ফাইল ছবি, সংগৃহীত

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করতে আগ্রহী গণতন্ত্র মঞ্চ। এই যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি ও রূপরেখা কী হবে তা ঠিক করতে বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে বসছে গণতন্ত্র মঞ্চ। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বেলা ১১টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

গণতন্ত্র মঞ্চ সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের ৭ দলের শীর্ষ নেতাসহ ১৪ জনের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেবে। আর বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য অংশ নেবেন। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে যে যুগপৎ আন্দোলন হবে, তার ভিত্তি কী হবে তা আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে বৈঠকে। এছাড়া আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে কী ধরনের বার্তা থাকবে, বিএনপির কাছে তাও জানতে চাইবে গণতন্ত্র মঞ্চ। 

আরও পড়ুন>> ৪ লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রস্তুত করা হচ্ছে ‘গণতন্ত্র মঞ্চে’র ভিত্তি
 
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে বিএনপি আমাদের সঙ্গে সংলাপ করেছে। তারা আমাদের অফিসে এসে সেই সংলাপ করেছে। এখন আমরা গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করতে যাচ্ছি। আগামীকাল বিএনপির অফিসে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি কী হবে তা নিয়ে আলোচনা হবে বৈঠকে। এছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলোও থাকবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলছেন, এক দলের পরিবর্তে আরেক দলকে ক্ষমতায় বসানো তাদের লক্ষ্য নয়। তাদের লক্ষ্য রাষ্ট্র ও প্রশাসনের মধ্যে যে গণতন্ত্র-বিরোধী উপদান ঢুকে গেছে তা অপসারন করে একটা গণতন্ত্রকামী কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠন করা। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার করে স্থায়ী রূপ দেওয়াসহ বেশকিছু পরিবর্তন আনার লক্ষ্য আছে তাদের। সেগুলোর একটি লিখিত কপি ইতোমধ্যে তারা বিএনপিকে দিয়েছেন। মঙ্গলবারের বৈঠকেও এগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন তারা।

আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা- এসব বিষয়ে আন্দোলনে রয়েছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। যা এখনও চূড়ান্ত পরিণতি পায়নি। এসব দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করতে আগ্রহী গণতন্ত্র মঞ্চ। সেই যুগপৎ আন্দোলন কবে নাগাদ মাঠে গড়াবে, সেটা নিয়ে বিএনপির পরিকল্পনা কী, তা মঙ্গলবারের বৈঠকে জানতে চাইবে মঞ্চ। 

এছাড়া আন্দোলন সফল হলে, পরবর্তীতে নির্বাচনকালীন যে অন্তরবর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে তার কাঠামো কী হবে, সেটার একটা খসড়া বিএনপি তৈরি করছে, সেটারও কপি চাইবে গণতন্ত্র মঞ্চ।

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদু রহমান মান্না ঢাকা পোস্টকে বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে আমরা চলমান আন্দোলন নিয়ে কথা বলব। তারপর বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, যে নির্বাচন কমিশন একটি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে, তার তো একটা কাঠামো থাকবে, সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করব।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণতন্ত্র মঞ্চের এক শরিক নেতা বলেন, বিএনপি নির্বাচনের পর ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলছে। কিন্তু সংবিধানের যে বির্তকিত ধারাগুলো আছে, সেগুলোর কী হবে তা নিয়ে কথা বলছে না। তারপর প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার বিষয়ে তাদের কী অবস্থান সেটাও এখনও পরিষ্কার নয়। কালকের বৈঠকে আমরা বিএনপির কাছে থেকে এসব বিষয়ে পরিষ্কার বক্তব্য চাইব। একইসঙ্গে আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপি তাদের সমাবেশে রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে কী ধরনের ওপেন প্রস্তাবনা হাজির করতে যাচ্ছে, সেটারও একটা লিখিত কপি আমরা চাইব। দেওয়া না দেওয়া তাদের বিষয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, যুগপৎ আন্দোলন কীভাবে হবে, এটা নিয়ে আলোচনা করব। বিষয়গুলো আমরা কালকের বৈঠকে নির্ধারণ করব।

এএইচআর/জেএস