গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা না করা পর্যন্ত অধিবেশনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় পার্টি। রোববার রাতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় দলটি।

কিন্তু জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করা হবে- আজ (সোমবার) স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরীর এমন আশ্বাসে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সংসদে যোগ দেন দলটির সংসদ সদস্যরা।

এর মাধ্যমে সরকারকে একটি বার্তা দিতে চেয়েছে জাতীয় পার্টি। আর সেটি হলো- জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরকার যেন প্রভাব বিস্তার না করে। পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জাতীয় পার্টি নিজেই নেবে। এখানে সরকারের প্রভাব আর চলবে না। 

জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা বলছেন, যতই সমালোচনা করা হোক না কেন, দল এখনো সরকারের সঙ্গেই আছে। তাই বলে সরকার পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে, এটা তো ঠিক না।

গত ৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল সিদ্ধান্ত নেয়, রওশন এরশাদকে সরিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা করার। সেই অনুযায়ী সংসদের স্পিকার শিরিন শারমীনকে চিঠি দিয়ে তা জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করে গেজেট প্রকাশ করতে গড়িমসি শুরু হয়।

এরই প্রতিবাদে রোববার জাপার সংসদ সদস্যরা অধিবেশন বর্জনের ঘোষণা দেন। এর মাধ্যমে সরকারকে বার্তা দেওয়া হয়- আমাদের পার্টি আমরাই চালাতে চাই। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপ চলবে না। এরপর সরকারের টনক নড়ে। সংসদ থেকে স্পিকার ফোন দিয়ে আশ্বাস দেন যে, জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করে গেজেট প্রকাশ করা হবে। তার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের অধিবেশনে যোগ দিতে নির্দেশ দেন জি এম কাদের। 

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে সমস্যার কারণে আমরা সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তা সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছেন স্পিকার। কাজেই তার আশ্বাসের ওপর আস্থা রেখে সংসদে যাব।

তিনি আরও বলেন, সমস্যা তৈরি করা আমাদের কাজ নয়। আমরা সমস্যার সমাধান চেয়েছিলাম। আশা করছি, সমস্যার কার্যকর সমাধান হবে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন,  আমরা সরকারকে একটিই বার্তা দিতে চাই যে, আমাদের পার্টি আমরা চালাতে চাই। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। আমরা তাদের দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে নাক গলাই না, সরকারও যেন আমাদের পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো প্রভাব বিস্তার না করে। জাতীয় পার্টি কাকে সংসদের নেতা বানাবে, সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। জাতীয় পার্টির নিজস্ব গঠনতন্ত্র আছে, সেই অনুযায়ী দল চলবে। সেখানে অন্য কারো হস্তক্ষেপ কেন আমরা মেনে নেব?

এই নেতা আরও বলেন, আমরা সব এমপিরা (সংসদ সদস্যরা) নিদিষ্ট কারণে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তা হলো জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করা। কিন্তু কেন সেটা সরকার বাস্তবায়ন করবে না? কেন সরকার সেখানে একপক্ষকে সুবিধা দেবে— সেই কারণে আমরা হার্ডলাইনে গিয়ে সরকারকে বোঝাতে চাই, আপনারা আমাদের নিয়ে খেলাধুলা করতে চাইলে, আমরাও সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব। আমরা এখন পাল্টা খেলা দেখানো শুরু করবো। সেটা বুঝতে পেরেই স্পিকার জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করে গেজেট প্রকাশ করার আশ্বাস দিয়েছেন। 

নাম না প্রকাশ করার শর্তে জাতীয় পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হলেও স্পিকার কিন্তু সংসদে নিরপেক্ষ ব্যক্তি। সংবিধান অনুযায়ী তিনি নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করবেন এটাই নিয়ম। ফলে, কোনো দল কোনো সিদ্ধান্ত নিলে গেজেট প্রকাশ করে তা বাস্তবায়ন করাই তার কাজ। কিন্তু তিনি সেটা না করে গড়িমসি করেন, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে থাকবেন, এটা তো হতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচন খুবই ঘনিয়ে আসছে। বিদেশিরাও বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। এখনো যদি সরকার তার আগের চরিত্র থেকে সরে না আসে। আগের মতো অন্যান্য পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে তাহলে তার ফল কী হতে পারে,  তা আমরা গতকাল সংসদ বর্জনের ঘোষণার মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি।        

রওশনের সঙ্গেও সমঝোতা হতে পারে

জাতীয় পার্টির চিফ প্যাট্রন রওশন এরশাদের সঙ্গেও সমঝোতায় যাবেন পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। কোন প্রক্রিয়ায় তার সঙ্গে সমঝোতা হবে, তা নিয়ে আগামী কয়েক দিনে দলের বৈঠকে ঠিক করা হবে। তা নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো কথা বলতে নারাজ জি এম কাদেরপন্থীরা।

গত ৮ অক্টোবর জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের এক বৈঠকে রওশন এরশাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় দলের যুগ্ম মহাসচিব ও প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাগ্নে আদিলুর রহমানকে। 

রওশন এরশাদের সঙ্গে কথা বা সমঝোতা হয়েছে কি না জানতে চাইলে সোমবার বিকেলে বনানী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সামনে আদিলুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যাডামের সঙ্গে কথা হয়নি। কারণ উনি চিকিৎসা, ঘুম, ব্যায়াম নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ফলে, উনার সঙ্গে কথা বলার টাইমিং হয় না। তবে, রওশন এরশাদের সঙ্গে ব্যাংককে অবস্থান করা ছেলে সাদ এরশাদের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও জানান আদিল।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে  জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, জাতীয় পার্টির বর্তমান অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে রওশন এরশাদের সম্মেলন ডাকাকে কেন্দ্র করে। তিনি সম্মেলন ডেকে বিভক্তির সৃষ্টি করেছেন। তিনি সম্মেলন না ডাকলে এতো কিছু হতো না। এখন যেহেতু তিনি সম্মেলন স্থগিত করেছেন, ফলে সমঝোতা হতেও পারে। এ নিয়ে আমরা হয়তো আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বৈঠকে বসব। তখন বোঝা যাবে, আমরা রওশন এরশাদের সঙ্গে কোন প্রক্রিয়ায় সমঝোতায় যাব।

এএইচআর/আরএইচ