‘পতাকা উত্তোলন দিবস’ উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়

বাংলাদেশের গণতন্ত্র হারিয়ে গেছে, স্বাধীনতার সমস্ত চেতনা লুণ্ঠন করে নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় বাকশাল কায়েম করেছিল। সুতরাং তাদের রাজনৈতিক কেমিস্ট্রির মধ্যে একটি স্বৈরাচারী মনোভাব থেকে গেছে। 

আজ (মঙ্গলবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। ‌‘পতাকা উত্তোলন দিবস’ উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। 

সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সকালে পত্রিকায় দেখলাম পুলিশের আইজি সাহেব একটা প্রশ্ন রেখেছেন। প্রশ্নটি হলো- পুলিশকে প্রতিপক্ষ ভাবা হচ্ছে কেন? আমাদেরও তো একই প্রশ্ন, আপনি অত্যন্ত শিক্ষিত মানুষ, ব্রাইট অফিসার, সুদর্শন, আপনি কি একবারও প্রশ্ন করেছেন নিজেকে যে, পুলিশকে কেন প্রতিপক্ষ ভাবছে জনগণ। কারা প্রতিপক্ষ ভাবছে? সে প্রশ্ন আপনার নিজেকে করেই উত্তর খুঁজে বের করুন। আজ যখন নির্বাচন হয় সে নির্বাচনে পুলিশ গিয়ে ভোট দিয়ে দেয়। অন্য কাউকে দরকার হয় না। আজ যখন রাজনৈতিক ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে, গণতান্ত্রিকভাবে সাংবিধানিক অধিকার অনুসারে প্রতিবাদ করতে যায়, তখন নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন কেন করা হয়? আজ কেন বলা হয় থানায় থানায় দেশটা আমরা চালাই? আমরাই তো সরকার তৈরি করেছি, এসবের ব্যবস্থা আমরাই করব, সেই প্রশ্নটা একটু নিজেদের করুন, চেষ্টা করুন, তাহলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।     

ফখরুল বলেন, আজকে আমি অত্যন্ত আশাবাদী হয়ে উঠেছি আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, উদীয়মান এবং প্রতিশ্রুতিশীল নেতা নুরের বক্তব্য শুনে। সেই বক্তব্যের মধ্যে একটি কথাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, সমস্ত রাজনৈতিক শক্তি, তারা আজ ঐক্যবদ্ধ হতে চায়। ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলে এই সরকারের পতন ঘটাতে চায় এবং সত্যিকার অর্থে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বিএনপিকে নেতৃত্ব দিতে হবে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।  আজকে একমাত্র রাজনৈতিক সঙ্কট হচ্ছে আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আজকে আমাদের গণতন্ত্র হারিয়ে গেছে, স্বাধীনতার সমস্ত চেতনা গুলোকে লুণ্ঠন করে নিয়েছে। 

স্বাধীনতা এসেছে এদেশের মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই- উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার পরে যারা ক্ষমতায় বসলেন তাদের হাতেই প্রথম গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। তারাই সর্বপ্রথম পুরনো কালাকানুনগুলো নিয়ে এসেছেন। তারাই সর্বপ্রথম একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিল। সুতরাং তাদের রাজনৈতিক কেমিস্ট্রির মধ্যে একটি স্বৈরাচারী মনোভাব থেকে গেছে। 

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে ২৫ মার্চ কালোরাত্রির পরে। মুক্তিযুদ্ধ বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে শুরু হয়নি। যেদিন সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয় সেদিন শুরু হয় যুদ্ধ। আর সেটি করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। 

দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধ এক কথা নয়। যারা স্বাধীনতার সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধকে একসঙ্গে মিলিয়ে ফেলে, তারা মনে হয় সব কিছু এক সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন ও ইশতেহার পাঠ এই কোনটাই কি সে সময় কোনো রাজনৈতিক দলের নির্দেশে হয়েছিল? আমার তো মনে পড়ে না। ওই সময়ে মানুষ এদেশের যাদের বিশ্বাস করতো, যাদের প্রতি আস্থা ছিল তারা সে সময় দেশে কোনো ভূমিকা রাখেনি। সেসময় বার কয়েক ছাত্রসমাজ রাস্তায় নেমেছিল, পতাকা উত্তোলন ও ইশতেহার পাঠ করেছিল। 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ছোট মনের অধিকারী মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আজ যারা ক্ষমতায় আছে তাদের মন খুব ছোট। তারা ইতিহাস মানে না। ওরা মানে না এই যে ছাত্রসমাজ আজ রাজপথে আন্দোলন করছে, মিছিল করছে, এটা একদিনে হয়নি। এরা কেবল নিজেদের কথা বলতে চায়, অন্যের কথা শুনবে না। অন্য কেউ কথা বলুক, তা বলতে দেবে না। এদের প্রশংসা ছাড়া কাউকে সমালোচনা করতে দেবে না। কেউ যাতে না বলতে পারে সেজন্য বারবার ভয় দেখাবে, টুঁটি চেপে ধরবে, জেলে দেবে। জেলের মধ্যে মৃত্যুবরণ করবে, কিন্তু তারা আপনাকে তাও ছাড়বে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো লোক অসুখ হয়ে মারা গেলে আমাদের কী করার আছে। তাহলে তো আর তদন্তের দরকার নেই, উনি তদন্ত করে বলেছেন। ৫০ বছর পরে যখন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছেন তখন আমি আপনাদের বলতে চাই, স্বাধীনতার লড়াই মানে গণতন্ত্রের লড়াই।

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, কয়েকদিন আগে জেলে লেখক মুশতাক আহমেদকে হত্যা করা হয়েছে। সেটা নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করেছি। প্রেসক্লাবের মতো জায়গায় কখনও পুলিশ ঢোকে না। ছাত্রদলের সেই সমাবেশ ঘিরে সেদিন পুলিশ প্রেসক্লাবেও টিয়ারশেল মেরেছিল, প্রেসক্লাবেও ঢুকেছিল। এটা হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশের একটা চিত্র। আইনকে সরকারের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ভিন্নমত বিরোধীদের দমনের জন্য। সেই ক্ষেত্রে আমরা একটি কথা বলতে পারি, অন্যায় যখন নিয়ম হয়ে দাঁড়ায় প্রতিরোধ তখন কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলক মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আবদুর রব, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ।

এমএইচএন/এনএফ