সমাবেশে কথা বলছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, আবরার ফাহাদের স্মরণসভায় হামলা হয়েছে। আমরাও আওয়ামী লীগ নেতাদের বলতে পারতাম, আপনারা ঘর থেকে বের হলে যেখানে পাওয়া যাবে, সাইজ করে দেব। কিন্তু সেটা বলছি না, আমরা বলছি আপনারা সাবধান হয়ে যান। নইলে এরকম ব্যবস্থা আমাদেরও নিতে হবে।

সোমবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেট্রো বাংলার সামনে ‘রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে বাধা, হামলা, মামলা, দমন-পীড়ন, গুলি-হত্যা’ বন্ধের দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

মান্না বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখন ধুলায় গড়াগড়ি খাচ্ছে সরকারের অসদাচরণের কারণে। আমাদের যত অর্জন, সব ডুবতে বসেছে। সারা দুনিয়ায় এই সরকারের আর কোনো সম্মান নেই। দেশের মানুষ লাল কার্ড দেখিয়েছে। আর বিশ্বের বড় বড় দেশের সরকার বলছে, আমাদের কাছ থেকে একটি হলুদ কার্ড নিয়ে যাও, ভালো হয়ে যাও। তাহলে বিবেচনা করে দেখব।

তিনি বলেন, মানুষ ব্যাগ নিয়ে বাজারে যায়, কিন্তু পকেটে টাকা নেই। দেশজুড়ে এখন দুর্ভিক্ষের অবস্থা। মানুষ এখন খাবার কম খায়। অনেকে এখন ভাত পর্যন্ত রেশন করার চেষ্টা করছে। কারণ ক্ষুধা নিবারণ করে তাদের সারা মাস চলবে না। তাই সব দেখেশুনে আমরা বলেছি, এই সরকার থাকলে আমাদের কষ্ট যাবে না।

মান্না বলেন, সরকার চলে গেলে আমরা এই দেশ বদলাব। চালের দাম কমাব, বিদ্যুতের সংকট দূর করব, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখব, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করব, গরিব মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করব এবং মানুষের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করব।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে আট কোটি লোক গরিব। চার কোটি মানুষের চাকরি নেই, যেখানে এক কোটি শিক্ষিত। আমরা ক্ষমতায় গেলে মানুষের কষ্ট দূর করব, কারণ আমরা চুরি করব না।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উদ্বোধন ঘটাতে চাই। তার জন্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত লাগবে। গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র লাগবে। সংবিধান সংস্কার করতে হবে। ক্ষমতার জবাবদিহিতা ও ভারসাম্য তৈরি করতে হবে। সাত দফা প্রস্তাব আমরা জাতির সামনে তুলে ধরেছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এমনকি বিএনপিও আজকে ক্ষমতার জবাবদিহিতা, ভারসাম্য, সংবিধানকে সংস্কার করে গণতান্ত্রিক করার দিকে এগিয়ে আসছে। কাজেই আমাদের পরিষ্কার লক্ষ্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের বিচার হবে, কিন্তু প্রতিশোধ নেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, আমরা যদি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চাই, তবে আমাদের গণতন্ত্রে ফিরতে হবে। সেজন্য সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই সরকার একদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবে, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নতুন শাসনব্যবস্থার জন্য ঐকমত্য তৈরিতে সহায়তা করবে। আওয়ামী লীগকে পরিষ্কার করে বলি, গণতন্ত্র উত্তরণের পথে ভালোয় ভালোয় আসুন। যদি না আসেন, জনগণের অভ্যুত্থান থেকে কেউ আপনাদের রক্ষা করতে পারবে না।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকারের মন্ত্রী, এমপি, নেতারা বেহেশতে আছেন, কিন্তু দোজখে আছে কোটি কোটি মানুষ। সে কারণে চালের কেজি ২০০ টাকা হলেও গত ১৫ বছরে তারা যে লাখ-কোটি টাকা তারা হাতিয়ে নিয়েছেন, আগামী ২০০ বছর তাদের চৌদ্দ পুরুষ খেলেও তা শেষ হবে না। এই কারণে মানুষের দারিদ্র্য নিয়ে তারা তামাশা করেন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই নৌকার মধ্যে পানি উঠতে শুরু করেছে। নৌকা ডুবতে শুরু করেছে। জাসদ মহাজোট থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। নৌকায় আরও যখন পানি উঠবে, আরও অনেক শরীকেরা হয়তো নৌকা থেকে আগেভাগে কেটে পড়বেন।

গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে ইসির সঙ্গে ডিসি-এসপিদের মতবিনিময় হয়েছে। সেখানে সদ্য সাবেক জ্বালানি সচিব ছিলেন। বর্তমান নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান যখন কথা বলা শুরু করলেন, ডিসি-এসপিরা হট্টগোল শুরু করে দিলেন। তাকে পাত্তাই দিলেন না। এই হচ্ছে আজকের প্রশাসনের অবস্থা। কোনো জায়গায় চেইন অব কমান্ড নাই। নির্বাচন কমিশনার সাংবিধানভাবেও অনেক শক্তিশালী। তার কথা না শুনে কীভাবে ডিসি-এসপিরা হট্টগোল করেন? বেচারা নিরুপায় হয়ে বলেছেন, আপনারা কি আমার কথা শুনবেন? অধিকাংশ বলেছেন, শুনবেন না। নির্বাচনের আগেই যদি নির্বাচন কমিশনকে তারা পাত্তা না দেন, নির্বাচনের সময় তো দেবেনই না। 

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক (অব.) আবদুল মালেক ফরাজি।

এএজে/আরএইচ