বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আমাদের টার্গেট হলো এ সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন নাকি সুষ্ঠু হবে। তার এ কথার মানে হলো, আগের নির্বাচনগুলোতে ডাকাতি হয়েছে। তাই তো?

তিনি বলেন, আমরা ভোটারবিহীন সরকার দেখেছি। খালেদা জিয়ার আহ্বানে নির্বাচন বয়কট করেছি। তখন ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছিলেন। আর উনি (শেখ  হাসিনা) বলেন, আগামী সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তার কথা এদেশের জনগণ বিশ্বাস করে না।

রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বাড্ডায় আয়োজিত এক জনসভায় এসব কথা বলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।  জ্বালানি তেল-নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিএনপি মহানগর উত্তর ৮ জোন এ জনসভার আয়োজন করে।  গুলশান, বাড্ডা ও রামপুরা থানার বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা এতে অংশ নেন। 

সরকারের উদ্দেশে খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপির একটাই দাবি, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, সংসদ বাতিল করুন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হোক। এরপর আপনারা রাস্তায় আসুন, সেখানে পরীক্ষা হবে।

তিনি বলেন, সরকার মেগা প্রজেক্ট করে, মেগা দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা প্রচার করে বাংলাদেশকে দেউলিয়া করে ফেলেছে। ডলারের অভাবে বিদেশ থেকে আমদানি করা যাচ্ছে না। ফলে হঠাৎ করে সরকার জ্বালানি তেলের দাম শতকরা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম লাগামহীন।  যারা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে তারা আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট। এ কারণে সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, গ্যাসের কারণে আমাদের মা-বোনেরা রান্না করতে পারছে না। শুধু গ্রামে নয়, রাজধানীতেও বিদ্যুৎ দিতে পারছে না সরকার। এ রকম রুদ্ধশ্বাস অবস্থার মধ্যে স্বৈরাচারী কারণে আজ দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের কিনারায় চলে গেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ ক্ষমতাসীন সরকারের দুর্নীতি, তাদের বিদেশে টাকা পাচার। দেশের মানুষের প্রতি সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। কারণ তারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে। গরিব মানুষের হাঁড়িতে কিছু নেই। আপনারা খবর নিয়ে দেখুন।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে আওয়ামী লীগকে হাইব্রিড সরকার বলে উপাধি দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়ে সাফাই গাইছেন— দেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে গণতন্ত্রের সুবাতাস বয়।  আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, গণতন্ত্রকে বারবার হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না

তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। আর বিএনপি যখনই ক্ষমতায় থেকেছে, তখন দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য সব পদক্ষেপ নিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ লুটপাটের অর্থনীতি কায়েম করছে। তারা অর্থনীতিকে মেরামত করতে পারবে না। তাদের পক্ষে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।  বিএনপির দায়িত্ব দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং অর্থনীতিকে মেরামত করা। এ দায়িত্ব আমাদের সবাইকে নিতে হবে।

বিএনপির এ নেতা বলেন, দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে জনগণের মধ্যে ইস্পাত কঠিন গণ ঐক্য সৃষ্টি করে এ সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। অবৈধ সংসদ বাতিল করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। দেশে কোনো ইভিএম মার্কা ডাকাতি চলবে না। জনগণ নিজের হাতে নিজের ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। আমরা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূইয়া, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, মহানগর উত্তর বিএনপি নেতা এবিএম রাজ্জাক প্রমুখ।

এএইচআর/আরএইচ