সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ‘জেলখানায় আটক কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে, এটা আমরা আমাদের জেল জীবনে দেখিনি। আমরা অনেকেই জেল খেটেছি। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। তাই মুশতাকের ঘটনা স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া যায় না।’

শুক্রবার (৫ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সিপিবি আয়োজিত ‘আটককৃত ছাত্র নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি’তে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

সেলিম বলেন, ‘আপনারা দেখবেন, সব বড় বড় মিডিয়াই লুটেরাদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। সুকৌশলে এটাকে নিয়ন্ত্রিত রাখার জন্য সরকার নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। কারণ, সোশ্যাল মিডিয়াতে (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) মানুষ প্রকৃত সত্যটা জানছে। সুতরাং সোশ্যাল মিডিয়াতে যেন কোনো খবর প্রচারিত না হয়, সত্যিকার তথ্য যাতে মানুষ জানতে না পারে সেজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন চালু করেছে। লুটপাটকারীর এক শতাংশের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য একের পর এক কালাকানুন জারি করা হচ্ছে। সেই কালাকানুন ব্যবহার করে যারা সত্য প্রকাশ করতে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে আসছেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। যেখানে আমরা এই সমাবেশ আয়োজন করেছি, সেখানে ১৯৭৩ সালে পুলিশ গুলি করে ছাত্র ইউনিয়নের মতিউল ও কাদেরকে হত্যা করেছিল। তখন আমি বলেছিলাম, যার হাত সন্তানের রক্তে রঞ্জিত তাকে জাতির পিতা আমরা মানি না। এইটা কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কথা ছিল না, এইটা ছিল সরকারের সমালোচনা। আজকে ক্ষমতায় থাকার জন্য শেখ হাসিনা রাষ্ট্র, সরকার সব এক করে ফেলেছেন। লুটপাটের জন্যে গদি রক্ষা করতে হবে। গদি রক্ষা করতেই এই ধরনের নিবর্তনমূলক আইন জারি রাখা হয়েছে। লেখক, কার্টুনিস্ট, সাংবাদিক, ছাত্রদের আজকে ডিজিটাল আইনে গ্রেফতার করে জেলে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। সরকার সুপরিকল্পিতভাবে বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে।’

সমাবেশে অন্যান্যরা বলেন, অদ্ভুত উটের পিঠে দেশ চলছে। শিকদার গ্রুপের মালিকসহ অসংখ্য খুনের আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ এই ছাত্ররা যারা লেখক হত্যার বিচার চেয়ে শান্তিপূর্ণ মশাল মিছিল করেছে তাদের জামিন হচ্ছে না। পৃথিবীতে কোনো স্বৈরাচার এভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। দেশের ছাত্র শ্রমিক জনতা একত্র হয়ে জেলায় জেলায় আন্দোলনে জড়ো হচ্ছে। ২০০৬ সাল থেকেই তথ্যপ্রযুক্তি আইনকে ধীরে ধীরে কুখ্যাত আজকের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পরিণত করা হয়েছে। যে ৫৭ ধারা মানুষের বাকস্বাধীনতা স্তব্ধ করে দিয়েছিল, যে আইনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন, জনমত তৈরি হয়েছিল, বাতিলের দাবি উঠেছিল সেই ৫৭ ধারারই নতুন সংস্করণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। সরকার ও রাষ্ট্র এক বিষয় না। সরকারের সমালোচনা জনগণের অধিকার, এই অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- সিপিবির কেন্দ্রীয় সম্পাদক জলি তালুকদার, সহকারী সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ কাফী রতন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল কাদের, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি জিয়া হায়দার ডিপটি, ছাত্রনেতা সাখাওয়াত ফাহাদ, মমতা চক্রবর্তী প্রমুখ।

এমএইচএন/এফআর