# আ.লীগের ২২তম সম্মেলন ২৪ ডিসেম্বর
# সাদামাটা সম্মেলনেও রদবদলের গুঞ্জন
# বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে আনা হতে পারে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতা
# জাতীয় নির্বাচন মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত আসবে

আগামী ২৪ ডিসেম্বর হতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। তারিখ ঘোষণার পর থেকে নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা উৎসব উৎসব ভাব বিরাজ করছে। দলের প্রধান কার্যালয় এবং সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বেড়েছে নেতাদের আনাগোনা। এরই মধ্যে গঠন করা হয়েছে ১১টি সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি। তবে সম্মেলনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে কানাঘুষা। কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক, তা নিয়ে চলছে জল্পনা!

বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন নাকি নতুন মুখ আসছে- কেন্দ্র থেকে তৃণমুল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মাঝে একই আলোচনা চলছে। পদপ্রত্যাশীরাও মুখ খুলছেন না। তবে বর্তমানে তারা বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলন, বর্ধিত সভা আর সহযোগী সংগঠনের সমস্যা সমাধানের কাজ করছেন। তৃণমূলের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করছেন।

৮১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী সংসদে এবার বেশ রদবদল আসতে পারে। বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের নেতৃত্বে আনা হবে। 

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তী সভাপতি হিসেবে আবারও দায়িত্ব পাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা- এমনটাই শোনা যাচ্ছে। তবে আগামীর নেতৃত্ব বাছাইয়ের দায়িত্ব সম্মেলনের কাউন্সিলরদের হাতে তুলে দিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের একজন কাউন্সিলরও যদি বলে আমাকে চায় না, আমি নেতৃত্বে থাকব না। দীর্ঘদিন তো হয়ে গেছে, অবশ্যই আমি চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক। কাউন্সিলররাই নেতৃত্ব ঠিক করে, তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’

আরও পড়ুন : ক্ষমতার বলয়ে ১৩ বছর, আওয়ামী নেতৃত্বে নতুন মুখ কম

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের নেতৃত্বে একজনই, তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ওনার (শেখ হাসিনার) সাথে কে সাধারণ সম্পাদক হলে উনি স্বস্তিবোধ করবেন, কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন সেটা একান্তই ওনার ব্যাপার। দলের মধ্য থেকে তাঁকে এই ক্ষমতা দেওয়া আছে। শুধু ক্ষমতাই নয়, আমাদের সবার আস্থা, বিশ্বাস, ভালোবাসা, আনুগত্য- সবই আছে। সুতরাং উনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই কার্যকর হবে।’  

আরও পড়ুন : বাংলাদেশে কার্যকর সংসদ এবং সুশাসনের স্বপ্ন 

আওয়ামী লীগের কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, দলের ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী সংসদে এবার বেশ রদবদল আসতে পারে। বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের নেতৃত্বে আনা হবে। গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে যারা নিজেকে বিতর্কিত করেছেন তাদের অনেককে বাদ দেয়া হবে, আবার কাউকে কাউকে কম গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হবে। নতুন মুখ, নতুন নেতৃত্বের যে প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড করছে, এর প্রতিফলন ঘটবে এবার। এ লক্ষ্যে দলের নবীন-প্রবীণ নেতাদের আমলনামা বিশ্লেষণ চলছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও তৃণমূলের সমস্যা সমাধানে যারা ব্যর্থ তাদের ব্যাপারেও ভাবতে শুরু করেছে দলের হাইকমান্ড।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পরিবর্তন কিংবা রদবদলের বিষয়টি আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করে। তিনি এবং সম্মেলনের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে রদবদল হবে।

আরও পড়ুন : কৌশল-অপকৌশল-কূটকৌশল 

আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ সাধারণ সম্পাদক। টানা দ্বিতীয় বার এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মাঝে বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকলেও এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছেন। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে তাকে আবারও স্বপদে রাখার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আলোচনায় আরও রয়েছেন যারা

তবে কাউন্সিল সামনে রেখে এ পদের বিপরীতে আরও অনেক নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, অ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক। যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না কেউই।

অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড, নীতি-নৈতিকতা, সততা ও সাহস দেখে যোগ্য লোকদের নেতৃত্বে আনা হবে। কেউ যদি বিগত দিনে খারাপ করে তাকে তো ওপরে উঠিয়ে দেয়া যাবে না।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতি ও নৌকা-বিরোধিতার কারণে এবার কপাল পুড়তে পারে অনেক নেতার। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য, নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান, নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে দেয়ার মতো ‘অপকর্মে’ জড়িতদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এজন্য গোয়েন্দা সংস্থারও সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে শীর্ষ কয়েকজন নেতার বাদ পড়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বিভিন্ন আলোচনায় বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন।

আরও পড়ুন : রাজনীতি কি মরণ খেলা? 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত কাউন্সিলের অধিবেশনের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত হয়। নেতৃত্ব বাছাইয়ের জন্য একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। সেই নির্বাচন কমিশন সম্মেলন মঞ্চে ওঠার পরপর আমাদের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। এরপর কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচিত হয়।

তিনি বলেন, প্রথমে সভাপতি নির্বাচিত হয়। তারপর সাধারণ সম্পাদক। এরপর কাউন্সিলররা সভাপতিকে বাকি কমিটি গঠনের দায়িত্ব দিয়ে দেন। পূর্বে এভাবে কাউন্সিলররা শেখ হাসিনাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি মঞ্চে বসেই একটা কমিটি ঘোষণা করেন। কাউন্সিলরদের মতামতে কমিটি করা হয়। এটা আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। 
 
বাহাউদ্দিন নাছিম আরো বলেন, দলের পক্ষ থেকে আমাদের নেত্রী হিসেবে উনি (শেখ হাসিনা) অপরিহার্য। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নবীন ও তরুণদের এবং নারী নেতৃত্বকে এগিয়ে আসার সুযোগ করে দেবে। যাতে আগামী দিনে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী গণবান্ধব, ভোট বান্ধব সংগঠন তৈরি হয়। অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড, নীতি-নৈতিকতা, সততা ও সাহস দেখে যোগ্য লোকদের নেতৃত্বে আনা হবে। কেউ যদি বিগত দিনে খারাপ করে তাকে তো ওপরে উঠিয়ে দেয়া যাবে না। যে ভালো করবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে।

এমএসআই/জেএস