজাকারের সন্তান দাবি করে বিচারপতি মানিক বলেন, চখা মিয়া নামে কুখ্যাত রাজাকারের ছেলে ফখরুল সাহেব বলছেন, বিএনপির জনপ্রিয় দল। নির্বাচন হলেই নাকি তারা জিতে যাবেন। এখানে আসেন দেখে যান মির্জা ফখরুল, মানুষ কীভাবে মেজর জিয়াকে ঘৃণা করছে।

অনুষ্ঠানে এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক, বিশেষ অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ, এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, সাবেক আইজি প্রিজন্স বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী খান, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক লে. কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির। 

সশস্ত্র বাহিনীতে গণহত্যা বিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক আনোয়ার কবির এবং ১৯৭৭ সালে গণফাঁসি ও গণগুমের শিকার সেনা-বিমানবাহিনীর সদস্যদের সন্তানরা।

জেইউ/এসএম